-->
শিরোনাম

স্বপ্নের মাঝেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে যাই (ভিডিও)

সোনিয়া সিমরান
স্বপ্নের মাঝেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে যাই (ভিডিও)
সাহানা, উদ্যোক্তা- আম্মা কিচেন

সাহানা, জন্ম হয়েছে পৈতৃক নিবাস পুরান ঢাকার নারিন্দা এলাকায় ১৯৭৪ সালে। পিতা আকবর আলী এবং মাতা নাসিমা বেগম। ছোট থেকে বড় হয়েছি পুরান ঢাকাতেই। তেমন জাকজমক বা চাকচিক্যে লালিত না হলেও বাবা- মার প্রথম সন্তান হওয়ায় বেশ আদরেই বেড়ে ওঠেছি। পুরান ঢাকার লোকজন খাওয়া দাওয়ায় বেশ সৌখিন হওয়ায় আমার বাবাও পিছিয়ে ছিলেন না।

আমার মা ভালো দেশিয় রান্না করতে পারেন। মূলত রান্নার সকল কিছু আমার আব্বার কাছ থেকেই শিখেছি। অনেক রকমের রান্নার আয়োজন চলত আমাদের বাসায়। আমার বাবা, চাচা এবং ভাইরা হোটেল বিজনেস পেশায় জড়িত ছিলেন। বর্তমানে আমার ছোট ভাই তাইওয়ানে বসবাসরত এবং সেখানে ২টি রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করছেন। ২ বোন ২ ভাই এর সংসারে আমি সবার বড়।

টিকাটুলিতে অবস্থিত শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় থেকে ১৯৯০ সালে এসএসসি করি। এরপর গোপীবাগ লেনস্থিত সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ থেকে ১৯৯২ সালে এইচএসসি এবং ১৯৯৪ সালে ঐ একই কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করি।

পড়াশোনার অগাধ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আর বেশি দূর পড়া হয়নি। ১৯৯৫ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর সংসার জীবনে এক সম্ভাবনাময়ী নারী হয়েও কখনো চাকরি বা বিজনেস করার কথা ভাবতে পারেনি। বর্তমানে আমি তিন সন্তানের জননী। সংসার জীবনে তেমন সুখী ছিলাম না।

 

 

পড়াশোনা জানা সত্ত্বেও স্বামীর নানান ধরনের নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালে দীর্ঘ ২২ বছরের সংসারের অবসান ঘটিয়ে ৩ সন্তানকে বুকে নিয়ে সন্তানদের শেষ সম্বল নিজ বাসায় এসে আশ্রয় নেই। তখন থেকেই সংগ্রামী জীবনের শুরু। যেহেতু আমি ততদিনে চল্লিশোর্ধ্ব তাই কোনো চাকরির সম্ভাবনা ছিল না। তিন সন্তানের সমস্ত দায় দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়ে নানা হতাশায় জর্জরিত আমি কোনো কুল কিনারা পাই না।

অতঃপর ২০২০ সালে নানান প্রতিকূলতার মাঝে কিছু লেডিস আইটেম নিয়ে ফেসবুকে পেইজ খুলে কাপড় বিক্রির উদ্দেশ্যে উদ্যোক্তা জীবনের সূচনা করি। বিধিবাম সেখানেও তেমন সারা না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ি। করোনার কবলে যখন সারাবিশ্ব আতঙ্কিত তখন একজন নতুন উদ্যোক্তা হয়ে কতটুকুই বা করতে পারব।

অবশেষে পৈতৃকভাবে রপ্ত করা শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আচার ও হোমমেড ফুড নিয়ে আবারও ওঠে দাঁড়াই বেঁচে থাকার তাগিদে। এবার আল্লাহ সহায়। আর পিছিয়ে পড়তে হয়নি। আচারে বেশ ভালো সারা পেলাম। অনেক অর্ডার আসতে থাকে বিভিন্ন মাধ্যম হতে, পাশাপাশি দেশিয় খাবারেও ব্যাপক পরিচিতি পাই।

বাইরে গিয়ে চাকরি করা আমার পক্ষে সম্ভব না বাচ্চাদের রেখে। তাছাড়া তিন সন্তানের সকল দায় দায়িত্ব আমার ওপর। সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রম করতে হয়। রান্না নিয়ে কিছু করা বা হোমমেড ফুড ক্যাটারিং বিজনেসকে অনেক দূর নিয়ে যেতে চাই। কারণ এ একটা কাজই আছে, যার মাধ্যমে বাসায় থেকে কাজটা করতে পারি। কিন্তু আমি কোনো প্রফেশনাল কোর্স করিনি।

২০২১ সালে ‘Amma kitchen ’ নামে অনলাইন বেজড হোমমেড ফুড ক্যাটারিং এর ব্যবসা শুরু করি। বর্তমানে বেশ ভাল বিজনেস হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ক্লাস পার্টিতে, জন্মদিনের পার্টিতে, গেটটুগেদার পার্টিতে ইভেন্টগুলোতে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি।

‘Amma kitchen ’ থেকে ফুড পান্ডায়, হাংরি নাকি, ফুড বাহক এবং পেইজ থেকেও নিয়মিত পরিবেশন হওয়া খাবারগুলোর মধ্যে মোরগ পোলাও, চিকেন বিরিয়ানি, বিফ বিরিয়ানি, কাচচি বিরিয়ানি, তেহারি, কাবাব, ফ্রজেন ফুড, চিকেন রোস্ট, চিকেন টিকিয়া, নেহারি, পিঠা, বার্গার, পরোটা, স্পেশাল চা, ঢাকাইয়া বিভিন্ন খাবার, বিভিন্ন সিজনাল আচারসহ আরো বেশ কিছু রুচিশীল খাবার। প্রতিদিন অফিস লাঞ্চ দিচ্ছেন। রমজান মাসেও ইফতার পার্টির অর্ডার সরবরাহের ব্যবস্থা আছে।

ঈদ, পূজা, রমজান উপলক্ষে নানান কাস্টমাইজ খাবারের অর্ডার নিয়ে অনলাইনে বেশ ভাল সেল করেন। তার স্বপ্ন আচার ও হোমমেড খাবারের নিয়ে একটা দোকান দিবেন। তিনি এ স্বপ্নের মাঝে প্রতিনিয়ত নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।

 

সাহানা

উদ্যোক্তা - আম্মা কিচেন

মন্তব্য

Beta version