ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে ১০৪ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় প্রত্যেক পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে মোট ১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে একটি স্বাধীন জাতীয় ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের সাক্ষরের পর ৯ পৃষ্টার এ রায় প্রকাশ করা হয়। ওই রায়ে আদালত আটটি নির্দেশনা দিয়েছেন।
সেগুলো হলো- ১. বিনামূল্যে সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার এবং এ অধিকার তার বেঁচে থাকার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত ঘোষণা।
২. সারা দেশে ওষুধে ভেজাল মিশ্রণ বন্ধে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(সি) অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিপক্ষদের নির্দেশ দেওয়া হলো।
৩. ১৯৯১ সালে ৭৬ জন এবং ২০০৯ সালে ২৮ জন শিশুর মৃত্যু ওষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষের কঠিন দায়।
৪. ১৯৯১ সালের ৭৬ জন এবং ২০০৯ সালের ২৮ জন শিশুর প্রত্যেক পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা হারে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলো। (ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ ওই ক্ষতিপূরণের টাকা সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তি, ওষুধ কোম্পানি থেকে আদায় করতে পারবেন।)
৫. একটি স্বাধীন জাতীয় ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হলো।
৬. দরখাস্তকারী কর্তৃক ২০২২ সালের ২ জুন তারিখে দাখিল করা সম্পূরক হলফনামায় বর্ণিত পরামর্শগুলো বিবেচনার জন্য প্রতিপক্ষদের নির্দেশ দেওয়া হলো।
৭. ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ গেজেটে অতিরিক্ত প্রকাশিত জাতীয় ঔষধ নীতি-২০১৬ দ্রুত বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হলো। ৮. যুক্তরাজ্যের আদলে আমাদের দেশের জনগণের চিকিৎসা সেবা অবকাঠামো তৈরির পরামর্শ দেওয়া হলো। আদালত তার এই রায়ের অনুলিপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে পাঠানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেন।
এর আগে, ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে ১০৪ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় পরিবার প্রতি ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়ে ২০২২ সালের ২ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘১৯৯১ সালে ভেজাল প্যারাসিটাল সিরাপ সেবন করে ৭৬ শিশু এবং ২০০৯ সালে রিড ফার্মার প্যারাসিটামাল সেবন করে ২৮ শিশু মৃত্যুবরণ করে।
এ ঘটনায় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ২০১০ সালে পরিবেশ ও মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে জনস্বার্থে প্রতীকার চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হয়। একই বছর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ওষুধ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে রুল দেওয়া হয়। বিচারপতি মো. ইমান আলী ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান (বর্তমান প্রধান বিচারপতি) রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় দেন হাইকোর্ট।’
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য