-->
শিরোনাম

রোজায় পানিশূন্যতা এড়াতে

সাবিহা সুলতানা মুক্তা
রোজায় পানিশূন্যতা এড়াতে

চৈত্রের দাবদাহে শুরু হয়েছে এবারের রমজান। প্রায় ১৪ ঘণ্টা পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। ফলে অনেকেরই শরীরে দেখা দিতে পারে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন। বিশেষ করে বয়স্ক, ডায়াবেটিস রোগী, কিডনি রোগী, রোদে পুড়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তির এই সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।

রোজায় পানিশূন্যতা যেন না হয় সেদিকে আমাদের সবার খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত পরিমাণমতো পানি ও পানি-জাতীয় খাবার খেলে এ সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। ইফতার থেকে সাহরি- এ সময়ের মধ্যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড়ে ২-২.৫ লিটার পানি পান করতে হবে।

এক্ষেত্রে ছোট্ট একটি ফর্মুলা হচ্ছে, যার যত ওজন সেই সংখ্যাকে ৩০ দিয়ে ভাগ করে প্রাপ্ত ভাগফলের সমান লিটার পানি কমপক্ষে তাকে এ সময়টুকুর মধ্যে খেতে হবে। ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত এমন খাবার বাছাই করতে হবে, যেসব খাবারে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। অনেকেই ইফতারে অতিরিক্ত ভাজাভূজি খেয়ে রাতে আর কিছুই খান না।

সাহরিতে শুধু পানি বা না খেয়েই রোজা রাখেন, যা একেবারেই ঠিক নয়। স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারের পর পরিমিত পরিমাণে রাতের খাবার ও সাহরি খেতে হবে। সেই সঙ্গে নিয়মিত শরীরচর্চা বা শারীরিক ব্যায়াম বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে নিয়মিত তারাবিহর নামাজ আদায় করলে বেশ উপকার পাওয়া যাবে।

পানিশূন্যতা কি?

কোনো ব্যক্তি যখন প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অল্প পরিমাণে পানি পান করেন তখন দেহের সমগ্র কার্যক্রিয়া সম্পাদনে পানির ঘাটতি দেখা দিলে, এই অবস্থাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয় ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা। রোজায় এ সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সব থেকে বেশি। অতিরিক্ত গরমে দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার কারণে ঘাম, প্রস্রাব ও শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রচুর পানি শরীর থেকে বের হয়ে যায়। ফলে দেহ পানিশূন্য হয়ে পড়ে।

পানিশূন্যতা কেন হয়?

১. দীর্ঘসময় পানি না খাওয়ার কারণে দেহ পানিশূন্য হয়ে পড়ে।

২. খাবার তালিকায় পানিসমৃদ্ধ সবজি, ফল ও খাবার না রাখলে দেহে পানির অভাব দেখা দেয়।

৩. অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, ইফতার-সাহরিতে অতিরিক্ত চা-কফি খেলেও পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।

৪. ইফতার থেকে সাহরি এই সমইয়ের মধ্যে পর্যাপ্ত (৮-১০ গ্লাস) পানি পান না করলে দেহ পানিশূন্য হতে পারে।

৫. জ্বর, ডায়রিয়াসহ এ ধরনের অন্যান্য অসুখে আক্রান্ত হলে।

৬. কম পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন ও এনার্জি ড্রিংক, অতিরিক্ত পরিমাণে লেবুর রস খেলেও দেহে পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

পানিশূন্যতার লক্ষণ কী?

পানিশূন্যতার অন্যতম বড় লক্ষণ হচ্ছে গলা শুকিয়ে আসা, প্রস্রাব কমে যাওয়া ও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবের রং অতিরিক্ত হলুদ হওয়া, ক্লান্তি ও অবসাদগ্রস্ত হওয়া, মাথাঘোরা, বমিভাব, ত্বক ও জিহ্বা শুষ্ক হয়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, চোখে ঝাপসা দেখা। তবে জিহ্বা ও চোখ দেখে খুব সহজেই পানিশূন্যতা বোঝা যায়। পানিশূন্যতা হলে হার্ট রেট, প্রেশার কমে যেতে পারে। রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।

রোজায় পানিশূন্যতা রোধে করণীয়

১. ইফতার ও সাহরির মধ্যবর্তী সময়ে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।

২. ইফতারে বেশি বেশি ফল ও ফলের রস খেতে হবে। বেছে নিতে পারেন তরমুজ, বাঙ্গি, মাল্টা, বেল, পেঁপে ইত্যাদি।

৩. টকদই ও লাচ্ছি যোগ করতে পারেন ইফতারে।

৪. ইফতারে রাখতে পারেন ডাবের পানি ও খাবার স্যালাইন। তবে উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে পটাশিয়াম বেশি থাকলে তা এড়িয়ে চলাই উত্তম।

৫. রাতের খাবার ও সাহরিতে বেছে নিতে হবে সহজেই হজম হয় এমন খাবার। অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। কেননা তা পরিপাকে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়।

৬. সাহরিতে দু-একদিন পরপর রাখতে পারেন ডাল দিয়ে লাউ বা চালকুমড়া দিয়ে ঝোল তরকারি।

৭. সাহরি ও রাতের খাবারে নিয়মিত পানিসমৃদ্ধ সবজি যেমন চালকুমড়া, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, স্কোয়াশ, শসা, টমেটো রাখুন।

৮. সাহরি বা রাতের খাবারে একবেলা দুধ রাখুন।

৯. খরচ কমাতে ডিম ও ডাল রাখতে পারেন।

১০. কাজ ছাড়া বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন, বের হলেও রোদ চশমা ও ছাতা ব্যবহার করুন।

১১. অনেকেই ইফতারের পর ফ্রিজে রাখা অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করেন। এই বদ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।

১২. নিয়মিত গোসল করতে হবে, খুব খারাপ লাগলে চোখেমুখে পানির ঝাপ্টা দিতে পারেন।

১৩. যাদের দুধ চা ও কফি পানের অভ্যাস আছে তা বাদ দিতে হবে। কারণ দুধ চা ও কফি আমাদের দেহে পানিশূন্যতার সৃষ্টি করতে ভূমিকা পালন করে।

১৪. খেজুর, ফল, জুসের সাথে ইফতারে রাখতে পারেন পান্তাভাত, যা সারাদিনের রোজার শেষে আপনার দেহে পানির ঘাটতিপূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

১৫. ডায়রিয়া বা জ্বর বা অতিরিক্ত বমি হলে নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।

লেখক : পুষ্টিবিদ

মন্তব্য

Beta version