মাছে ভাতে বাঙালি হলেও বাংলার একেক অঞ্চলে রয়েছে নিজস্ব কিছু খাবার। রসনাবিলাসি বাঙালির পাতে তাই নানারকম ঐতিহ্যবাহী খাবার আজও শোভা পায়। দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের খাবারের মধ্যে রয়েছে অনেক বৈচিত্র্য। তেমনি একটি উল্লেখযোগ্য খাবার হলো সিদল, সিদল ভর্তা।
শুঁটকি মাছ ও কচুর ডাটা দিয়ে তৈরি একটি খাবার। অন্যান্য অঞ্চলে এটি থাকলেও খাবারটি উত্তরাঞ্চলের (রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়) খাবার হিসেবে পরিচিত।বৃহত্তর ময়মনসিংহের অনেক অঞ্চলে চ্যাপা শুঁটকিকে সিদল/হিদল বলা হয় যা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রান্নার দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তরাঞ্চলের সিদল হতে ভিন্ন।
তবে ভিন্নতা থাকলেও সিদল তৈরিতে সব স্থানেই ছোট মাছের শুঁটকি ব্যবহার করা হয়। পারিবারিক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে পাঠানো সওদা হিসেবে কিংবা নিজ বাড়িতে আপ্যায়নের ক্ষেত্রে একসময় সিদল ছিল অন্যতম একটি উপকরণ। শুধু তা-ই নয়, হাটে-বাজারে বিক্রিও হতো গ্রামীণ পরিবারের নারীদের হাতের তৈরি এই মুখরোচক খাবার।
এটি ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খাওয়া যায়। আবার বিভিন্ন তরকারির সঙ্গে মিশিয়েও রান্না করা যায়। তবে সিদল তৈরি কিন্তু খুব একটা সহজ কাজ নয়। চলুন আজ জেনে নেয়া যাক এই ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরির রেসিপিটি। রেসিপি দিয়েছেন নাজমুন নাহার
যা যা লাগবে:
ফ্রেশ শুঁটকি মাছ-২০০ গ্রাম, কচুশাক-৩ আঁটি, রসুন- একটি, হলুদের গুঁড়া- সামান্য
প্রণালি: কচুশাক পাতা ফেলে ডাটাগলো ধুয়ে রৌদ্রে দিয়ে ডাটার পানি শুকিয়ে নিতে হবে। এবার আলাদাভাবে শুঁটকি মাছগুলো গুঁড়া করে নিয়ে এর মধ্যে কচুর ডাটাগুলো দিয়ে একসঙ্গে বেটে নেব। সাথে রসুন ও হলুদও দিব। ভালোভাবে সব উপকরণ বেটে নেব। এবার এই বাটা মিশ্রণ দিয়ে গোল গোল চ্যাপটা করে বড়া বানিয়ে রৌদ্রে শুকিয়ে নিতে হবে।
সিদল রান্নার প্রস্তুত প্রণালি: সিদল- ২টা, পেঁয়াজ- ১ কাপ (কুঁচি), রসুন- পৌনে এক কাপ, (একটু ছেচে নেব), কাঁচামরিচ- ১০-১২টা, লবণ- স্বাদমতো, তেল- পৌনে এক কাপ, তেজপাতা- ২টা, এলাচ- ২টা, দারুচিনি- ২ টুকরাহলুদ গুঁড়া- ১-২ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া- ১ চা চামচ, ধনেগুঁড়া- ১-২ চা চামচ, জিরা গুঁড়া/বাটা- ১-২ চা চামচ, বেগুন- ২টা
প্রণালি: প্রথমে সিদলগুলো একটু ভেজে নিয়ে হাল্কা গরম পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখব ১০ মিনিট। পানি থেকে তুলে দুই হাত দিয়ে চেপে পানি ঝরিয়ে নিয়ে সিদলগুলো ভেঙে নেব। প্যানে তেল দিয়ে গরম হলে পেঁয়াজ ও রসুন দিয়ে অল্প ভেজে এতে বাকি মসলাগুলো দিয়ে কষিয়ে নেব। এবার সিদল দিয়ে অল্প অল্প পানি দিয়ে খুব ভালোভাবে কষিয়ে নেব।
এবার বেগুনগুলো দিয়ে আবারও তেলের মধ্যে কষিয়ে রান্না করব। বেগুন সিদ্ধের পর তেল আলাদা হলে নামিয়ে নেব।
মন্তব্য