বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে জুডিশিয়ালকে স্মার্ট হতে হবে। দিনাজপুর বার বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বার, ঐতিহ্য ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত। দিনাজপুর বারের গৌরবময় ইতিহাস আছে। এ বার থেকে বিচার বিভাগের উজ্জ্বল নক্ষত্র বের হয়েছে। হয়েছে বিচারপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী।’
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানে মানুষের মৌলিক অধিকারে সেই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তাই রাষ্ট্রের সর্বস্তরের আইনে শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আইন পেশাকে জীবিকার মাধ্যম হিসেবে না নিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে কাজ করতে হবে। বিচার বিভাগের ভাব মর্যাদা নষ্ট হয় এমন কোনো কাজে জড়িত না থেকে অনুসরণের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতে হবে। বিচার প্রার্থীদের আমানত রক্ষা করা আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব। আইনি সেবার মাধ্যমে সচেতন নাগরিক হিসেবে তাদের কাছে রোল মডেল হোন। ’
তরুন আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সিনিয়রদের সান্নিধ্যে থেকে অথবা সিনিয়র আইনজীবী এবং জাজদের সমন্বয় ওয়ার্কশপের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে হবে। শুধু দক্ষতা অর্জন করলেই চলবে না, পেশাগত আচরণও সুন্দর করতে হবে। আইনের সংস্কারের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে প্রযুক্তি নির্ভর করে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ও দুর্নীতি দূর করতে হবে।’
গতকাল শুক্রবার দিনাজপুর আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম’র আগমন উপলক্ষে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এসব কথা বলেন। আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. তহিদুল হক সরকার জানান, বৃহত্তর জনবহুল জেলার দিনাজপুর আদালতে নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল একটি আছে। তা আরও বাড়ানো হবে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ৫টি শূন্যপদ পূরণ করা হবে।
তিনি আরও জানান, সংবর্ধিত বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্ডের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ঐতিহ্যবাহী বারের সদস্য ছিলেন- আমার মরহুম পিতা এম আব্দুর রহিম এবং আমি নিজেও এবারের সদস্য ছিলাম। এতে গৌরববোধ করি। ব্রেঞ্চ ও বারের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রেখে বিচার প্রার্থীদের সঠিক বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের নিজেদের মেধা ও মননকে নিবেদিত করার পাশাপাশি বারের সার্বিক উন্নয়নে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু সরকারের কাছে মুখাপেক্ষি না থেকে নিজেদেরকেই কিছু কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ন্যায়কুঞ্জ আদালত চত্বরে আসা বিচারপ্রার্থী ও স্বাক্ষীদের বিশ্রামের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিক এই ন্যায়কুঞ্জ। সকলের সুবিধার্থে এই ন্যায়কুঞ্জ’র উদ্বোধন করা হলো। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তৌহিদুল হকের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন- জেলা ও দায়রা জজ যাবিদ হাসান, প্রবীন আইনজীবী ইসাহাক ও সাবেক সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফসহ আরো অনেকে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে ক্রেস্ট প্রদান করেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি তহিদুল হক সরকার। সভা অনুষ্ঠানের পূর্বে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম ও জাতীয় সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিমের পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সংবিধান প্রণেতা স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত সাবেক সংসদ সদস্য এম আব্দুর রহিম ও রত্নগর্ভা নাজমা রহিমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কবর জিয়াত করেন। কবর জিয়ারত শেষে আদালত প্রাঙ্গনে বিচার প্রার্থীদের নির্মিত বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জের উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
এ সময় ন্যায়কুঞ্জ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, আপিল বিভাগের বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম, জেলা ও দায়রা জজ মো. যাবিদ হোসেন, স্পেশাল জজ মো. রেজাউল করিম সরকার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার (বিচার) এসকেএম তোফায়েল হাসান, দিনাজপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুলফিকার উল্লাহ, দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন, দিনাজপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. তহিদুল হক সরকার ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট (আ.ন.ম) হাবিবুল্লাহসহ প্রমুখ।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য