-->

তেলে রূপ তাজা

ইসমত জেরিন স্মিতা
তেলে রূপ তাজা

জানেন তো রূপচর্চায় আদিকাল থেকেই তেলের ব্যবহার হয়ে আসছে। তেলে ত্বকের জেল্লা যেমন মসৃণ থাকে, তেমনি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে তেল দারুণ কাজ করে। ত্বকের যতেœ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় নারিকেল এবং অলিভ তেল। নারিকেল তেল এবং অলিভ অয়েল যে রূপচর্চায় কাজে লাগে, তা সবাই জানেন। কিন্তু ঠিক কীভাবে ব্যবহার করা যায় এ দুই ধরনের তেলকে? জেনে নিই আসুন।

নারিকেল তেল

রোজ গোসলের আগে নারিকেল তেল সামান্য গরম করে যদি হাতে-পায়ে লাগান, ত্বক কোমল হবে। নারিকেলের সঙ্গে গ্লিসারিন, সামান্য গোলাপ জল এবং পছন্দমতো এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে বডি লোশন বানিয়ে নিতে পারেন। বডি স্ক্রাবার হিসেবেও নারিকেল তেল দারুণ। আধ কাপ নারিকেল তেল এবং সামান্য বেসনের সঙ্গে বড় দানার চিনি মিশিয়ে চিনি গলে যাওয়া পর্যন্ত স্ক্রাব করুন।

ত্বকের মৃত কোষ ঝরে যাবে, ডার্ক প্যাচও হালকা হবে। ঠোঁট এবং চোখের যত্নে নারিকেল তেলের তুলনা নেই। একটা পাত্রে নারিকেল তেল নিয়ে রুম টেম্পারেচারে রেখে দিন। সেমি-লিকুইড হয়ে গেলে লিপ বাম হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। রোজ রাতে শোয়ার আগে যদি তুলায় নারিকেল তেল নিয়ে চোখে চাপা দিয়ে রাখতে পারেন, ডার্ক সার্কলের সমস্যা কমবে।

চুল ভালো রাখতে নারিকেল তেলের উপকারিতার কথা নতুন করে বলার দরকার নেই। গোসলের আগে নারিকেল তেল গরম কওে চুলের গোড়ায় লাগান। তারপর ঈষদুষ্ণ জলে তোয়ালে ভিজিয়ে মাথায় জড়িয়ে রাখুন। এতে চুলের গোড়ায় তেল ঢুকবে সহজে। মেকআপ তুলতে চাইলে তুলায় নারিকেল তেল লাগিয়ে মুখে-ঘাড়ে-গলায় ঘষে নিন।

অলিভ অয়েল

মুখ ধোওয়ার পর সামান্য অলিভ অয়েল মুখে-গলায় লাগিয়ে নিলে ত্বক কোমল ও মসৃণ হবে। গোসলের পর ভিজে ত্বকে অলিভ অয়েল লাগালে ত্বক সহজেই তেল শুষে নেবে এবং পুষ্টি পাবে। অলিভ অয়েল ন্যাচারাল কন্ডিশনারও। শ্যাম্পু করার মিনিট কুড়ি আগে অলিভ অয়েল সামান্য গরম করে স্ক্যাল্পে হালকা করে ম্যাসাজ করে নিন। চুল ঝলমলে হওয়ার পাশাপাশি ডগা ফাটার সমস্যাও কমবে।

অলিভ অয়েল দিয়ে ঠোঁট স্ক্রাব করলে শীতে সহজে ঠোঁট ফাটে না। এক চা-চামচ অলিভ অয়েলের সঙ্গে সামান্য পাতিলেবুর রস এবং বড় দানার চিনি মেশালেই লিপ স্ক্রাব তৈরি! আঙুলের ডগায় অল্প অলিভ অয়েল নিয়ে চোখের চারপাশে ম্যাসাজ করুন রোজ। ১৫ মিনিট পর ভেজা তুলা দিয়ে মুছে নিন। ডার্ক সার্কলের সমস্যা কমবে।

 

তেল নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা

মিথ ১ : তেল ত্বককে ময়শ্চারাইজ করে

‘ময়শ্চার’ শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ ‘আর্দ্রতা’। আর আর্দ্রতা মানে জল। তেল আর জলের সম্পর্ক যে আদায় কাঁচকলায়, তা তো সবাই জানেন! তাদের মিশেল এক কথায় অসম্ভব। সুতরাং তেল ত্বককে আর্দ্রতা প্রদান করবে, এই ধারণাটাও সম্পূর্ণ ভুল। বরং বলা যেতে পারে, তেল ত্বককে নরম করে।

তা ছাড়া ত্বককে ময়শ্চারাইজ করতে গেলে কোনো উপাদানের ‘হিউমেকট্যান্ট’ (বাতাসের জলীয় বাষ্প শোষণ করার ক্ষমতা) ক্ষমতা থাকাও বাঞ্ছনীয়। কিন্তু তেলের সেই ক্ষমতা নেই। তবে তেল ত্বকের আর্দ্রতাকে বজায় রাখতে নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই রূপচর্চায় তেল নিশ্চয়ই ব্যবহার করুন, তবে তা ময়শ্চারাইজারের বিকল্প হিসেবে নয়।

মিথ ২: রূপচর্চার শুরুতেই তেল ব্যবহার করা উচিত

তেল এমন এক উপাদান, যা ত্বকের ওপরে এক আস্তরণ তৈরি করে, যা ত্বকের ভিতরে থাকা আর্দ্রতাকে লক করে দেয়। ত্বকে তেল ব্যবহার করার পর যদি অন্য কোনো প্রডাক্ট ব্যবহার করেন, তা সহজে এই আস্তরণ ভেদ করে ত্বকে পৌঁছতে পারে না। ফলে ত্বকে কোনো পুষ্টিও পৌঁছায় না। তাই রূপচর্চায় তেল ব্যবহার করলে সব সময় তা একদম শেষ ধাপে করুন। এতে ত্বকে আর্দ্রতা এবং নমনীয়তার সমতা বজায় থাকবে।

মিথ ৩: চুলে যত বেশি তেল ব্যবহার করবেন, ততই ভালো

সত্যি কথা বলতে, চুলে আপনি কী তেল ব্যবহার করছেন, তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনি সেই তেল কতটা পরিমাণে ব্যবহার করছেন। প্রত্যেকের চুলের ধরন যেমন এক নয়, তেমনি প্রয়োজনীয়তাও আলাদা। তাই একগাদা তেল লাগালেই যে সব সময় খুব ভালো ফল পাবেন, তা নয়।

শুরু করুন কয়েক ফোঁটা তেল নিয়ে। ভালোভাবে দুই হাতের তালুতে ঘষে স্ক্যাল্প থেকে চুলের ডগা অবধি মালিশ করুন। অতিরিক্ত তেল স্ক্যাল্পে বিল্ড-আপ সৃষ্টি করে। এতে উপকার তো হয়ই না, উল্টে প্রয়োজনীয় পুষ্টিটুকুও চুলে পৌঁছায় না।

মিথ ৪: তৈলাক্ত ত্বক এবং চুলে তেল ব্যবহার করা উচিত নয়

এই তথ্যটি আংশিকভাবে সত্যি। তৈলাক্ত ত্বক বা চুলে যেহেতু তেলের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে, তাই এই ধরনের ত্বক এবং চুলে তেল ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সব ধরনের তেল এই ধরনের ত্বক এবং চুলের জন্য উপযুক্ত নয়, এ কথা ঠিক। তবে নির্দিষ্ট কিছু তেল ব্যবহার করলে কিন্তু উপকারই পাবেন।

আমন্ড, জোজোবা ইত্যাদি হালকা তেল ব্যবহার করতে পারেন। নারিকেল তেল, সরিষার তেল কিংবা ক্যাস্টর অয়েল এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।

মন্তব্য

Beta version