পুষ্টি গুনাগুণে সমৃদ্ধ একটি ফল হচ্ছে তাল। ভাদ্র মাসে শহর থেকে শুরু করে গ্রামবাংলাসহ প্রতিটা জায়গায় তালের পিঠাপুলি বানানোর একটি উৎসব লেগে যায়। কারণ ওই সময়েই তাল পেকে যায় এবং যার রস সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করা হয়ে থাকে। তাল দুই ভাবে খাওয়া যায়; কাঁচা অবস্থায় এবং পাকা অবস্থায়। দুটো অবস্থাতেই তালের পুষ্টিগুণের কোন তারতম্য ঘটে না। তাল গাছের কান্ড থেকে প্রচুর রস সংগ্রহ করা হয়। যা থেকে গুড়, পাটালি মিছরি,তাড়ি ইত্যাদি তৈরি হয়ে থাকে।
তালের পুষ্টিগুণ
তালে রয়েছে খাদ্য আঁশ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, পটাশিয়াম, জিংক, ভিটামিন এ, বি, সি এবং বেশ পরিমাণ খনিজ উপাদান। এছাড়া এই সকল উপাদানের পাশাপাশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদানও রয়েছে যার ফলে হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে অনেক সাহায্য করে।
তালের উপকারিতা সমূহ
• তালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি রয়েছে। এর ফলে আমাদের ভিটামিন বি এর অভাবে যত ধরনের রোগ সৃষ্টি হয়, তা প্রতিরোধে তাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
• তালে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। যা আমাদের দেহের হাড়সহ এবং দাঁতের ক্ষয় পূরণে সহায়তা করে থাকে এবং দাঁতের এনামেল ভালো রাখে।
• তাহলে রয়েছে ভিটামিন এ । যা রাতকানার রোগ সারতে সাহায্য করে। পাশাপাশি আমাদের দৃষ্টি শক্তিকে প্রখর করতেও ভূমিকা রাখে।
• সাধারণত তাল গরমে পাওয়া যায়। যেমন, গ্রীষ্মকালে কাঁচা অবস্থায় যেটার শাঁস আমরা খেয়ে থাকি এবং ভাদ্র মাসে প্রচন্ড গরমের ফলে তাল পাকে, যা সংগ্রহ করে আমরা বিভিন্ন পিঠা তৈরি করে থাকি। এই প্রচন্ড গরমে আমাদের পানি শূন্যতা দেখা দেয়, যা তালের রস কিছুটা হলেও পানি শূন্যতা দূর করা যায়।
• আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তাল উপকারী একটি ফল। কেননা তালে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি। যা বিভিন্ন রোগের থেকে আমাদেরকে সুস্থ রাখে বিশেষ করে হৃদরোগ, ক্যান্সার, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
• রক্তশূন্যতা ও লিভার সুস্থতায় তালের ভূমিকা রয়েছে।
• ত্বকের সুস্থতায় তালের ভূমিকা রয়েছে।
• এটি এসিডেতে দূর করে থাকে এবং হজমের সহায়ক হিসেবে প্রাকৃতিক ওষুধের মত কাজ করে থাকে।
ওজন কমাতে তালের ভূমিকা
কথাটি শুনে সবাই অবাক হয়ে যাচ্ছি। তাল খেলে কিভাবে ওজন কমে যায়। আসলে আমরা সবাই কমবেশি ধারণা করে থাকি তাল খেলে ওজন বৃদ্ধি পায় কিন্তু আমাদের এই ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। তালের ক্যালরি খুবই কম যার ফলে তাল খেলে আমাদের ওজন বৃদ্ধি পায় না এবং তালে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ রয়েছে যা আমাদের ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
কিছু টিপস
• যাদের এসিডিটির সমস্যা আছে, তারা তাল দিয়ে বানানো তেলের পিঠা অর্থাৎ তেলে ডুবানো যে সকল পিঠা তৈরি করা হয়ে থাকে, সে সকল পিঠা খাওয়া থেকে বিরত থাকবো। • তালের পিঠায় অনেক ক্ষেত্রে নারকেল, দুধ, গুড় কিংবা চিনি ব্যবহার করা হয়। মিষ্টির পরিমাণটা কমাতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে চিনি মোটেও ব্যবহার করা যাবে না। কারণ চিনি একটি বিষ। চিনি আমাদের ছোট বড় সকলের জন্যই খুবই ক্ষতিকর একটি উপাদান। চিনির বদলে অনেকেই সুগার ফ্রি, কিংবা বাজারে যে সকল কেমিক্যাল উপাদান পাওয়া যায়, যা মিষ্টির ফ্লেভার দিয়ে থাকে, সেই সকল থেকেও আমাদের বিরত থাকতে হবে। কারণ কেমিক্যাল সম্পন্ন কোন উপাদান শরীরের জন্য সুস্থতা বয়ে আনে না- এটা মাথায় রাখতে হবে। • তালের রস ফ্রিজে সংগ্রহ করে ৩ থেকে ৪ মাস খাওয়া যায়। |
লেখক: ফিটনেস, ক্লিনিকাল নিউট্রিশনিস্ট এন্ড ডায়েট কনসালটেন্ট, লেজার ট্রিট
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য