-->

বিচ্ছেদের দায় কার, নারী না পুরুষের?

অর্পিতা জাহান
বিচ্ছেদের দায় কার, নারী না পুরুষের?
প্রতীকী ছবি

অর্পিতা জাহান: বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ কি? এমন প্রশ্ন যদি বর্তমানে কোন পুরুষকে করা হয়- তিনি নির্ধিতায় বলবেন, নারীদের উচ্চশিক্ষিত হওয়া, অতিরিক্ত স্বাধীনতাকামী হওয়া ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার কথাই বলবেন।

 

গবেষণায় জানা গেছে- প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩৬-৩৮টি বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। বিচ্ছেদের আবেদন ৭০ শতাংশই আসে মেয়েদের পক্ষ থেকে । এর মধ্যে আবার শিক্ষিত নারীর সংখ্যাই বেশি।

 

ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন জরিপের তথ্য মতে- গত ২০২০ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা ছিলো ১২ হাজার ৫১৩ টি । ২০২১ সালে তা বেড়ে ১৪ হাজার ৬৬৯ এর কাছে পৌঁছায় এবং ২০২২ সালে কিছুটা কমলেও তা ছিলো ২০ সালের চেয়েও অনেক বেশি; তখন ১৩ হাজার ২৮৮টি বিচ্ছেদ ঘটেছে।

 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে অনুযায়ী গত কয়েক বছরের তুলনায় ২০২২ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়েছে দ্বিগুন।

 

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ম্যান অ্যান্ড ম্যাসকিউলিনিটিজ স্টাডিজ -সিএমএমএস এর তথ্য অনুযায়ী, বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ মূলত শিক্ষিত ও আত্মনির্ভরশীল দম্পতি। সমাজবীদরা বলছেন পূর্বে স্বামী স্ত্রীর তালাক হলে মেয়েকে নিয়ে নানা সমালোচনা হতো এবং কারণ হিসেবে নারীকেই দোষী করা হতো। সমাজের কটাক্ষের মুখেও পড়তে হতো। পরিবারের সদস্যরা ব্যাপারটা ভালো চোখে দেখতেন না। এমনকি একমাত্র ভরসা বাবার বাড়িতে পর্যন্ত আশ্রয় দেওয়া হতো না । যার কারণে বিচ্ছেদের কথা উঠলে মেয়েপক্ষ বারবার চিন্তা করতেন ।

 

আর বর্তমান সমাজ বলে নারী শিক্ষিত, স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল হওয়ায় সামান্য কিছু হলেই বেছে নিচ্ছেন বিচ্ছেদের পথ।

 

আসল ব্যাপার হচ্ছে, নারীর আত্মনির্ভরশীলতার সঙ্গে সমাজের তথাকথিত পুরুষরা মানিয়ে নিতে পারছেন না। তাদের ভাষ্য ’নারীরা থাকবে ঘরে, বাহিরে কাজ কেন করবে’, তাদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া যাবে না।

 

এছাড়াও বর্তমানে নারীর শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নে আইনি প্রক্রিয়া সহজ হওয়ার কারণে নারীরা কোন নির্যাতন সহ্য না করে সহজেই পদক্ষেপ নিতে পারেন। পারস্পরিক বোঝাপড়ায় তারতম্য, একে অন্যকে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া, শারীরিক সম্পর্কে অসন্তুষ্টি, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন, মেয়েকে নির্যাতিত হওয়া থেকে বাঁচাতে পরিবার ও সমর্থন দিচ্ছে এবং বর্তমানে নারীরা আর দাদী নানীদের মত মুখ বুজে সব অন্যায় সহ্য করে না ।

 

এখন আসা যাক তথাকথিত কিছু পুরুষের অভিযোগের দিকে, তারা বলছেন- নারী শিক্ষিত হওয়ায় আত্মনির্ভর হতে গিয়ে অনেক বেশী স্বাধীনতাকামী হয়ে উঠছেন। যে কারণে পরিবারের যথার্থ খেয়াল রাখতে পারে না। যা নিয়ে পরিবারে ও দাম্পত্য জীবনে কলহ শুরু হয় এবং একপর্যায়ে রূপ নেয় বিচ্ছেদের।

 

এখন প্রশ্ন একজন পুরুষ শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হলে নিজের জন্য, পরিবার ও সমাজের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ । কিন্তু একটা নারীর ক্ষেত্রে তা অভিশাপস্বরূপ কেন? পরিবারের প্রতি সকল দায়িত্ব শুধু নারীদেরই?

 

একজন পুরুষ শিক্ষিত হলে তিনি সভ্য মানুষ।  আর নারী শিক্ষিত হলে অসভ্য ! কেন?

 

যেখানে আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্ধ আল কুরআনে বলা হয়েছে; ٱقْرَأْ بِٱسْمِ رَبِّكَ ٱلَّذِى خَلَقَ (পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন) সূরা আলাক ; আয়াত-১। যেখানে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে শিক্ষা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।

 

প্রিয় নবী (সা.) শিক্ষার ব্যাপারে শুধু পুরুষদেরই নয় বরং নারীদেরও সঠিক মানবতা ও মর্যাদার উঁচু স্থান দিয়েছেন। এমনকি দাসদাসীদেরও শিক্ষা দীক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন । বলেছেন, যার নিকট কোন দাসদাসী আছে, তিনি যেন তার ভালোভাবে সুশিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ভদ্রতা-শালীনতার শিক্ষা দেন এবং মর্যাদা দান করেন ।

 

যেখানে ইসলামে নারীদের শিক্ষার ব্যাপারে এতো জোর দেওয়া হয়েছে, সেখানে সমাজে এতো কিসের অভিযোগ! 

 

আর একটা কথা যোগ না করলেই নয়; এইখানে নারীর উপরও কিছু বর্তায়, গুটিকয়েক নারী আত্মনির্ভর হতে গিয়ে অনেক বেশি বেপোরোয়া হয়ে উঠে। পুরুষের প্রতি অনেক কতৃর্ত্ব দেখায়, বাহিরে কাজ করতে গিয়ে অনেক সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। যা পরবর্তীতে দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল ধরায় । পুরুষের মন মানসিকতা বুঝতে না চাওয়া ,  তার সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব না দেওয়া- এটাও একটা বড় কারণ ।

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন- বিবাহ বিচ্ছেদ থেকে রক্ষা পেতে নারী-পুরুষ উভয়কেই এগিয়ে আসতে হবে। উভয়কে সহনশীল হতে হবে, সেক্রাফাইস (ত্যাগ) করার মনোভাব থাকতে হবে। সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব দুইজনের। সম্পের্কের প্রতি দুইজনের যত্নশীল হতে হবে। স্বামীর দায়িত্ব থাকবে স্ত্রীকে বোঝা, বিশ্বাস করা, স্বাধীনতা দেওয়া, মতামত উপস্থাপন করার সুযোগ দেওয়া এবং তা মূল্যায়ন করা, কিছুটা সময় স্ত্রীর নাম করা, সম্মান ও মর্যাদায় ঘাটতি যাতে না পড়ে সেদিকে খেয়াল করা, স্ত্রীর বাড়ীর মানুষকে সম্মান করা ।

 

আর স্ত্রীর দায়িত্ব থাকবে, তিনি যদি কর্মজীবী নারী হয়ে থাকেন, তাহলে তাকে স্বেচ্ছাচারি মনোভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে, কোনো প্রকার স্বেচ্ছাচারিতা করা যাবে না। স্বামীর সঙ্গে আচার আচরণে কোমল-নমনীয় হতে হবে। খবরদারী করা যাবে না, পুরুষের মানসিক অবস্থা চিন্তা করে মতামত প্রদানে উদ্বুদ্ধ করা ও সম্মানসূচক আচরণ করা।

ভোরের আকাশ/অ

মন্তব্য

Beta version