বহুল আলোচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় (ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল) আজ রোববার (১ ডিসেম্বর, ২০২৪) হাইকোর্টে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য রয়েছে। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করবেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর এই রায় দেওয়া হবে। গতকাল শনিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ওই হাইকোর্ট বেঞ্চের রোববারের কার্যতালিকায় রায়ের জন্য মামলা দুটি (ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিল) ৫৪ ও ৫৫ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।
এই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ আপিল না করলেও আজকের রায়ের মধ্য দিয়ে তারেক রহমানের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল থাকবে কিনা তা সেটা জানা যাবে। একইসঙ্গে এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর বিষয়েও সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় ২০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তারেক রহমানের।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, এই মামলায় অবৈধ ও বেআইনিভাবে দ্বিতীয়দফা অভিযোগপত্র দিয়ে তাদের আসামি করা হয় এবং তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের ফরমায়েশী রায়ের মাধ্যমে তাদের সাজা দেওয়া হয়। এ কারণে দ্বিতীয়দফা অভিযোগপত্রের মাধ্যমে অভিযুক্ত আসামিরা খালাস পাওয়ার আইনত অধিকারী।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেছেন, এই মামলার দ্বিতীয় অভিযোগপত্রে তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। কার্যত একজন আসামির (মুফতি আব্দুল হান্নান) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর ভিত্তিতে তাদের আসামি করা হয়েছে। আইনগতভাবে সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া অভিযোগপত্র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু এ মামলায় দ্বিতীয়দফা যে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় তা সরাসরি জজ কোর্টে দাখিল করা হয়। সে জন্য এই অভিযোগপত্র ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী গৃহীত হতে পারে না। উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশের সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের নজির আছে যে, যদি দেখা যায় পুরো মামলায় অভিযোগ কোনো আসামির বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়নি ও যথাযথভাবে তদন্ত হয়নি, সে ক্ষেত্রে সব আসামি খালাস পেলে যারা আপিল করেননি, ওই রায়ের সুবিধা তারাও পেতে পারেন। তারেক রহমান ও কায়কোবাদসহ কয়েকজন আপিল করতে পারেননি। সে ক্ষেত্রে তারেক রহমান ও কায়কোবাদসহ তাদের নির্দোষ সাব্যস্ত করা যেতে পারে।
অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামিকে পরীক্ষা করা হয়। কোনো আসামি যদি আগে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে থাকেন এবং তার ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ আনা হয় তবে ৩৪২ ধারায় তাকে পরীক্ষা করার সময় অভিযোগগুলোর বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন কওে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এই সুযোগ যদি আসামি না পায় তবে আগে দেওয়া ১৬৪ ধারার ভিত্তিতে ওই আসামি বা অফর কোনো আসামিকে সাজা দেওয়া বেআইনি হবে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মুফতি হান্নানের ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে তাকে ও অনেক আসামিকে অভিযুক্ত করা হয়। যদিও পরে মুফতি হান্নান আদালতে ওই জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন দিয়ে বলেন, তাকে অত্যাচার করে জবানবন্দিতে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। এমনকি ৩৪২ ধারায় তাদের আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেওয়া বা পরীক্ষা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। কারণ এর আগেই অন্য মামলায় তাকে ফাঁসি দিয়ে তা কার্যকর করা হয়েছে। ফলে ওই ভিত্তিতে তাকে ও তারেক রহমানসহ অনেক আসামিকে সাজা দেওয়া বেআইনি হয়েছে। একারণেই দ্বিতীয়দফা অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে সাজা দেওয়া বেআইনি।
লুৎফুজ্জামান বাবরসহ তিন আসামির আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির ভোরের আকাশকে বলেন, এই মামলায় প্রথমদফা অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে মামলার বিচার শুরু হয়। দায়রা জজ আদালতে ৬৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যও গ্রহণ করা হয়। এরপর একজন আসামিকে নির্যাতন চালিয়ে তার কাছ থেকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়। ওই আসামি পরে তা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে বলেন, তাকে অত্যাচার করে অন্যের লিখিত জবাবনবন্দিতে তার স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। এমনকি আইন অনুযায়ী অভিযোগপত্র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল করার নিয়ম থাকলেও এই মামলায় সরাসরি দায়রা জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় এবং ওই অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে বেআইনিভাবে তারেক রহমান, বাবরসহ ৩০ জন আসামিকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এই আইনজীবী বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশের ৪শ বছরের ইাতহাসে এমন একটি মামলাও পাওয়া যাবে না যেখানে একবার মামলার বিচার শুরু হয়ে যাবার পর সরাসরি দায়রা জজ আদালতে দ্বিতীয়দফা অভিযোগপত্র দাখিলের মাধ্যমে তার ওপর ভিত্তি করে কোনো আসামিকে সাজা দেওয়া হয়েছে বা বিচার করা হয়েছে। এ কারণেই তারেক রহমান বা ববরসহ আসামিরা খালাস পাবার অধিকারী। তিনি বলেন, তারেক রহমান আপিল না করলেও আইনের ত্রুটির কারণেই এর সুবিধা পাবেন অপরাপর আসামিরা।
ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৩৪২ ধারায় বলা হয়েছে, (১) ‘আসামিকে তাহার বিরুদ্ধে প্রদত্ত সাক্ষ্যে উত্থাপিত কোনো অবস্থা বিশ্লেষণ করিতে সমর্থ করিবার উদ্দেশ্যে আদালত অনুসন্ধান বা বিচারের যে কোনো পর্যায়ে, আসামিকে পূর্বাহ্নে সতর্ক করিয়া না দিয়া প্রয়োজনীয় বলিয়া বিবেচিত যে কোনো প্রশ্ন তাহাকে জিজ্ঞাসা করিতে পারিবেন এবং উপরিউক্ত উদ্দেশ্যে বাদীপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণের পর এবং তাহাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের আহ্বান জানাইবার পূর্বে তাহার নিকট মামলা সম্পর্কে সাধারণভাবে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবেন।’ (২) ‘এইরূপ কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকার করিলে বা মিথ্যা জবাব দিলে আসামি দণ্ডিত হইবে না, তবে আদালতের এইরূপ অস্বীকৃতি বা জবাব হইতে যেইরূপ ন্যায়সংগত মনে করেন, সেইরূপ অনুমান করিতে পারিবেন।’ (৩) ‘আসামি কর্তৃক প্রদত্ত জবাব এইরূপ অনুসন্ধান বা বিচারে বিবেচনা করা যাইতে পারে এবং উক্ত জবাবে সে অন্য কোনো অপরাধ করিয়াছে বলিয়া আভাস পাওয়া গেলে উক্ত অপরাধের অনুসন্ধান বা বিচারে উক্ত জবাব তাহার পক্ষে বা বিপক্ষে সাক্ষ্য হিসাবে পেশ করা যাইতে পারে।’ (৪) ‘আসামিকে কোনো প্রকার শপথ করানো যাইবে না।’
এই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা অনুমোদনের জন্য ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী কোনো ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। এটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের জেল আপিল, নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। ডেথ রেফারেন্স এবং এসব আপিল ও আবেদনের ওপর সাধারণত একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিপক্ষে আপিল করার পর পেপারবুক তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট নথি সরকারি ছাপাখানায় (বিজি প্রেস) পাঠানো হয়। সেখানে পেপারবুক তৈরির পর ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্টে পাঠানো হয়। দুটি মামলায় প্রায় ২২ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক হাতে পাওয়ার পর মামলাটি (ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল) হাইকোর্টে শুনানির জন্য প্রস্তুত করার কাজ শুরু করে সংশ্লিষ্ট শাখা। জানা গেছে, পেপারবুক তৈরি, পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীও নিয়োগ শেষে বেশ কয়েকবছর এই মামলা শুনানির জন্য অপেক্ষায় ছিল। বেশ কয়েকবছর এমন অবস্থায় থাকার পর সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন। এরপর গত ৩১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়ে ২১ নভেম্বর শুনানি সম্পন্ন হয়। সেদিন আদালত মামলা দুটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় রায়ের জন্য মামলা দুটি আদালতের কার্যতালিকায় উঠল।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হয়। আর তখনকার বিরোদীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ অনেকে আহত হন। এ ঘটনার পর হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠিত হয়। এই হামলার ঘটনায় ওই কমিশন প্রতিবেশী একটি দেশের গোয়েন্দা সদস্যদের জড়িত থাকার তথ্য তুলে ধরেন। এ কারণে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে এই মামলায় জজ মিয়া নামক এক আসামির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি নিয়ে পরে ব্যাপক সমালোচনা হয়। বিএনপি সরকারের বিদায়ের পর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ‘জজ মিয়া নাটক’ নামে ব্যাপক সমালোচনা হয়। পরে ওই জজ মিয়া অভিযোগ করেন তার ওপর অত্যাচার চালিয়ে পুলিশ জবানবন্দি আদায় করেছে। এ কারণে আওয়ামী লীগ সরকার ওই জজ মিয়াকে ব্যাপকভাবে আর্থিক সহায়তা দেয়।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ-সংক্রান্ত মামলা দুটির (হত্যা ও বিস্ফোরক) নতুনভাবে তদন্ত শুরু করে। ২০০৮ সালে ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ওই হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অধিকতর তদন্ত হয়। আওয়ামী লীগ সরকার মুফতি আব্দুল হান্নানের ওপর নির্যাতন চালিয়ে তার কাছ থেকে কথিত জবানবন্দি আদায় করে তার ভিত্তিতে তারেক রহমান, বাবরসহ ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়। এরপর বিচার শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় দেয় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর (খালেদা জিয়া) রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (বর্তমানে প্রয়াত) ও সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় ১৯ জনকে ফাঁসি এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই ৩৮ জনকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের অন্য ধারায় ২০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুটি মামলায় তাদের অভিন্ন সাজা দেওয়া হলেও তা একযোগে কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। এরপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা অনুমোদনের জন্য ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। এরপর কারাবন্দী আসামিরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। এ অবস্থায় বিজি প্রেসে পেপারবুক প্রস্তুত করার পর তা সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য