আমি নাহিদ আফরোজ তানি। কাজ করছি দেশিয় পোশাক এবং শাড়ি নিয়ে। আমার পেজ আরুশাস কোটর। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল আইনজীবী হবার তাই পড়াশুনা করেছি আইন নিয়ে। পড়াশুনায় যথেষ্ট ভালো ছিলাম। আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর করার পর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসেবে জয়েন করি।
যদিও তখন ইচ্ছে ছিল বিসিএস অথবা জুডিশিয়ারিতে যাওয়ার। কিন্তু বিয়ের পর সেটা হয়ে ওঠেনি। ৬ বছর শিক্ষকতায় ছিলাম। ব্যক্তি জীবনে আমি ২ মেয়ের মা। ২০১৭ সালে আমি ২য় বার মা হই, আমার চাকরিটা ছেড়ে দিতে হয়। কারণ মেয়েদের দেখাশোনা করার কেউ নেই, কিন্তু কাজের মানুষ আমি, হয়তো পারিপার্শ্বিক চাপে আমার কাজ ছেড়ে দিতে হয়েছে তাই কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিলাম না।
অথচ বাইরে গিয়ে কাজ করাও সম্ভব হচ্ছিল না। ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। সাইক্রিয়েটিস্টের শরণাপন্ন হলাম। রেগুলার কাউন্সিলিং নিতে লাগলাম । এরমধ্যে বিশ্বে করোনার আঘাত এলো। তখনি মাথায় আসলো অনলাইন বিজনেসের আইডিয়া। ব্যবসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পণ্য নির্বাচন।
আমার বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা তাই সেই সুবাদে বাংলাদেশের অনেক এলাকা ঘুরা হয়েছে। তাই ভাবলাম দেশিয় পোশাক নিয়ে কাজ করি। আর যেহেতু এলাকা আমার পরিচিত তাই ব্যবসা শুরু করতে অসুবিধা হয়নি। নিজের জমানো দশ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করলাম আমার পেজ আরুশাস কোটর।
ভয়ে ছিলাম পারব কিনা। আলহামদুল্লিলাহ ব্যাপক সাড়া পেলাম। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০২০ সালে শুধু টাঙ্গাইল এর তাঁতিদের তৈরি শাড়ি নিয়ে কাজ শুরু করলেও এখন আমি জামদানি নিয়েও কাজ করছি। আমি নিজে তাঁতিদের কাছে গিয়ে পণ্য সংগ্রহ করি যাতে করে পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারি।
আজ দেড় বছর পর আমার দশ হাজার টাকার মূলধন এর ব্যবসা লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আমার কাছে আমার ব্যবসা শুধু উপার্জনের জায়গা নয় এটা আমার এনটি ডিপ্রেশনের কাজ করেছে। আমি এখন স্বপ্ন দেখছি বিশ্ব করোনা মুক্ত হলে আমি শো-রুম নিব এবং আরো বড় পরিসরে আমার ব্রান্ডকে নিয়ে যাব।
কারণ কাজ করতে গিয়ে দেখেছি আমাদের দেশের কাপড় কোয়ালিটিফুল হওয়া সত্ত্বেও কদর কম শুধুমাত্র প্রচারের অভাবে। আর এ কারণে তাঁতিরাও তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক পান না। তাই আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ করে যেতে চাই।
নাহিদ আফরোজ তানি
উদ্যোক্তা- আরুশাস কোটর
মন্তব্য