-->

২০২২ এ আলোচনায় থাকবে যেসব ফ্যাশন

ইসমত জেরিন স্মিতা
২০২২ এ আলোচনায় থাকবে যেসব ফ্যাশন
ট্রেন্ডে জায়গা করে নিয়েছে রিসাইকেল আর আপসাইকেল করা পোশাক

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনে ওঠে এসেছে ২০২২ সালের ফ্যাশন ট্রেন্ড। আন্তর্জাতিক প্রভাব আর দেশীয় নিজস্ব সংস্কৃতির ছোঁয়ায় মনে হচ্ছে নতুন বছরে ফ্যাশনে এই দুইয়ের সহাবস্থান থাকবে। সেসব আয়োজনে সুরক্ষার পাশাপাশি বছরের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্যাশন অনুষঙ্গও ছিল মাস্ক। অস্কার, কান চলচ্চিত্র উৎসব, মেট গালা, প্যারিস ফ্যাশন উইক, লন্ডন ফ্যাশন উইক থেকে শুরু করে পাশের দেশ ভারতের ল্যাকমে ফ্যাশন উইক- এসবই ঠিক করে দিয়েছে নতুন বছরের ফ্যাশনের এসব ট্রেন্ড।

অনুষ্ঠানে দেখা যায়, মাস্কে এসেছে নানা ধরনের ডিজাইন। এমনকি চুমকি-পুঁতি দিয়েও তৈরি হয়েছে মাস্ক। ২০২১-এর মতো ২০২২ সালেও ফ্যাশনেবল মাস্ক থাকবে ট্রেন্ডে। নতুন বছরে ট্রেন্ডে থাকবে ঢিলেঢালা ফ্যাশন। ২০২১-এ ওভারসাইজড কার্ডিগান আর শোল্ডার প্যাড বয়ফ্রেন্ড জ্যাকেট দিয়ে শুরু হয়েছিল ওভারসাইজের প্রতি আগ্রহ। সেই ধারা এখন জিন্স, টপস, শার্ট, টি-শার্ট, ক্রপ টপ, মিদি ড্রেস- সবখানেই ঢুকে পড়েছে। কেননা মানুষ এখন স্বস্তিদায়ক পোশাকে ফ্যাশন করতে আগ্রহী। প্রিন্টে ফুলেল নকশা আর অ্যানিমেল প্রিন্ট দুটিই আছে ট্রেন্ডে। উৎসবে আবারও ফিরেছে সত্তর বা আশির দশকের চুমকি। বিষন্নতা ঝেড়ে ফেলে তরুণেরা এখন পার্টির মেজাজে আছেন। আর সেখানে দাপটের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে চুমকি। বাংলাদেশ আর ভারতের তারকাদের চলে যাওয়া বছরে চুমকির কাজ করা পোশাক আর অনুষঙ্গের প্রতি আগ্রহী হতে দেখা গেছে।

নারীদের শীতের পোশাকের ট্রেন্ডে আছে বয়ফ্রেন্ড জ্যাকেট। লং কোটও কম যায় না। আশির দশকের এই দুই ফ্যাশন আবার ফিরে এসেছে। ডেনিমের জ্যাকেট বরাবরের মতোই আছে নিজের জায়গায়। দেশের মানুষও এসবের সঙ্গে লুককে পূর্ণতা দিতে হাত বাড়াচ্ছে স্ট্রেট কাট ট্রাউজার ও লেদার শর্ট স্কার্টের দিকে। বটমের ক্ষেত্রে পছন্দের শীর্ষ তিনের একটিতে আছে লুজ ফিট ডেনিম। মম জিন্স, বয়ফ্রেন্ড জিন্স, ফ্লারেস, বুট কাট ও স্ট্রেট লেগ কাট দেখা গেছে। বাংলাদেশের ফ্যাশনে স্থান করে নিয়েছে লোকশিল্প থেকে অনুপ্রাণিত বাণী, চিত্র বা ছাপ। এই যেমন ডেনিমের জ্যাকেটের একটা পাশে চলছে কাঁথাফোঁড়। চাদরজুড়ে স্থান পাচ্ছেন জীবনানন্দ দাশ ও তার সৃষ্টি। বুটের জুতাও আছে ট্রেন্ডে। কমেছে হাই হিলের একক আধিপত্য। প্ল্যাটফর্ম হিল, লোফার, স্নিকার, ফ্ল্যাট, লেস আপ বুটস- সবই পরা হবে এ বছর। মাঝারি থেকে ভারী বুননের ফ্যাব্রিকে তৈরি কোটের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। একরঙা কোটের চেয়ে নানা রকম ছাপা কোটের চাহিদা বাড়ছে। পুরুষের শার্ট, এমনকি ফরমালেও চলছে ফুলেল। আর সব পোশাকে দেখা গেছে বোতামের বৈচিত্র্য; সেটা এ বছরও থাকবে।

পুঁতি, গাছের বীজ, কা-, পিতল, নানা ধরনের মেটালের ওপর আঁকা নকশা, কাঠ- এসব চলেছে স্টাইল ডিভাদের পোশাকে। কাফতান বেশ কয়েক বছর আলোচনায় ছিল। আর ম্যাক্সি তো একটু বয়সী নারীরা পরতেন। এই দুই পোশাক এবার ঘর থেকে বের হয়েছে বাইরে। হাজির হয়েছে লালগালিচায়ও। এ বছর যদি কাউকে কাফতান আর ম্যাক্সি ড্রেসে পার্টি বা কোনো দাওয়াতে দেখেন, অবাক হবেন না। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের হট ফ্যাশন ট্রেন্ড স্কার্ফ ফিরে এসেছে প্রবল প্রতাপে। রেশমের স্কার্ফের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে মানুষ। প্রিন্ট প্যাটার্নে ব্লক লেটার, ফুল ও হিজিবিজি মোটিফের চাহিদাও ছিল উল্লেখযোগ্য। বোল্ড রঙ, যেমন টকটকে লাল স্কার্ফের প্রতিও আগ্রহী ছিলেন ফ্যাশন-সচেতনেরা।

স্টাইলিংয়ের ক্ষেত্রে থুঁতনির নিচে অথবা মাথার পেছনে স্কার্ফ দিয়ে নটবাঁধা ফ্যাশনেবল নারীদের রাস্তাঘাটে চোখে পড়েছে হরহামেশাই। স্কার্ফ গলায় জড়িয়ে নিতেও দেখা গেছে অনেককে। এমনকি ব্যাগের হাতলেও স্কার্ফের দেখা মিলেছে। এখন ট্রেন্ডের চেয়ে ব্যক্তিগত রুচি, পছন্দ আর স্বাচ্ছন্দ্যের পোশাকও পরছেন ফ্যাশনপ্রেমীরা। নিজস্ব ফ্যাশন দিয়ে অন্য সবার থেকে আলাদা করে চেনানোর জন্য ঝুঁকিও নিচ্ছেন তারা। কফি ডেটে বা অনলাইন থেকে অফলাইনের প্রথম দেখায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে হাজির হচ্ছেন ক্যাজুয়ালে।

‘নিউ নরমালে’ সব ভুলে নিজের প্রিয় পোশাকে সাজার এই প্রবণতাকে ডাকা হচ্ছে ‘রিভেঞ্জ ড্রেসিং’ নামে। ফাস্ট ফ্যাশনের দৌরাত্ম্য কমেছে। পরিবেশবান্ধব টেকসই ফ্যাশনের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে মানুষ। তাই ট্রেন্ডে জায়গা করে নিচ্ছে রিসাইকেল (পুনর্ব্যবহার) আর আপসাইকেল (নতুন করে ব্যবহার) করা পোশাক। বিশ্বের বহু নামকরা ফ্যাশন হাউস লিখিতভাবে একমত হয়েছে যে, তারা টেকসই ফ্যাশনকে জনপ্রিয় করতে বদ্ধপরিকর। অবশ্য এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন ফ্যাশন প্রভাবকরা। একবাক্যে বলতে গেলে, টেকসই ফ্যাশনই আগামীর ফ্যাশন।

মন্তব্য

Beta version