কনস্টেবল মনিরুল হত্যা মামলায় ঘাতক কাউসার সাত দিনের রিমান্ডে

বিশেষ প্রতিনিধি
কনস্টেবল মনিরুল হত্যা মামলায়
ঘাতক কাউসার সাত দিনের রিমান্ডে

রাজধানীর বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনের ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে ডিউটিরত কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় ঘাতক কনস্টেবল কাওসার আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামিকে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই মো. মান্নাফ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহাম্মদ সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

জানা যায়, মনিরুল হক শনিবার থেকে কনস্টেবল কাওসার আলীর সাথে গুলশান থানাধীন বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোনে ফিলিস্তিন দূতাবাসের পুলিশ বক্সে রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সশস্ত্র অবস্থায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের নিরাপত্তামূলক ডিউটিতে নিয়োজিত ছিল। ডিউটি করাকালে শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে কাওসার আলীর সঙ্গে ডিউটি করা নিয়ে মনিরুলের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে কাওছার আলী উত্তেজিত হয়ে মনিরুলকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি করতে থাকে। গুলিতে মনিরুল ফিলিস্তিন দূতাবাসের পুলিশ বক্সের সামনে উপুড় হয়ে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনায় ঘটনায় মনিরুলের ভাই কনস্টেবল মাহাবুবুল হক বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন।

জানা যায়, কাউসারের হাতে যে এসএমটি সাবমেশিনগান ছিল, সেটি ব্রাজিল থেকে আমদানি করা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিপ্লোমেটিক জোনে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ সদস্যদের হাতে ব্রাজিল থেকে আমদানি করা এসএমটি সাবমেশিনগান দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এ অস্ত্র দিয়ে মিনিটে ৬০০ রাউন্ড গুলি করা যায়। কাউসার এই অস্ত্র দিয়ে উন্মাদের মতো ৩৮ রাউন্ড গুলি ছুড়েছেন।

এ ঘটনায় জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেন আহত হয়েছেন। তিন রাউন্ড গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়। গুলি চালানোর সময় সড়কে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন মনির নামের এক পথচারী। তিনিও গুলিবিদ্ধ হন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত সাজ্জাদ পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি এই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় দেখেন এক পুলিশ সদস্য উপুড় হয়ে পড়ে আছেন। কনস্টেবল কাউসারের কাছে এর কারণ জানতে এগিয়ে গেলে কাউসার তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। তখন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন সাজ্জাদ।

এদিকে ঘটনার পর রাতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পুলিশ সদর দপ্তর ও ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

রাত ২টা ৩০ মিনিটে আইজিপি সংবাদিকদের বলেন, ‘কনস্টেবল কাউসার আহমেদ উন্মাদের মতো এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আমরা কিছু গুলির খোসা ও ২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছি। আক্রমণকারী পুলিশ সদস্যকে নিরস্ত্র করে গুলশান থানায় নেওয়া হয়েছে। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। মনিরুল ইসলামের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘ঘটনার কারণ জানতে আমরা কনস্টেবল কাউসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করব। প্রকৃত রহস্য জানাটা খুব কঠিন হবে না।’

কাউসারকে কীভাবে আটক করা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর কাউসার তার অস্ত্রটা রেখে ঘটনাস্থলের আশপাশে ঘোরাফেরা করছিল। তখন তাকে সেখান থেকেই আটক করা হয়।’

জানা যায়, নিহত কনস্টেবল মনিরুল ইসলামের বাড়ি নেত্রকোনা। তিনি ২০১৮ সালে পুলিশে যোগ দেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মনিরুলকে গুলি করে ফিলিস্তিনি দূতাবাসের প্রধান ফটকের সামনে এসে দাঁড়ান কাউসার। তখন প্রধান ফটকে দু-তিনজন নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। তারা গুলির শব্দ শুনতে পেলেও তখন ধারণা করতে পারেননি যে, কাউসার মনিরুলকে গুলি করে এসেছেন। তখন কাউসারকে ফিলিস্তিনি দূতাবাসের নিরাপত্তারক্ষীরা জিজ্ঞেস করেন মনিরুল কেন রাস্তায় পড়ে রয়েছেন। তখন কাউসার উত্তরে বলেন, ‘শালা নাটক করতাছে। এমনি রাস্তায় পড়ে আছে’।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফিলিস্তিন দূতাবাসের একজন নিরাপত্তারক্ষী বলেন, ‘ঘটনার সময় আমরা দূতাবাসের ভেতরে ছিলাম। হঠাৎ রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে ৭-৮ রাউন্ড গুলির শব্দ শুনে বাইরে আসি। বাইরে আসার পর কনস্টেবল কাউসারকে দেখি ফিলিস্তিনি দূতাবাসের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আর একটু দূরেই পড়ে রয়েছে কনস্টেবল মনিরুলের মরদেহ। তখন আমরা কাউসারকে জিজ্ঞেস করি কী হয়েছে। তখন সে বলে, ‘শালা (মনিরুল) নাটক করতাছে, এমনি মাটিতে পড়ে রয়েছে’। একথা বলে কাউসার দূতাবাসের বিপরীত পাশের রোডে চলে যায়। এরইমধ্যে সবাই বুঝতে পারেন কাউসার মনিরুলকে গুলি করেছে। এর পরপরই ঘটনাস্থলে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে আটক করে।’

এ ঘটনার জেরে কূটনীতিক এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুরো এলাকা নিরাপত্তাবেষ্টনীতে ছেয়ে ফেলেছে পুলিশ। এ মুহূর্তে যে কেউ প্রবেশ করতে গেলে তল্লাশি করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলের আশপাশে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, সোয়াতসহ থানা-পুলিশের একাধিক দল মোতায়েন রয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য