-->

শিশুর কোন বয়সে কেমন খাবার

ট্রেন্ড ডেস্ক
শিশুর কোন বয়সে কেমন খাবার

শিশুর খাবার নিয়ে মা-বাবার ভাবনার শেষ নেই। শিশুকে কোন বয়সে কোন খাবার দিতে হবে, তা নিয়ে ধারণা থাকা জরুরি। শিশুর জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধই একমাত্র ও আদর্শ খাবার। এ সময় অন্য কোনো খাবার, এমনকি পানি পান করানোরও কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।

ছয় মাস পর থেকে শিশুর পুষ্টিচাহিদা পূরণে তথা স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য বুকের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার খাওয়ানো দরকার। তবে শিশুর দুই বছর বয়স পর্যন্ত দুধ হিসেবে মায়ের বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোনো দুধ বা কৌটার দুধ খাওয়ানোর দরকার নেই।

মায়ের দুধে সব ধরনের খাদ্য উপাদানই থাকে। এ ছাড়া জন্মের পরপরই মায়ের স্তন থেকে যে হলুদ রঙের শালদুধ নিঃসরণ হয়, তা নবজাতকের রোগপ্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে এ শালদুধ খাওয়ানো নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। কিন্তু এ কথা স্মরণ রাখতে হবে, শালদুধই শিশুর জন্য প্রথম প্রতিরক্ষা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মায়ের দুধ সহজপাচ্য, বিশুদ্ধ এবং এতে রোগপ্রতিরোধকারী উপাদান থাকে বলে যে কোনো সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়। মায়ের দুধ পানকারী শিশুর হাঁপানি, শ^াসতন্ত্রের রোগ, স্থূলতা, টাইপ-১ ডায়াবেটিস, কানের প্রদাহ, ডায়রিয়া, বমি, সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম ইত্যাদির আশঙ্কা কম থাকে।

যে মায়েরা শিশুকে বুকের দুধ পান করানÑ তাদেরও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্তন ও জরায়ুর ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। কিন্তু বাজারে যেসব শিশুখাদ্য পাওয়া যায়, সেগুলো মায়ের দুধের মতো এতটা সুরক্ষা দিতে পারে না। ফলে এসব ফর্মুলা দুধ পান করালে শিশু ও নবজাতকের নানা রকম রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁঁকি বেড়ে যায়।

ছয় মাস থেকে এক বছর বয়সি শিশুদের মায়ের দুধের পাশাপাশি তিন বেলা বাড়তি খাবার দেওয়া প্রয়োজন। তবে এ বয়সেও শিশুর মূল খাবার মায়ের দুধ। অর্থাৎ বাড়তি খাবারের পরিমাণ হবে কম। তিন বেলা খাবারের মধ্যে দুই বেলা খিচুড়ি বা নরম ভাতের মতো একটু ভারি খাবার দেওয়া যেতে পারে। বাকি এক বেলা হালকা কোনো খাবার (ফলের রস বা নরম ফল, যেমন- কলা) দিতে পারেন।

আধা সেদ্ধ ডিম, সবজির স্যুপ বা ছোট মুরগির স্যুপও শিশুর জন্য উপকারী। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান মিশ্রিত খাবার বাইরে থেকে কিনে আনার চেয়ে ঘরেই বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান দিয়ে সুস্বাদু খাবার তৈরি করে দেওয়া ভালো। এক বছরের বেশি বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে মায়ের দুধের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে দিতে হবে।

এ বয়সে বাড়তি খাবার প্রয়োজন দিনে পাঁচবার। কোনো অবস্থাতেই শিশুকে জোর করে বেশি পরিমাণ খাবার দেওয়া ঠিক নয়। বাড়ন্ত শিশু কোনো একটি খাবার খেতে পছন্দ না করলে, সেটির পরিবর্তে একই পুষ্টিমানের অন্য খাবার দেওয়া যেতে পারে।

যে শিশু খিচুড়ি খেতে চায় না, তাকে নরম ভাতের সঙ্গে ডাল, সবজি, মাছ বা মাংস ভালোভাবে মিশিয়ে খেতে দিতে পারেন। শিশুকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত শিশুকে গরুর দুধ বা কৌটার দুধ খাওয়ানো যাবে না। শিশুকে শক্ত খাবার, যেমন বিস্কুট বা শক্ত ভাত দেওয়া ঠিক নয়।

শক্ত খাবার খেতে গেলে শিশুর গলায় আটকে যেতে পারে। একটু একটু করে শিশুর খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। খিচুড়ি তৈরি করতে সমপরিমাণ চাল ও ডাল নেওয়া উচিত। ছয় মাস বয়সি শিশুকে সামান্য ডিমের কুসুম দেওয়া যায়, এরপর কুসুমের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। সেদ্ধ বা পোচ করা ডিমের কুসুম, দুটিই শিশুর উপযোগী।

এর বেশ কিছুদিন পর থেকে ডিমের সাদা অংশ খাওয়ানো শুরু করতে পারেন। ছয় মাস বয়স থেকে শিশুকে পানি পান করানো উচিত। নুডলস স্যুপ বা জাউভাতও দিতে পারেন শিশুকে। যে কোনো একটি খাবার শুরু করার পর একটানা তিন থেকে পাঁচ দিন খাবারটি দেওয়া উচিত। ওই খাবারে শিশুর অ্যালার্জি আছে কিনা বা সেটি খেলে শিশুর অন্য কোনো সমস্যা হয় কিনা, তা এ সময়ের মধ্যেই ধরা পড়বে।

টকজাতীয় ফল শিশুদের দেওয়া ঠিক নয়। নয় মাস বয়সের আগে শিশুদের টকফল দেওয়া উচিত নয়। মিষ্টি ফলগুলো শিশুদের জন্য বেশি উপযোগী। শিশুদের খাবারে বেশি লবণ দেওয়া ঠিক নয়। আর চিনির পরিবর্তে মধু বা গুড় ব্যবহার করা ভালো। গড়ে এক বছর বয়সের মধ্যেই শিশু পরিবারের বাকিদের মতো খাবার খেতে পারে, তবে এটি নির্ভর করে শিশুর দাঁত ওঠার সময়ের ওপর।

যে শিশুর আগে দাঁত উঠবে, সে একটু আগে আগেই স্বাভাবিক খাবারে অভ্যস্ত হতে পারবে। আর যেসব শিশুর দাঁত উঠতে একটু দেরি হয়, তাদের সম্পূর্ণ স্বাভাবিক খাবারে অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগলেও ভয়ের কিছু নেই।তাই অযথা চিন্তা না করে শিশুর পুষ্টিচাহিদা পূরণে শিশুর পিতা-মাতার সজাগ ভূমিকা পালন করা অনস্বীকার্য। তবেই আমরা পাব একটি সুস্থ ও নীরোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। যাদের মাধ্যমে রচিত হবে আমাদের সমৃদ্ধির পাথেয়।

মন্তব্য

Beta version