-->

সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে

ট্রেন্ড ডেস্ক
সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে
উত্তরাধিকারসহ পারিবারিক সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করার জোড় দাবি জানানো হয়।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) উদ্যোগে উত্তরাধিকারসহ পারিবারিক সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

বিএনপিএসের নির্বাহী পরিচালক ও নারীনেত্রী সভাপ্রধানত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিএনপিএসের উপ-পরিচালক শাহনাজ সুমী। সংবাদ সম্মেলনে অতিথি আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভানেত্রী মাখদুমা নার্গিস রত্না, স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর অর্পিতা দাস, এডাবের সমাপিকা হালদার।

সভাপ্রধান রোকেয়া কবীর বলেন, বর্তমান বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল অবদান এ দেশের নারীসমাজের। অথচ দুঃখজনকভাবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক কর্তৃক গৃহীত বৈষম্যমূলক ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইনের বলে উত্তরাধিকারসহ পারিবারিক সম্পদ ও সম্পত্তিতে সমান অধিকার পাওয়া থেকে বাংলাদেশের নারীসমাজকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, যা সুস্পষ্টভাবে রাষ্ট্রের ৫০ ভাগ জনগোষ্ঠী নারীর মানবাধিকার এবং সংবিধানের লঙ্ঘন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপিএসসহ বিভিন্ন নারী সংগঠন সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলাদেশের নারীসমাজের পক্ষে উত্তরাধিকারসহ পারিবারিক সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকারের দাবিতে আইন কমিশনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।

সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন বিএনপিএসের উপ-পরিচালক শাহনাজ সুমী বলেন, ‘দেশের সব নাগরিকের অধিকার রক্ষা এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে বাংলাদেশের সব আইনই প্রণীত হয়েছে সংবিধানের আলোকে। শুধু নারী অধিকার খর্বকারী এই পারিবারিক আইনটিই প্রণীত হয়েছে ধর্মীয় বিধানকে অবলম্বন করে।

একটি স্বাধীন দেশে এমন দ্বৈত ব্যবস্থা চলতে পাওে না। নারীর উত্তরাধিকার নির্ধারণের এই বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে কেবল যে নারীর মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারই লঙ্ঘিত হয় তা নয়, বরং এর মাধ্যমে ‘জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে’ ‘প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন’ [৭ (২)] হিসেবে সংবিধানের প্রাধান্যও খর্ব হয়।’

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মাখদুমা নার্গিস রত্না বলেন, আমাদের সংবিধানের ২৭ এবং ২৮ অনুচ্ছেদে সমতার কথা বলা আছে। আমাদের দেশে নারীর মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য অনেক আইন আছে, কিন্তু উত্তরাধিকার আইনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, যা সংবিধানের সম-অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে। আমাদের সিভিল আইন, ফৌজদারি আইন প্রভৃতি ধর্ম দ্বারা পরিচালিত নয়। কিন্তু পরিবারিক আইনসমূহ ধর্ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এ জন্য নারী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের দাবি পারিবারিক বৈষম্যমূলক আইনগুলোর আমূল সংস্কার করে অভিন্ন পরিবারিক আইন প্রচলনের।

স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার বলেন, উত্তরাধিকারে সমান অধিকার না থাকা নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পথেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং একই সঙ্গে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। নারী-পুরুষ সমতা নিশ্চিত করতে অবশ্য ৫০ ভাগ নাগরিক নারীসমাজের প্রতি বৈষম্য নির্মূল করতে বৈষম্যমূলক উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তন করতে হবে।

এডাবের সমাপিকা হালদার বলেন, এ ছাড়া উত্তরাধিকারে সমান অধিকার না থাকায় শিশু বয়স থেকেই পরিবারে মেয়েশিশুকে লালনপালন করা হয় মূলত একটা উপযুক্ত পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে অন্য বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। পরিবারের এই মানসিকতা যেমন বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি করে, তেমনি জীবনভর নারীদের পরজীবী হিসেবে গণ্য হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করে দেয়।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর অর্পিতা দাস বলেন, ‘নারীরা প্রতিনিয়ত যে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তার মূলে রয়েছে বৈষম্যমূলক আইন বলবৎ থাকা- যার মধ্যে রয়েছে প্রচলিত বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন।

পরিবারের দ্বিতীয় শ্রেণির সদস্য হিসেবে গণ্য হওয়া নারীদের প্রতি নানা ধরনের বৈষম্য-নির্যাতন হতে দেখে পরিবারে বসবাসরত অপরাপর সদস্যদের মধ্যেও পুরুষ আধিপত্য ও অগণতান্ত্রিক মনমানসিকতার চর্চা ও আচরণ বিকাশ লাভ করে। পরবর্তী সময়ে যে আচরণ বৃহত্তর সমাজে পুনরুৎপাদিত হয়। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে হলে উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া অপরিহার্য।’

মন্তব্য

Beta version