-->
শিরোনাম

আইবিএস-এর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

ডা. উম্মে জহুরা
আইবিএস-এর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

কথায় বলে- ‘পেট ঠিকতো দুনিয়া ঠিক’। চোখের সামনে সুন্দর সুন্দর সুস্বাদু খাবার থাকলেও পেটের সমস্যার কারণে জিহ্বাকে সামলে নিতে হচ্ছে। পেটের সমস্যাগ্রস্ত রোগীর ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। তাই অনেকের কাছেই আইবিএস একটি আতঙ্কের নাম। তা হলে আসুন আমরা আইবিএস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

আইবিএস কী

আইবিএস হচ্ছে ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম।Irritable Bowel Synmdrome ( IBS). দীর্ঘমেয়াদি পেটের পীড়া, বদহজম এবং আমাশয় চিরজীবনের সঙ্গী হয়ে যায়। পেটে হঠাৎ করে কামড় দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে বাথরুমে যেতে হয়।এমনও ব্যক্তি আছেন যারা দিনে ৪/৫ বার টয়লেটে যান। সারা দিন পেটের মধ্যে ভুটভাট শব্দ হয় এবং ডাক দেয়। এই রোগের জন্য সাধারণত কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। রোগীর সমস্যাগুলো নিজেই বর্ণনা দেয়। এ জন্য সহজেই রোগ নির্ণয় করা যায়। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা লক্ষণভিত্তিক হওয়ায় হোমিওপ্যাথিতে আইবিএস চিকিৎসায় সফলতা পাওয়া যায়।

 IBS এর লক্ষণ

১. পায়খানার বেগ সামলাতে না পারা এবং মলদ্বারে ব্যথা। ২. ঘন ঘন পাতলা মল বা তরল উদরাময়। ৩. ক্ষুধা মান্দ্য হওয়া বা মোটেই থাকে না। আবার কখনো অতিরিক্ত ক্ষুধা থাকা। ৪. পেটে ব্যথা হওয়া এবং টয়লেট সেরে নেওয়ার পর ব্যথা হ্রাস পাওয়া।

৫. প্রতিবার মল ত্যাগের আগে বা পরে মিউকাস ক্ষরণ। ৬. ওজন হ্রাস পাওয়া। ৭. ঘন ঘন মলদ্বার দিয়ে গ্যাস বের হওয়া কিংবা ঢেঁকুর তোলা। ৮. হজমের গোলযোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পর্যায়ক্রমে উদরাময়। ৯. প্রতিনিয়ত গ্যাস হওয়া এবং পেটের মধ্যে ভুটভাট/কোক কোক/ কলকল শব্দ হওয়া।

১০. মানসিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়া। যেমন- খিটখিটে মেজাজ, সামান্য কিছু নিয়ে উত্তেজিত হওয়া, অবসাদ ও উদ্বিগ্নতা।  ১১. প্রচণ্ড শারীরিক দুর্বলতা, মস্তিষ্কে ক্লান্তি এবং কাজের প্রতি অনীহা/ অমনোযোগিতা। ১২. পেট ফাঁপা, গলায় জ্বালা অনুভব ও বমি বমি ভাব।

১৩. কোষ্ঠকাঠিন্য অবস্থায় মলের বেগ না আসা, শক্ত মল, অনেক কষ্টে অল্প অল্প বের হওয়া। ১৪. অনেক সময় যৌন ক্ষমতা হ্রাস পায়। ১৫. খাওয়ার পর পেটের অশান্তি বৃদ্ধি। ১৬. টয়লেট সারার পরও মনে হয় এখনো রয়ে গেছে ইত্যাদি।

 IBS এর কারণ

১. অনিয়মিত খাদ্য গ্রহণ ও সঠিক সময়ে খাদ্য গ্রহণ না করা। ২. পর্যাপ্ত পানি পান না করা। ৩.নার্ভাস সিস্টেমের দুর্বলতা। ৪. বিভিন্ন খাদ্য হজম না হওয়া। ৫. অতিরিক্ত গরম কিংবা ঠান্ডা খাবার খাওয়া। ৬. দীর্ঘ সময় পেট খালি রাখা। ৭. পেটে গ্যাসে পরিপূর্ণ হওয়া। ৮. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হওয়া।

৯. মানসিক চাপ। ১০. হঠাৎ বড় কোনো মানসিক আঘাত/ভয়/শোক পাওয়া। ১১. এলার্জি জাতীয় খাবার হজম না হওয়া। ১২. ভীষণ ক্রোধ বা উদ্বেগ। ১৩. কোলন বা মলাশয়ের অস্বাভাবিক গাঁজন প্রক্রিয়া। ১৪. পিরিয়ড চলাকালীন সময় হরমোনাল পরিবর্তন হওয়া।

১৫. অতিরিক্ত এলোপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহার। যেমন- অ্যান্টিবায়োটিক, এন্টিডিপ্রেসেন্ট এবং সরবিটল জাতীয় মেডিসিন ইত্যাদি।

নিষিদ্ধ খাবার

আইবিএসের রোগীদের তৈলাক্ত, চর্বিজাতীয়, আঁশযুক্ত খাবার, যব, গম, গমের তৈরি যে কোনো খাবার, হোটেলের খাবার, দুধ ও দুধের তৈরি খাবার, শাকসবজি, ফল, সালাদ, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার ও গুরুপাক খাবার বর্জন করতে হবে। নরম ভাত, কাঁচা-পাকা পেঁপে, কাঁচা-পাকা বেল, টাটকা খাবার খাওয়া যাবে। বাসি খাবার খাওয়া যাবে না।

আইবিএসের চিকিৎসার জন্য এদিক-ওদিক ছোটাছুটি না করে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকবেন প্রতিদিন। একমাত্র হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাতেই আইবিএস সম্পূর্ণভাবে ভালো হয়।

লেখক: ডা. উম্মে জহুরাবিবিএস, এমবিএস, ডিএইচএমএস

মন্তব্য

Beta version