-->

লেবু খেলে সারে যেসব রোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
লেবু খেলে সারে যেসব রোগ

সবার খুব চেনা ফল লেবু। গ্রামাঞ্চলে প্রায় সবার ঘরের কোণে, উঠানে বা বাগানে লেবু গাছের দেখা হরহামেশাই মেলে। শহরে সব পরিবারের ঘরে নিয়মিত আনা হয় লেবু। সাধারণত লেবু কেনা ও খাওয়া হয় মূলত দুটি কারণে।

প্রথমত খাবারের পাতে মুখের রুচি ঠিক রাখতে স্বাদে বদল বা বৈচিত্র্য আনার জন্য।

দ্বিতীয়ত শরবত পানীয় হিসেবে ব্যবহারের জন্য।

যে উদ্দেশ্যেই লেবু খান না কেন এতে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এর পাশাপাশি থাকে শরীরের জন্য দরকারি পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ফাইবার। সুস্থ মানুষের প্রতিদিন লেবু শরবত বা লেবু পানি পানেও চিকিৎসকদের কোনো মানা নেই।

তবে আপনি জানেন কি নিয়মিত লেবু খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হলে আরো অনেক রোগ থেকে মুক্তি মিলতে পারে আপনার। আসুন আলোচনা করা যাক এক ঝলক:

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়এটা অবশ্য আপনার জানা কথাই। যদি ভিটামিন সি ঠিকঠাক গ্রহণ করা হয় তাহলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয় ও অনেক ধরনের রোগ বালাই কমে যায়। এমনকি হাত-পা ছড়ে গেলে বা কেটে রক্ত বের হলে দ্রুত অণুচক্রিকা জমাট বেঁধে রক্ত পড়া বন্ধ করে। কিন্তু, ভিটামিন সি কম খেলে রক্ত জমাট বাঁধতেও সময় নেয়। আর ভিটামিন সির বড় উৎস লেবু। এটি তুলনামূলক সস্তা উৎস এবং সহজে পাওয়া যায়।

শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি কমায়গবেষণা থেকে জানা গেছে, ভিটামিন সি শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে। আর পর্যাপ্ত ভিটামিন সি পাওয়ার সহজ উপায় হচ্ছে লেবু।

ক্যানসার থেকে রক্ষায় সাহায্য করেসম্প্রতি একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন কেউ যদি এক গ্লাস লেবু পানি পান করেন তাহলে তার ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। অসাধারণ তথ্য যদিও এখনও আরো অনেক প্রমাণ বাকি। তবে লেবু পানি পানে তো কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তাই পান করতে পারেন অনায়াসেই।

হজমের গণ্ডগোল দূর হয়

অনেকের ধারণা লেবু খেলে অ্যাসিডিটি বাড়ে। তবে চিকিৎসকরা এক্ষেত্রে বলছেন, সবার নয়, কারো কারো বাড়ে। আর এ সমস্যার সঙ্গে আরো অনেক কিছু জড়িত। তবে সাধারণ হিসেবে লেবু পানে অ্যাসিডিটি ও হজমের সমস্যা দূর হয় নিয়মিত লেবু খেলে। গবেষণায় পাওয়া গেছে, লেবু পানিতে যে এসিড রয়েছে তা খাবার হজম করতে সাহায্য করে। লেবুর সাইট্রাস ফ্লাভোনইডস্‌ পাকস্থলীতে থাকা খাবারকে ভেঙে সহজেই হজম করে।

ওজন কমেএক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ লেবু মিশিয়ে প্রতিদিন পান করলে শরীরের বাড়তি মেদ ঝরে যাবে। শরীর থাকবে অটুট ও স্বাস্থ্যকর। ওজন কমানোর উদ্দেশ্যেই লেবু পানি পান করতে চাইলে ৮-১২ আউন্স নরমাল বা ঠাণ্ডা পানিতে পুরো একটি লেবুর রস মিশিয়ে নিন। স্বাস্থ্যবিদরা বলে থাকেন, ওজন কমানোর জন্য ঠাণ্ডা লেবুর পানিই বেশি কার্যকরী।

ডায়েট বন্ধুযারা ডায়েট করতে চান তাদের জন্যও লেবুপানি ভীষণ উপকারী। ডায়েটের মূল বিষয় হচ্ছে খাবার কম খাওয়া। তাই খাবারের আগে বেশি বেশি পানি পান করলে পেট ভরে যায়। ক্ষুধা লাগে কম। এই পানি যদি লেবু পানি হয় তাহলে পাবেন বাড়তি উপকার। কারণ, লেবুতে আছে পলিফেনলস্‌ যা ক্ষুধা নিবারণে সাহায্য করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সাধারণ হিসেবে তেমন কঠিন মনে না হলেও এটি ভুক্তভোগীকে যথেষ্ট কষ্ট দিয়ে থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদে পাইলসসহ নানা রোগ সৃষ্টির কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এটিও দূর করতে ভূমিকা রাখে লেবু পানি। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। কেউ চাইলে মিশিয়ে নিতে পারেন সামান্য মধু বা লবণ। এরপর দেখুন কেমন ফল পান।

লিভারের কাজে সহায়তা লিভার হচ্ছে শরীরের ফিল্টার। লেবুর সাইট্রাস ফ্লাভোনইডস্‌ লিভার থেকে বর্জ্য ফেলে দিতে ও লিভারের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। তাই লিভারকে সুস্থ রাখার জন্য খাবারের সময়ে কিংবা শরবত হিসেবে লেবু পানি খুব উপকারী।

পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়ায়

লেবুতেও আছে যথেষ্ট পরিমাণ পটাশিয়াম। মানব শরীরে পটাশিয়ামের কাজ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, মাংসপেশীর কর্মক্ষমতা বাড়ানো ও হার্টবিট নিয়ন্ত্র। দিনের শুরুতে এক গ্লাস লেবু পানি পান করলে শরীরে পটাশিয়ামের চাহিদার কিছুটা পূরণ হয়ে গেল। এরপর সারাদিনে একটা কলা কিংবা ডাবের পানি পান করতে পারেন। চাহিদা পুরোপুরি পূরণ হয়ে যাবে।

কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে

কিডনিতে পাথর হওয়ার সমস্যাটি এখন অহরহ দেখা যায়। তবে রোগটিই যেন না হয় হয় তাই আগে থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। মূলত শরীরে পানির স্বল্পতার কারণে কিডনিতে পাথর জমে। তাই পানি পর্যাপ্ত পান করা উচিত আর দিনে এর এক গ্লাস হওয়া উচিত লেবু পানি। কারণ লেবু পানি আর সব উপকারের সঙ্গে কিডনি ও পাকস্থলী পরিষ্কার ও এতে হওয়া পাথর গলাতেও সাহায্য করে।

মুখে দুর্গন্ধ হতে দেয় না

লেবুতে যে সাইট্রাস আছে তা সহজেই মুখের ভেতর ব্যাকটেরিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রোধ করে। তাই মুখে দুর্গন্ধ হয় না। তবে লেবুর এসিড দাঁতে অতিরিক্ত পরিমাণ পড়লে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই মাঝে মাঝে স্ট্র দিয়ে লেবু পানি পান করতে পারেন।

বিপাকে উপকারী

ঠাণ্ডা পানি বিপাকে তুলনামূলক বেশি উপকারী। বিপাক প্রক্রিয়ায় রক্তের মান নিয়ন্ত্রণও জরুরি। লেবুর খোসা করতে পারে এই কাজ। খাবারের সময় চিবিয়ে কিছুটা লেবুর খোসা খেয়ে নিন। সামান্য তিতকুটে হলেও এর স্বাদ ভালোই। না পারলে লেবুর খোসা কুচি করে কেটে পানিতে ভিজিয়ে তার পর পানিসহ পান করুন। উপকার হবেই।

গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য উপকারি

ভিটামিন সি সাধারণ মানুষের মতো গর্ভবতী মা ও তার সন্তানের জন্যও দরকারি। লেবু হচ্ছে ভিটামিন সি’র অফুরন্ত উৎস।

ডায়াবেটিকদের জন্য উপকারি

লেবুতে যে ফাইবার আছে তা আপনার শরীর ভাঙতে পারে না বলেই ব্লাড সুগার লেভেলে এর জন্য কোনো প্রভাব পড়ে না। Joslin Diabetes Center-এর পরামর্শ অনুযায়ী দিনে ২০-৩৫ গ্রাম ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। মাঝারি আকারের একটি লেবুর রস থেকে ২.৪ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায় যা একজন ডায়াবেটিক রোগীর শরীরে ৭-১২% ফাইবারের চাহিদা পূরণ করে।

তথ্য: টাইমস অব ইন্ডিয়া, হেলথ ইনডেক্স, টাবুলা

মন্তব্য

Beta version