-->

বয়ঃসন্ধির বিশেষ ক্ষণে

ইসমত জেরিন স্মিতা
বয়ঃসন্ধির বিশেষ ক্ষণে
প্রতীকী ছবি

আমরা সবাই জানি, একটা শিশুর জীবনে বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হয় কৈশোর পর্বের মধ্য দিয়ে। এই সময়ে একজন শিশুর শরীরের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটতে দেখা যায়। ফলে এই অধ্যায়টি মানুষের জীবনে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। সময় ও গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের শরীরে বয়ঃসন্ধিকালীন নির্দিষ্ট পরিবর্তনগুলো ঘটে থাকে।

বয়ঃসন্ধির পূর্বশর্ত হিসেবে পুষ্টি, জিনের গঠন এবং সামাজিক উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এই পূর্বশর্তগুলোই একজন অভিভাবককে তার সন্তানের বয়ঃসন্ধিজনিত পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।

এই স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর পরিবর্তনগুলোই একটা বাচ্চাকে শৈশবাবস্থা কাটিয়ে কৈশোর অর্থাৎ বয়ঃসন্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশক হিসেবে কাজ করে।

এক্ষেত্রে আরো একটা বিষয় মনে রাখা জরুরি, প্রতিটি বাচ্চার জীবনে বয়ঃসন্ধির প্রভাব সময়বিশেষে আলাদা আলাদা হয় এবং বয়ঃসন্ধিগত পরিবর্তন একটা বাচ্চার জীবনে ৯ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে যেকোনো সময়ে ঘটতে পারে।

সব ছেলেমেয়েরই এ সময়ে একটা সমস্যা দেখা দেয়, আর তা হলো আইডেনটিটি ক্রাইসিস। এ সময়ে ছেলেমেয়েদের মধ্যে স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য এক ধরনের আকাঙ্ক্ষা জন্মায়। তাই কিছু কিছু কাজ ওদের একা একা করতে দিন। ওদের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করুন।

বয়ঃসন্ধিকাল খুবই স্পর্শকাতর একটা সময়। শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পদার্পণের এই সময় বেশ অন্যরকমও বটে। এই সময় শরীর এবং মনে আসে নানা রকমের পরিবর্তন। মূলত বেশিরভাগ মানসিক পরিবর্তনই আসে অজানা-অচেনা শারীরিক পরিবর্তনের হাত ধরে।

যেমন শান্তশিষ্ট মেয়েটি হয়তো হয়ে গেল প্রচণ্ড খামখেয়ালি, কথায় কথায় রেগে যেতে থাকল। আবার যে ছেলেটি ছিল ভীষণ চঞ্চল সে হয়তো নিজের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে ফেলে। নিজের রাগ-অভিমান-আবেগ সব নিজের ভেতরেই রাখে। আমরা প্রত্যেকেই কিছু না কিছু বয়ঃসন্ধিকালিন সমস্যার মধ্য দিয়ে গিয়েছি।

যে ধরনের পরিবর্তন কৈশোরের শুরুতে এবং কৈশোরকালীন অবস্থায় ঘটে সেগুলো হলো-

* ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে এই সময়ে ভিন্ন ধরনের শারীরিক বিকাশ ঘটে

* যৌনাঙ্গের বিকাশ হয়

* অনুভূতিগত এবং সামাজিক পরিবর্তন

* আচার আচরণে পরিবর্তন ঘটে

 

এ সময় কী করবেন

 

ছেলেমেয়েদের মধ্যে বয়ঃসন্ধিকালীন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলো খুবই স্বাভাবিক। এগুলো খারাপ লাগলেও ধৈর্য ধরে ওদের কথা শুনুন। অযথা চাপ সৃষ্টি করবেন না বা রেগে গিয়ে বকাঝকা অথবা খারাপ আচরণ করবেন না।

* এ সময় সবার আগে প্রয়োজন ছেলেমেয়েদের মানসিক অবস্থা বুঝে ওঠা। ওদের সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করুন। নিজের বয়ঃসন্ধির সময়কার কথা মনে করুন। ওদের সমস্যা ও মানসিক অবস্থা বুঝে উঠতে সুবিধা হবে।

* অনেক সময় মনোযোগ পেলে ছেলেমেয়েদের সমস্যা অনেকখানি সমাধান হয়ে যায়। তবে অতিরিক্ত মনোযোগ ছেলে বা মেয়ের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিন।

* এ সময়ে ছেলেমেয়েদের মধ্যে স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য এক ধরনের আকাক্সক্ষা জন্মায়। তাই কিছু কিছু কাজ ওদের একা একা করতে দিন। এ সময়ে বাইরের জগতের সঙ্গে যত বেশি আদান-প্রদান হয় তারা তত তাড়াতাড়ি স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ছুট দেবেন না।

* আপনার সন্তানের মধ্যে যদি কোনো সম্ভাবনা বা সুপ্ত প্রতিভা থাকে, তাহলে তাকে জাগিয়ে তুলতে এটাই উপযুক্ত সময়। তাকে উৎসাহ দিন ও সহায়তা করুন। তবে নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেবেন না। অতিরিক্ত চাপ ওদের মধ্যে বিষণ্নতার সৃষ্টি করতে পারে।

* কোনো কাজে অসফল হলে এ সময়ে ছেলেমেয়েরা খুব ভেঙে পড়ে, হতাশ হয়ে যায়। তাদের পাশে থাকুন। সন্তানকে সাফল্য ও ব্যর্থতা দুটিই মেনে নিতে শেখানো এ সময়ের জরুরি।

* অনেক ছেলেমেয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি নানা সৃজনশীল কাজে দক্ষ থাকে। বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা কাটানোর জন্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড অনেক সহায়তা করে। এসব ব্যাপারে আপনার সন্তানকে উৎসাহ দিন। ছবি আঁকা, নাচ-গান, আবৃত্তি, অভিনয় ইত্যাদি আপনার সন্তানের মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা কাটাতে সাহায্য করবে। পড়াশোনার বাইরের এসব কাজ সন্তানের শারীরিক, মানসিক ও সৃজনশীল বিকাশে সহায়তা করে।

* দলগত কাজে সন্তানকে উৎসাহ দিন। এতে ওর মধ্যকার সংকীর্ণতা যেমন দূর হবে, তেমনি রাগ, ক্ষোভ, যন্ত্রণা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাও গড়ে উঠবে।

* পরিবারের ছোট ছোট কিছু কাজের দায়িত্ব ছেলেমেয়েদের দিয়ে দেখতে পারেন। এতে ওরা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ। হতাশা ও বিষণ্নতা কাটাতে দায়িত্ববোধ খুব কাজে দেয়।

* বয়ঃসন্ধিকালে মা-বাবার সঙ্গ না পেলে অনেক সময় সন্তান বিপথে চলে যায়। সঙ্গদোষে মাদক বা অসৎ কাজে জড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা এ সময় নেশাদ্রব্য সেবন করে একাকিত্বের অনুভব থেকে। তাই সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিন এবং বয়ঃসন্ধির এই বিশেষ সময়ে তাদের পাশে বন্ধুর মতো থাকুন।

মন্তব্য

Beta version