-->

শসা দিয়ে রূপচর্চা

ট্রেন্ড প্রতিবেদক
শসা দিয়ে রূপচর্চা

শসার প্রায় ৯০ শতাংশই জল। ফলে প্রতিদিন শসা খেতে পারলে শরীর যে ফ্রেশ থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। একইভাবে দৈনন্দিন রূপচর্চায় একে শামিল করলে ত্বক এবং চুলের তরতাজা হওয়াও গ্যারান্টেড। তাই তো আদি-অনন্তকাল ধরে রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে শসা। টোনার থেকে স্ক্রাব, মাস্ক থেকে লোশনÑ শসা দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারবেন সবকিছু। কীভাবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

ত্বকের যত্ন নিন

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ঠাসা শসার পিএইচ ত্বকের পিএইচের সমান হওয়ায়, ত্বক নরম এবং আর্দ্র রাখতেও শসার জুড়ি মেলা ভার। তা ছাড়া শসার ত্বক উজ্জ্বল করার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। তাই ডার্ক সার্কলের সমস্যায় বহুদিন ধরেই শসা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যাদের ডার্ক সার্কলের সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত শসা ব্যবহার করলে হাতেনাতে ফল পাবেন।

চোখের ওপর শসার চাকতি রেখে দিন। ১৫-২০ মিনিট পর তুলে নিন। মুখ ধোওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে এখানেই শেষ নয়। ত্বকের অন্যান্য সমস্যা সমাধান করতেই কাজে লাগাতে পারেন শসা। ফেশিয়াল টোনার : অর্ধেকটা শসা কুঁচিয়ে তাতে ৩ টেবিল চামচ উইচ হেজেল (এক ধরনের প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্ট, যে কোনো ভালো প্রসাধনীর দোকানে পাবেন) বা গোলাপ জল মিশিয়ে পিউরি করে নিন।

এতে ২ টেবিল চামচ ডিস্টিলড ওয়াটার মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে রেখে দিন। প্রতিদিন তুলায় করে এই মিশ্রণ নিয়ে মুখে লাগান। দেখবেন ত্বক অনেক বেশি ঠান্ডা, ফ্রেশ এবং আর্দ্র থাকবে।

রিজুভিনেশন মাস্ক : কমপ্লেকশন উজ্জ্বল করতেও ব্যবহার করতে পারেন শসা। খানিকটা শসার রসের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা টাটকা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন এই মিশ্রণ ত্বকে লাগান। নিমেষে ত্বকে আসবে জেল্লা।

অ্যাকনে ও ইনগ্রোন হেয়ার ট্রিটমেন্ট : খানিকটা শসার রস, অল্প অ্যাপল সিডার ভিনিগার, অ্যালোভেরা জেল এবং খানিকটা টমেটোর রস মিশিয়ে নিলেই তৈরি ম্যাজিক লোশন! এটি ত্বকের রন্ধ্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করবে। ফলে অ্যাকনে কিংবা ব্রন থেকে নিষ্কৃতি।

আবার যদি ত্বকে কোনো ইনগ্রোন হেয়ার থাকে, সেক্ষেত্রেও ব্যবহার করতে পারেন এই মিশ্রণ। তুলায় করে চেপে চেপে লাগান। নিয়মিত ব্যবহারে উপকার পাবেন। তবে কয়েক মিনিট পর ত্বক ধুয়ে নিতে ভুলবেন না যেন।

অ্যান্টি-পিম্পল মাস্ক :  সমপরিমাণে হলুদগুঁড়া এবং শসার ক্বাথ মিশিয়ে নিন। এতে একটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে নিলেই তৈরি হবে অ্যান্টি-পিম্পল মাস্ক। ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে নিন। হলুদ থাকায় এই মিশ্রণ ব্যবহার করলে মুখে হলুদের দাগ থেকে যেতে পারে। তাই এই মাস্ক ছুটির দিনে ব্যবহার করাই ভালো।

অ্যান্টি-এজিং মাস্ক :  ত্বকের দৃঢ়তা বজায় রাখতে এই মাস্ক দারুণ কার্যকর। একটা শসার খোসা ছাড়িয়ে বেটে নিন। এতে একটা গোটা পাতিলেবুর রস এবং ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে নিন। চোখের অংশ বাদে পুরো মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে, স্কিনটোন ইভন করতে, ত্বক উজ্জ্বল রাখতে এবং ত্বকের দৃঢ়তা বজায় রাখতে এই মাস্ক ম্যাজিকের মতো কাজ করবে।

অ্যান্টি-ট্যান মাস্ক :  ২ টেবিল চামচ ওটস গুঁড়া, ২ চা-চামচ টক দই, ২ চা-চামচ মুলতানি মাটি এবং ২ চা-চামচ শসার রস একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ বানিয়ে ফ্রিজেও রেখে দিতে পারেন। ৩-৪ দিন অনায়াসে ব্যবহার করতে পারবেন। রোদ থেকে ফিরে পুরো মুখে এই মাস্ক লাগিয়ে রাখুন।

১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে ট্যানও দূর হবে এবং ত্বকও কোমল এবং মসৃণ হবে।

অ্যান্টি-রিঙ্কল মাস্ক :  দুই টেবিল চামচ শসার রস, সামান্য পরিমাণে ডিমের সাদা অংশ, ১ চা-চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে রাখুন। ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক হয়ে উঠবে টান টান, বলিরেখাও কমবে।

ময়শ্চারাইজিং মাস্ক :  ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে নানাভাবে শসা ব্যবহার করতে পারেন। সবার ত্বকের ধরন তো এক নয়। তবে ত্বকের ধরন যেমনই হোক না কেন, আর্দ্রতা সব ধরনের ত্বকের জন্যই মাস্ট। তবে ত্বকের ধরন বুঝে মাস্ক বাছুন। কারণ তৈলাক্ত ত্বকের জন্য যে ধরনের মাস্ক কার্যকর হবে, শুষ্ক ত্বকের জন্য সেই মাস্ক অতটা কার্যকর হবে না। তাই বিভিন্ন ধরনের ত্বকের কথা মাথায় রেখে রইল তিন ধরনের মাস্কের রেসিপি।

মাস্ক ১ (স্বাভাবিক ত্বকের জন্য) :  এক চা-চামচ ওটসের মধ্যে খানিকটা শসার ক্বাথ মিশিয়ে রেখে দিন। আধ ঘণ্টা পর এই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

মাস্ক ২ (তৈলাক্ত ত্বকের জন্য) :  আধা কাপ শসা কুঁচির সঙ্গে অর্ধেক অ্যাভোকাডো, একটা ডিমের সাদা এবং ২ চা-চামচ গুঁড়া দুধ মিশিয়ে ফেটিয়ে নিন। মুখে লাগিয়ে আধ ঘণ্টা রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

মাস্ক ৩ (শুষ্ক ত্বকের জন্য) :  অর্ধেক শসার সঙ্গে ১ টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

সুদিং স্ক্রাব :  এক কাপ সাদা চিনি, ৩/৪ কাপ শসা কুঁচি, কয়েকটা তুলসী পাতা এবং ১/৪ কাপ নারিকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন এই মিশ্রণ স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। শুধু মুখেই নয়, গোটা শরীরেই এই স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন। ত্বক কোমল এবং মসৃণ হবে।

কুলিং লোশন :  যতই ঘাম হোক, বডি লোশন ব্যবহার করা মাস্ট। তেল তেলে ক্রিম ব্যবহার করতে না চাইলে, বাড়িতেই বানিয়ে নিন গরমের লাইট বডি লোশন। একটা শসা, ১/৪ কাপ নারিকেলের দুধ এবং ১/৪ কাপ অ্যালোভেরা জেল একসঙ্গে বেটে নিন। এই মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন।

ফেশিয়াল মিস্ট :  ত্বককে তরতাজা রাখতে মিস্ট খুব ভালো অপশন। বিশেষত যাদের প্রতিদিন এয়ারকন্ডিশনড রুমে থাকতে হয়, তাদের সব সময় মিস্ট ক্যারি করা উচিত। শুষ্ক ত্বকের অব্যর্থ সমাধান। একটা শসা বেটে তাতে ১ চা-চামচ অ্যালোভেরা জেল, ১ টেবিল চামচ গোলাপ জল এবং একটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে মসলিন কাপড় বা চিজ ক্লথ দিয়ে ছেঁকে নিন।

ছেঁকে নেওয়া তরল স্প্রে বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। ত্বক শুষ্ক লাগলে বা দিনে ২-৩ ঘণ্টা অন্তর এই মিশ্রণ স্প্রে করে নিন।

মন্তব্য

Beta version