অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও দুদকের কাছে সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগের মামলায় নিম্ন আদালতের দেওয়া আট বছরের সাজা বাতিল করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার একক হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার এ রায় দিয়েছেন। নিম্ন আদালতের সাজার বিরুদ্ধে বাবরের করা আপিল মঞ্জুর করে এ রায় দেওয়া হয়। আদালতে বাবরের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
রায়ের পর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, লুৎফুজ্জামান বাবরের বিরুদ্ধে মোট ১৪টি মামলা বিচারাধীন। সবগুলো মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আশা করছি, সব মামলায় তিনি খালাস পাবেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ২৮ মে বাবরকে গ্রেপ্তার করা হয়। কারাবন্দি থাকাবস্থায় তার সম্পদের তথ্য চেয়ে তাকে নোটিশ দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই নোটিশ পেয়ে বাবর ২০০৮ সালের ২৩ জুলাই কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ছয় কোটি ৭৭ লাখ ৩১ হাজার ৩১২ টাকার সম্পদের হিসাব দাখিল করেন। এর মধ্যে নিজ নামে দুই কোটি ১০ লাখ ৫২ হাজার টাকার সম্পদ এবং স্ত্রীর নামে চার কোটি ৬৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকার সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। এতে আট লাখ টাকায় তার নেত্রকোণায় দোতলা বাড়ি নির্মাণের তথ্য দেওয়া হয়। কিন্তু দুদকের অভিযোগ, বাড়ি নির্মাণে ৩৪ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৮ টাকা খরচ করেছেন বাবর। সেই হিসাবে এই বাড়ি নির্মাণে ২৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৮ টাকার তথ্য তিনি দুদকের কাছে গোপন করেছেন। এ ছাড়া প্রাইম ব্যাংক গুলশান শাখায় তার অ্যাকাউন্টে সিঙ্গাপুর থেকে পাঠানো ১০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ছয় কোটি ৭৯ লাখ ৪৯ হাজার ২১৮ টাকার তথ্য পাওয়া যায়। এ বিষয়ে দুদকের অভিযোগ, ব্যাংকের এই অর্থের তথ্য গোপন করেছেন বাবর। সবমিলে অবৈধভাবে সাত কোটি পাঁচ লাখ ৯১ হাজার ৮৯৬ টাকার সম্পদ ও তার তথ্য গোপন করার অভিযোগে বাবরের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রমনা থানায় মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৬ জুলাই অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ওই বছরের ১২ আগস্ট বাবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করে আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর রায় দেন আদালত। রায়ে আট বছরের কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন বাবর।
উল্লেখ্য, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় বাবরের মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়েছে। লাইসেন্সবিহীন রিভলবার ও অবৈধভাবে ২৫ রাউন্ড গুলি রাখার দায়ে তার ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। এ ছাড়া সাব্বির হত্যা মামলা থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের সে সময়কার ভাইস চেয়ারম্যান সাফায়াত সোবাহানকে বাঁচাতে ২১ কোটি টাকা উৎকোচ গ্রহণ করার অভিযোগে পৃথক একটি মামলা রয়েছে বাবরের বিরুদ্ধে। আইনজীবীর তথ্যানুযায়ী, বাবরের বিরুদ্ধে মোট ১৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য