-->

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির ৪ মামলা বাতিল

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির ৪ মামলা বাতিল

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০০৭ সালে করা চারটি মামলা বাতিল করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার এ রায় দেন। ওইসব মামলা বাতিল প্রশ্নে ২০০৮ সালে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল মামলাগুলো বাতিল করে এই রায় দেওয়া হয়। আদালতে তারেক রহমানের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন ভূঁইয়া ব্যারিস্টার এইচ এম সানজীদ সিদ্দিকী ও মাকসুদ উল্লাহ।

২০০৪ ও ২০০৫ সালে চাঁদাবাজি করা হয়েছেÑ এমন অভিযোগে ওয়ান ইলেভেনের সময় ২০০৭ সালে বিভিন্ন ব্যক্তি বাদী হয়ে গুলশান ও ধানমন্ডি থানায় এসব মামলা করেন। এর মধ্যে গুলশান থানায় তিনটি এবং ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করা হয়। এসব মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে পৃথক আবেদন করেছিলেন তারেক রহমান। ২০০৭ সালের ৮ মার্চ গুলশান থানায় প্রথম মামলাটি করেন আজম আহমেদ। এক কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে এই মামলা করা হয়। একই বছরের ২৭ মার্চ রেজা কনস্ট্রাকশনের এমডি আফতাব উদ্দিন এক কোটি ৩২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে গুলশান থানায় দ্বিতীয় মামলা করেন। ২০০৭ সালের ১ এপ্রিল ৫৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে ধানমন্ডি থানায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন মীর জহির হোসেন। একই বছরের ৪ মে প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর এসি এল আরসির লভ্যাংশ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আজম আহমেদ গুলশান থানায় মামলা করেন।

এই চাঁদাবাজির মামলায় তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, রিমান্ডে নিয়ে তারেক রহমানের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। এতে তার মেরুদণ্ড আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে উঠলে ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে কারা মুক্ত হন তারেক রহমান। এর কয়েকদিন পর আদালতের আদেশ নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিদেশে যান। এরপর আর তারেক রহমান দেশে ফেরেননি।

গতকাল হাইকোর্টের রায়ের পর ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, মামলার এজাহারে তারেক রহমানের নামই নেই। অথচ এসব মামলায় বার বার তাকে রিমান্ডে নিয়েছে, টর্চার করেছে। অমানবিক নির্যাতন করেছে। ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে তারেক রহমানের আবেদনে মামলাগুলো স্থগিত করে রুল জারি করেন। শুনানি শেষে আদালত এসব রুল মঞ্জুর করেছেন। অর্থাৎ, এ চারটি মামলার কার্যক্রম বাতিল করেছেন।

২০০৭-০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলেই তারেকের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলার সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৮০টি মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় সকল গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল, যা গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রত্যাহার করা হয়।

আওয়ামী লীগ আমলে চারটি মামলায় সাজা হয় তারেক রহমানের। এর মধ্যে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে তার বিদেশে পাচারের অভিযোগের মামলায় সাত বছর কারাদণ্ড, জিয়া এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় ১০ বছর কারাদণ্ড এবং অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগের মামলায় ৯ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। এই সবগুলো মামলায় তারেক রহমানকে পলাতক দেখিয়ে সাজা দেওয়া হয়। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রথম মামলার রায় হয় ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর। ঘুষ হিসেবে ২০ কোটি টাকা নিয়ে তা বিদেশে পাচারের নেওয়ার অভিযোগের এই মামলায় তারেক রহমানকে খালাস দিয়ে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর সে সময়কার বিচারক মো. মোতাহার হোসেন রায় দেন। যদিও ওই রায়ে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে সাত বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে হাইকোর্ট ২০১৬ সালে দেওয়া রায়ে তারেক রহমানকে সাত বছর কারাদণ্ড এবং ২০ কোটি টাকা জরিমানা করে। এরপর জিয়া এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয় নিম্ন আদালত। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ারও সাজা হয়েছিল। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ২০২৩ সালে আদালত তারেককে ৯ বছরের কারাদণ্ডের রায় দেয়। তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানেরও ৩ বছরের সাজা হয় এই মামলায়। তারেকের সর্বোচ্চ সাজার রায়টি হয় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে এই মামলা হয়। এই মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার নিম্ন আদালত এক রায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version