চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে শ্রমিকদের উত্থাপিত ১৮ দফা দাবি মেটাতে ও আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান জানান, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর জেনেভায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) পরিচালনা পর্ষদের ৩৫২তম অধিবেশনে বাংলাদেশ এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। খবর ডেইলি স্টারের।
এএইচএম শফিকুজ্জামান জেনেভা থেকে টেলিফোনে বলেন, শিল্প খাতে শ্রমিক অসন্তোষের সময় সেপ্টেম্বরে আমরা শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি মানার কথা জানিয়েছিলাম, তা পূরণের জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। তিনি আরও বলেন, শ্রম আইন সংশোধন ও বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট এই দুটি বাদে প্রায় ১৮টি দাবি ইতোমধ্যে পূরণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন নেতারা বছরে পাঁচ শতাংশের বেশি ইনক্রিমেন্টের দাবি করেছেন। একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি বর্তমানে ট্রেড ইউনিয়ন বিধি ও ডকুমেন্টেশনের প্রয়োজনীয়তা সহজ করাসহ আইনের সম্ভাব্য সংশোধনী নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
আইএলও পরিচালনা পর্ষদ মূলত আইএলওর নির্বাহী সংস্থা। তারা বছরে তিনবার অধিবেশনে বসে, যথাক্রমে মার্চ, জুন ও নভেম্বরে। সেখানে আইএলওর নীতিমালা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনের এজেন্ডা নির্ধারণ করে, সম্মেলনে উপস্থাপনের জন্য খসড়া কর্মসূচি ও বাজেট গ্রহণ এবং মহাপরিচালক নির্বাচন করে।
জেনেভাতে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আইএলও গভর্নিং বডির বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বায়োমেট্রিক হাজিরার ভিত্তিতে শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্তকরণ পর্যালোচনা এবং কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের লাঞ্ছনা ও হয়রানি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এছাড়া আইন উপদেষ্টা গভর্নিং বডির সদস্যদের আশ্বস্ত করে বলেন, গত বছর মুজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে করা পুলিশি মামলা নিষ্পত্তিতে সরকার কাজ করছে। ন্যূনতম মজুরি বোর্ড শ্রম আইন সংশোধন ও এর বিধান আপডেট করার জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। প্রস্তাবে কারখানায় মজুরি কাঠামোর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে শ্রম আইন সংশোধন করার পরামর্শ দিয়েছে মজুরি বোর্ড।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পর্ষদের এক কর্মকর্তা বলেন, কারখানা মালিকরা সময়মতো মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন ও শ্রমিকদের বেতন দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রায়ই শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। শ্রম আইন সংশোধন বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত বিষয়। গত ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি কয়েকটি মূল ধারায় আরও সংশোধনীর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে স্বাক্ষর না করে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল-২০২৩’ ফেরত পাঠান।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), আইএলও, বিদেশি ব্যবসায়ী ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান, উত্তর আমেরিকার পোশাক ব্যবসায়ী এবং মার্কিন সরকার বাংলাদেশকে শ্রম আইন সংশোধন, ট্রেড ইউনিয়ন আইন সহজ করা, ইউনিয়ন নিবন্ধন সহজ করাসহ ইউনিয়ন গঠনে প্রয়োজনীয় শ্রমিক সীমা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। বর্তমানে একটি পোশাক কারখানায় ইউনিয়ন গঠনের জন্য ২০ শতাংশ শ্রমিকের ঐকমত্য ও স্বাক্ষর প্রয়োজন। ইউনিয়ন নেতারা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই সীমা পাঁচ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার পক্ষে। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) ও ইপিজেডের বাইরের শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য একটি অভিন্ন শ্রম আইন প্রণয়নে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য