-->

১৫তম সংশোধনী বাতিলের পরামর্শ

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
১৫তম সংশোধনী বাতিলের পরামর্শ

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। একই সঙ্গে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কড়া সমালোচনা করেছেন তারা। তারা বলেছেন, সংবিধানে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল ও দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ চালু করতে হবে। এছাড়া সংবিধান সংস্কার কমিশন কিভাবে সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা। গতকাল রোববার সংসদ সচিবালয়ের ক্যাবিনেট কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশনের বৈঠকে এসব পরামর্শ উঠে আসে।

কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী, শহীদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম, এফবিসিসিআই প্রতিনিধি নাসরিন বেগম, চৌধুরী মূকিম উদ্দিন কেজে আলী, জামিল উদ্দিন মিল্টন, ইঞ্জিনিয়ার কবির হোসেন ও ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিন। সংস্কার কমিশনের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের ও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিকী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী, ফিরোজ আহমেদ, মো. মুস্তাইন বিল্লাহ।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোয় প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা এককভাবে প্রধানমন্ত্রীর উপর ন্যস্ত। প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে; যা গত ১৫ বছর আমরা লক্ষ্য করেছি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট খুব জরুরি। কারণ দ্বি-কক্ষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটিতে ‘একক ক্ষমতার বলয়’ বা ‘এক ব্যক্তির শাসন’ চলে না। রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী চাইলেই আইন প্রণয়ন ও বাতিল করতে পারে না। ৭০ অনুচ্ছেদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই অনুচ্ছেদের এক জায়গায় বলা আছে সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দান করলে তাদের আসন শূন্য হবে। ফলে কোনো সংসদ সদস্য চাইলেও তার দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া সম্ভব নয়। তার মানে হলো সরকারি দল যা চাইবে সংসদে তা-ই হবে! তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদগুলো মুছে দিয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনীর সমালোচনা করে বলেন, এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের বুকে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে মানুষের মৌলিক অধিকার। দেশে আইনের শাসনের কবর রচনা করা হয়েছে। দেশের বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করার একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সংশোধনীর উদ্দেশ্য একব্যক্তির নেতৃত্বের অধীনে ফ্যাসিজমকে দীর্ঘায়িত করা। তাই এই সংশোধনী বাতিল চাই।

৭ ক ও খ অনুচ্ছেদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে হত্যা, সংকুচিত ও নির্বাসিত করার জন্য এই ৭ ক ও খ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একনায়কত্ব চালিয়ে নিতে এবং মানুষের মধ্যে ভয়ের সংস্কৃতি ও কণ্ঠরোধ করতে এই বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে আঘাত করে। গণভোট বিষয়ে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোটের বিধানটি বাতিল করে মৌলিক বিষয়ে জনগণের মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জনগণের সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান বিলোপ করে কণ্ঠ রোধ করা হয়েছে। গণভোটের বিধান পুনর্বহালের পক্ষে মত দেন তিনি।

কাদের গণি চৌধুরী সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন, পরপর দুই মেয়াদের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে না পারা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, বর্তমান “প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ সংশোধনের প্রস্তাব আনেন।

সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম বলেন, দেশের ৯০ ভাগ মুসলমান। আগে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কথা ছিল। এটা যেভাবে আগে ছিল, সেভাবে চাইছি। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন কিভাবে আমাদের সুপারিশ বা পরামর্শ বাস্তবায়ন করবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি। গণভোট, নির্বাচন কমিশন সংস্কারসহ অনেক কিছু রয়েছে যা বাস্তবায়ন করা কঠিন। কমিশন আমার এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি। তারা কেবল নোট হিসেবে নিয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version