-->

ব্যায়াম ছাড়াই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ওজন কমানোর সহজ উপায়

অর্পিতা জাহান
ব্যায়াম ছাড়াই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ওজন কমানোর সহজ উপায়

অর্পিতা জাহান: বাংলাদেশের মানুষ স্বভাবতই অনেক অলস প্রকৃতির ও ভোজন রসিক হয়। আমরা সবকিছুতেই গাঁ বাঁচিয়ে চলতে চাই । আর এই স্বভাবগত কারণে ওজন অনেক বেড়ে যায় । যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ । তার মধ্যে করোনাকালীন দীর্ঘ সময় লকডাউনে বাইরে যাওয়ার সুযোগ তেমন ছিলো না বললেই চলে । তাই ওই সময় অনেকেরই শরীরে যুক্ত হয় বাড়তি ওজন। যা কমানোর অনেক উপায় থাকলেও অলসতার জন্য অনেকে তা থেকে দূরে থাকেন । আবার অনেকে আছেন প্রবল ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও কাজের ব্যস্ততা ও সুযোগের অভাবে ব্যায়াম করে ঘাম ঝরানো সম্ভব হয়ে উঠে না । ভাবতে থাকি কাল থেকে ব্যায়াম করবো, ডায়েট করবো। কিন্তু সেই কাল আর আসে না । আর তা হয় শুধু আলসেমির কারণে ।

 

কিন্তু যেভাবেই হোক না কেন ওজন তো কমাতেই হবে । কারণ আপনার বয়স ও উচ্চতার চেয়ে যদি আপনার ওজন বেশী হয়, তাহলেই পড়তে হবে নানা সমস্যায় । অল্প বয়সে ভুগতে হবে অনেক জটিল অসুখে। আর বন্ধু মহলে তো প্রতিনিয়ত লজ্জায় পড়তেই হয়।

 

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অতিরিক্ত ওজন মানুষের শরীরে নানান জটিলতার কারণ, সাথে সরাসরি জড়িয়ে যেতে পারে প্রস্টেইট ক্যান্সারের ঝুকি ।

 

স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ইটদিস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই গবেষনার উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয় স্থূলতার সঙ্গে প্রোস্টেইট ক্যান্সারের সম্পর্ক নতুন নয়।

 

দেখা গেছে- পেটের চর্বির সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রোস্টেইট ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি । যাদের কোমর ৪০ বা তারও বেশী, তাদের প্রোস্টেইট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কয়েকগুণ বেশী ।

 

এ অবস্থায় অলসতা কাটিয়ে প্রতিটি মানুষকেই অবশ্যই তার ওজনের দিকে নজর রাখা উচিত। কারণ ওজন কম থাকলেই আপনি সুস্থ ।

 

তাই আসুন জেনে নেই কিভাবে ব্যায়াম ছাড়াই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ওজন কমিয়ে নিতে পারেন ।

 

# খাবারের ক্যালরী মেইনটেইন করা :

একটা প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার প্রতিদিন ১৬০০-২৪০০ ক্যালরি গ্রহণ করতে হয় । আর পুরুষের ২০০০-৩০০০ পর্যন্ত ক্যালরি নিতে হয় । আপনি প্রতিদিন যে পরিমাণ ক্যালরী গ্রহণ করছেন তা অর্ধেক কমিয়ে নিয়ে আসুন । প্রতিদিন কম হলেও ৫০০-৬০০ ক্যালরী কমাতে হবে । খাবারে ক্যালোরি কমানোর কারণে শরীর পর্যাপ্ত শক্তি পায় না, ফলে শরীরের অতিরিক্ত গচ্ছিত ক্যালোরী খরচ হয় । আর এমনটা আপনার রেগুলার ডায়েটে রাখলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশি সময় লাগবে না । আর কোন খাবারে কি পরিমাণ ক্যালরি আছে, তা জানতে ক্যালোরি চার্ট অনুসরণ করতে পারেন বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।

 

# লোভ না করা :

ডায়েট করাটা একটু কষ্টসাধ্য ব্যাপার তবে অসম্ভব নয় । আপনি যদি মনোবল দৃঢ় রাখেন, তাহলে সুফল খুব সন্নিকটে । তাই ডায়েট করা অবস্থায় কোনো ভাবেই নিজের নিয়ন্ত্রণ হারালে চলবে না । এই সময়ে লোভ করা যাবে না। অতিরিক্ত ক্যালরির খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে । পোলাও, বিরিয়ানি, তৈলাক্ত খাবার, ফাস্টফুড, চিনি জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ থেকে নিজেকে সর্বোচ্চ দূরে রাখতে হবে।

 

# প্রচুর পানি পান করা :

আপনি যদি একটু কম খেতে চান তাহলে খাওয়া শুরু করার আগে ১ গ্লাস পানি পান করুন । এতে করে আপনার পেট কিছুটা ভরবে এবং খাওয়ার সময় তুলনামূলক কম খাবেন। অনেকের মধ্যেই একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে, খাওয়ার আধা ঘন্টা আগে পানি খেতে হয়, খাওয়ার ঠিক আগে পানি খাওয়া উচিৎ নয়। এটা সম্পূর্ন ভুল ধারণা । এছাড়া সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার অভ্যাস করুন। কারণ পানি বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে এবং বাজে টক্সিনগুলো শরীর থেকে বের করতে সাহায্য করে।

 

# পর্যাপ্ত ঘুম :

একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক ৬-৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত । এর বেশী সময় ঘুমালে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । মনে রাখবেন অতিরিক্ত ঘুম আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর । রাতে দেরি করে ঘুমানোর অভ্যাস পরিহার করুন । এতে ওজন বাড়ে । কারণ আপনি বেশিক্ষণ জেগে থাকলে আপনার ক্ষুধা লাগবেই স্বাভাবিক । তখন ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য আপনার কিছু খেতেই হবে ।

 

# ফাস্টিং করা:

ওজন কমাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ফাস্টিং । আপনি চাইলে সপ্তাহে ১-২ দিন ফাস্টিং করতে পারেন । এছাড়াও আরেকটি কাজ করতে পারেন টানা ১২ ঘন্টা খাবার থেকে বিরত থাকতে পারেন । যেমন; রাতের খাবার ৮ টার মধ্যে কমপ্লিট করবেন এবং পরের দিন সকাল ৮ টা পর্যন্ত খাবার আহার থেকে বিরত থাকতে পারেন । এই পিরিয়ডের মধ্যে শুধু পানি পান করতে পারেন । এই লম্বা সময় খাবারে গ্যাপ থাকার কারণে আপনার শরীরের অতিরিক্ত গচ্ছিত ফ্যাট বার্ন হবে। আর এই ম্যাথটটা নিয়মিত করলে কয়েক সপ্তাহে আপনি আপনার কাঙ্খিত ওজন হারাতে সক্ষম হবেন।

 

# প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার আহার করুন:

ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। আমরা সাধারণত ওজন কমাতে গিয়ে দিনের অধিকাংশ সময় না খেয়ে থাকি । দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার কারণে পরে ক্ষুধায় একেবারে বেশী খাবার খাওয়া হয়ে যায় । এতে করে ওজন কমার থেকে আরও বেড়ে যায় । আবার দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কারণে বিপাক প্রক্রিয়া স্লো হয়ে যায় তাতে ওজন বাড়ার আশংকা দ্বিগুন হয়ে যায়।

 

# খাবারের তালিকায় প্রোটিন রাখুন :

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখতে হবে । কারণ প্রোটিন শরীরের মেটাবোলিজম (বিপাক প্রক্রিয়া) বাড়িয়ে তোলে এবং আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে । যার শরীরের মেটাবোলিজম যত ফাস্ট তার ওজন কমবে তত ফাস্ট। ডিম, বাদাম, বীজ জাতীয় খাদ্য বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি করে । তবে কখনই কার্বোহাইড্রেড বাদ দিয়ে শুধু প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করা যাবে না ।

 

# টক দই ও রঙিন সালাদ:

টক দই শরীরের জন্য অনেক উপকারী । তাই সকালের নাস্তায় টকদই রাখতে পারেন। সঙ্গে খাদ্য তালিকায় রাখুন রঙিন ফল বা রঙিন সবজির তৈরি সালাদ। সালাদে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকায় পরিমানে বেশী খেলেও ওজন বাড়ে না ।

 

# গ্রীন টি:

গ্রীন টিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা আপনার মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে । পাশাপাশি শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দিতেও সমান কার্যকরী । সপ্তাহে প্রতিদিন চার কাপ করে গ্রীন টি পান করলে শরীর থেকে ৪০০-৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ক্যালরী ক্ষয় করা সম্ভব। এটিই আমাদের দেহের ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে ।

 

# সিদ্ধ শাক সবজি :

সিদ্ধ শাক সবজি গ্রহণে শুধু যে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে আসবে তা না । এর আরেকটি গুণ রয়েছে সিদ্ধ শাক সবজি প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখলে আপনার তারুন্যতা ধরে রাখতে ও চুলের পুষ্টি যোগাতে এর ভূমিকা অনন্য। ক্যালরীর পরিমাণ তূলনামূলক কম হওয়ায় একট বেশি গ্রহণ করলেও ক্ষতি নেই ।

 

ভোরের আকাশ/অ

মন্তব্য

Beta version