পানি পানে অনেক উপকার তা আমরা সবাই জানি। তবে ঠাণ্ডা না গরম এই নিয়ে সব সময় বিতর্ক চলে। পানি ঠাণ্ডা হোক বা গরম দুটিতেই কিছু না কিছু উপকার থাকে। তবে আজকে জানাব গরম পানির বিশেষ উপকারিতা সম্পর্কে।
একদল জাপানি চিকিৎসক নিশ্চিত করেছেন, কয়েকটি স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে গরম পানি থেরাপি ১০০ ভাগ কার্যকর। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- মাইগ্রেন, উচ্চ রক্তচাপ, নিম্ন রক্তচাপ, জয়েন্টের ব্যথা, হঠাৎ হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি এবং হ্রাস, মৃগী রোগ, কোলেস্টেরলের মাত্রা, কাশি, শারীরিক অস্বস্তি, গাটের ব্যথা, হাঁপানি রোগ, ফোঁস কাশি, শিরায় বাধা, জরায়ু ও মূত্র সম্পর্কিত রোগ, পেটের সমস্যা, ক্ষুধার সমস্যা, মাথা ব্যথা। এছাড়াও চোখ, কান এবং গলা সম্পর্কিত সব রোগেও গরম পানি বেশ কার্যকর।
কীভাবে গরম পানি পান করবেন-
নিয়মিত রাত ১০-১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে ২ গ্লাস গরম পানি পান করতে হবে। প্রথম দিকে ২ গ্লাস পানি পান করতে সক্ষম নাও হতে পারে, এ ক্ষেত্রে আস্তে আস্তে এটি করতে পারবেন। গরম পানি পান করার পরে ৪৫ মিনিট কোনো কিছুই খাওয়া যাবে না।
গরম পানি থেরাপি যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে যে স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে
- ৩০ দিনের মধ্যে ডায়াবেটিস।
- ৩০ দিনের মধ্যে রক্তচাপ।
- ১০ দিনের মধ্যে পেটের সমস্যা।
- ৯ মাসের মধ্যে সব ধরনের ক্যানসার।
- ৬ মাসের মধ্যে শিরার বাধার সমস্যা।
- ১০ দিনের মধ্যে ক্ষুধা জাতীয় সমস্যা।
- ১০ দিনের মধ্যে জরায়ু এবং এর সম্পর্কিত রোগ।
- ১০ দিনের মধ্যে নাক, কান এবং গলার সমস্যা।
- ১৫ দিনের মধ্যে মহিলাদের সমস্যা।
- ৩০ দিনের মধ্যে হৃদরোগ জাতীয় সমস্যা।
- ৩ দিনের মধ্যে মাথাব্যথা, মাইগ্রেন সমস্যা।
- ৪ মাসের মধ্যে কোলেস্টেরল সমস্যা।
- ৯ মাসের মধ্যে মৃগী এবং পক্ষাঘাত সমস্যা।
- ৪ মাসের মধ্যে হাঁপানি সমস্যা।
গরম পানির উপকারিতা
১. কোষ্ঠকাঠিন্য বা শরীর কড়া থেকে রক্ষা করে। শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ হলে কোষ্ঠকাঠিন্যও থাকবে না।
২. পিরিয়ডের সময়ে মেনস্ট্রয়াল ক্র্যাম্পের প্রকোপ কমাতে গরম পানির কোনো বিকল্প হয় না। এই সময় গরম পানি পান করা শুরু করলে অ্যাবডোমিনাল মাসলের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে ব্যথা কমতে সময় লাগে না।
৩. শরীর ও মাথার স্ট্রেস কমিয়ে দেয়। সারাদিন কাজ করে আমাদের যে ক্লান্তিবোধ আসে, তা দূর করে।
৪. খুশকির প্রকোপ কমাতে গরম পানি বেশ কার্যকর। সারাদিন ধরে গরম পানি পান করলে নানা কারণে স্কাল্পের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরে আসে। ফলে খুশকি দ্রুত কমে।
৫. সারাদিন ধরে অল্প অল্প করে গরম পানি খেতে থাকলে একদিকে যেমন শরীরে পানির ঘাটতি দূর হয়, তেমনি শরীরের ভেতরে নানা পরিবর্তন হতে শুরু করে। যার প্রভাবে শুষ্ক ত্বকের সমস্যা তো দূর হয়ই, সেইসঙ্গে ত্বকে প্রবাহের মাত্রা বাড়তে শুরু করায় স্কিন টোনের উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না।
৬. একলাসিয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করে। একলাসিয়া শরীরে খাবারকে আটকে রাখার প্রবণতা বাড়ায়। পানি এ ধরনের সমস্যা দূর করে।
৭. গরম পানি স্কিন সেলের ক্ষত সারিয়ে ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। সেই সঙ্গে ত্বক টান টান হয়ে ওঠে এবং বলিরেখাও হ্রাস পায়। ফলে বয়সের কোনো ছাপই ত্বকের উপর পড়তে পারে না।
৮. গরম পানি খাওয়া শুরু করলে প্রতিটি হেয়ার সেলের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে হেয়ার ফলের মাত্রা তো কমেই, সেইসঙ্গে চুলের সৌন্দর্য বাড়ে চোখে পরার মতো।
৯. গরম পানি খাওয়া মাত্র শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে ঘাম হতে শুরু হয়। আর ঘামের মাধ্যমে টক্সিন বেরিয়ে যেতে শুরু করে। এতে করে শরীর সহজেই বিষমুক্ত হয়।
১০. অতিরিক্ত ওজনের কারণে চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে আজ থেকেই গরম পানি খাওয়া শুরু করুন। ফল পাবেন একেবারে হাতে নাতে। গরম পানি খেলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। ফলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমার সুযোগই থাকে না।
ঠান্ডা পানি ক্ষতির কারণ
মনে রাখতে হবে ঠান্ডা পানি পান করা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। যদি অল্প বয়সে ঠাণ্ডা পানি পান প্রভাবিত না করে, তবে এটি বৃদ্ধ বয়সে ক্ষতি করবেই। ঠান্ডা পানি হার্টের ৪টি শিরা বন্ধ করে দেয় এবং হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়। হার্ট অ্যাটাকের মূল কারণ হচ্ছে কোল্ড ড্রিঙ্কস।
এটি লিভারেও সমস্যা তৈরি করে। এটি লিভারের সাথে ফ্যাট আটকে রাখে। লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের অপেক্ষায় থাকা বেশিরভাগ মানুষ ঠান্ডা পানি পান করার কারণে এর শিকার হয়েছেন। এছাড়া ঠান্ডা পানি পেটের অভ্যন্তরীণ দেয়ালকে প্রভাবিত করে। এটি বৃহত অন্ত্রকে প্রভাবিত করে এবং ফল স্বরূপ ক্যানসারে রূপ নেয়।
লেখক : ডা. মেনসাহ (জাপান)
মন্তব্য