-->
শিরোনাম

বেক্সিমকো গ্রুপের সম্পদ ক্রোক প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
বেক্সিমকো গ্রুপের সম্পদ ক্রোক
প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের সকল সম্পদ ক্রোক (এটাচ) করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং ওই শিল্প গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করতে কেন তত্ত্বাবধায়ক (রিসিভার) নিয়োগ করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ রুল জারি করেন। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মাসুদ আর সোবহানের করা এক রিট আবেদনে এ আদেশ দেয়া হয়েছে। রিট আবেদনকারী নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেদওয়ান আহমেদ রানজীব ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।

এছাড়াও রুলে বেক্সিমকো গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য দিতে এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের নেয়া কী পরিমাণ ঋণ বকেয়া আছে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থসচিব, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমানকে চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ভারতীয় গণমাধ্যমে এর আগে দাবি করা হয়েছিল ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেশ ছেড়েছেন। কিন্তু গত ১৩ আগস্ট সালমান এফ রহমানকে রাজধানীর সদরঘাট থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে গত ১৬ জুলাই ঢাকা কলেজের সামনে সংঘর্ষে দুজন নিহত হন। তাঁদের একজন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সবুজ আলী (২৬), অন্যজন হকার মো. শাহজাহান (২৬)। এ ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব হত্যার ঘটনায় ইন্ধনদাতা হিসেবে সালমান এফ রহমানকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে তাকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর রাজধানীর গুলশানে সালমান এফ রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। বাড়িতে থাকা গাড়িগুলো পুড়িয়ে দেয়া হয়। সালমান এফ রহমান ২০১৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য হন। পরে তাঁকে নিজের বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজার কেলেংকারির অন্যতম হোতা তিনি। এই কেলেংকারির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হলেও সরকারি প্রভাব খাটিয়ে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান তিনি। তার বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি, লুটপাট, জালিয়াতি ও টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এর মধ্যে একটি ব্যাংক থেকেই নিয়েছেন ২২ হাজার কোটি টাকা। রপ্তানি করে দেশে টাকা না আনার অভিযোগও রয়েছে গ্রুপটির বিরুদ্ধে। গত ৩১ বছরে শেয়ারবাজারে এমন কোনো বড় কেলেঙ্কারি হয়নি যার সঙ্গে সালমান এফ রহমানের সম্পৃক্ততা নেই। তিনি গত ৩ বছরে দৃশ্যমানভাবেই বাজার থেকে ৬৬০০ কোটি টাকা নিয়েছেন। অদৃশ্যসহ ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সালমান। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সালমান এফ রহমান আইএফআইসি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেন। কয়েকদিন আগে তার নিয়ন্ত্রন মুক্ত করা হয়েছে ব্যাংকটি।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version