-->
শিরোনাম

ডিপফেকের শিকার তারকা থেকে রাজনৈতিক নেতারাও

অর্পিতা জাহান
ডিপফেকের শিকার তারকা থেকে রাজনৈতিক নেতারাও

অর্পিতা জাহান: বর্তমান সময়ে ডিপফেক প্রযুক্তির শিকার হচ্ছেন তারকা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতারাও । কিন্তু এই ডিপফেক কি ? ডিপ মানে গভীর, ফেইক মানে নকল । এর পুরো অর্থ, কোন বিদ্যমান ছবি বা ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিকে অন্য কারো মতো করে কন্ঠ, মুখমন্ডল এমনকি শরীর পর্যন্ত বদলে ফেলার নামই ডিপফেক ।

 

এই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে শক্তিশালী কৌশল ব্যবহার করে ভিজ্যুয়াল এবং অডিও কন্টেন্ট তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । এটা এমন একটা প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে অনায়াসে মিথ্যাকে বিশ্বাসযোগ্য সত্যিতে রুপান্তরিত করা যায়। আরও বোধগম্য করে বলতে গেলে কাউকে বা কোন কিছু নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো বা কোন ব্যক্তিকে ভূলভাবে উপস্থাপন করাই ডিপফেক । এই ভিডিওগুলো তৈরির জন্য ব্যবহৃত প্রধান মেশিন লার্নিং পদ্ধতিগুলো, ডিপ লার্নিং এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। এর সঙ্গে অটোএনকোডাল বা জেনারেটিভ অ্যাডভারসারিয়াল নেটওয়ার্ক এর মত জেনারেটিভ নিউরাল নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার লার্নিং রয়েছে ।

 

এই প্রযুক্তির ভিডিও গুলো এতটাই নিখুঁত ভাবে তৈরি করা হয় যে, বোঝার উপায় থাকে না । আর এই ফেক ভিডিওর কবলে শুধু মেয়েরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । যেখানে ডিপফেক চাইল্ড পণগ্রার্ফী, সেলিব্রেটি পর্নোগ্রাফী ভিডিওর প্রতারণা, হুমকি, অর্থ জালিয়াতী ও রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে নারীরা। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনই কিছু ভিডিও ও ছবি ভাইরাল হয়েছে, যেখানে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর থেকে শুরু করে বলিউড হলিউড অভিনেত্রীদের দেখা যাচ্ছে। সেই তালিকায় অভিনেত্রী কাজল, রাশ্মিকা মান্দানা এবং এখন আলিয়াও রয়েছেন । সম্প্রতি তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে বেশ খোলামেলা পোশাকে তাকে অদ্ভুত ও বাজে অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা গিয়েছে। যদিও এটি ডিফফেকের তৈরী, তবে তা বোঝার কোন উপায় নেই ।

 

এই ডিপফেক প্রযুক্তির অপব্যবহারের রাষ্ট্র ও সমাজে যে বিষয়গুলো হুমকিতে পড়তে পারে ?

 

যে কোন একটা তথ্য যত তাড়াতাড়ি স্যোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়ানো যায়; তা অন্য কোন মাধ্যমে ছড়ানো যায় না। যেমন কোন এক রাষ্ট্রনেতার ইতিবাচক বক্তব্যকে ডিপফেক খুব সহজেই নেতিবাচক মন্তব্যতে রুপান্তরিত করে স্যোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিতে পারে। যার ভয়াবহ প্রভাব পড়বে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে। আগে আর যাই হোক কন্ঠ নকল করা যেত না তেমন। কিন্তু বর্তমানে হুবহু কন্ঠও নকল করা যাচ্ছে। যা এই ডিপফেক প্রযুক্তি সম্ভব করেছে। আর যখন চেহারা ও কন্ঠ একেবারে হুবহু মিলে যায় তখন মানুষ সেই তথ্যকে বিশ্বাস করতে বাধ্য।

 

এই প্রযুক্তির অপব্যবহারের অন্যতম টার্গেট হচ্ছে নারীরা । যেখানে পর্ণগ্রাফীর ভিডিওতে কোন পরিচিত মুখমন্ডল স্থাপন করে বানিয়ে ফেলে ওই নারীর ফেক ভিডিও। যা খুব বাজে ভাবে এফেক্ট পড়ে ওই নারীর ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে ।

 

এই প্রযুক্তির অপব্যবহারে ধর্ণাঢ্য ব্যক্তি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের গোপনীয়তা পড়বে, নিঃসন্দেহে চরম ঝুঁকিতে । কোন বিষয় গোপন রাখার আর জায়গা থাকবে না। কিছু বোঝার আগে মানুষের ব্যাংকিং লেনদেন, অর্থের পরিমাণ, ঋণের তথ্য, ডেবিট ক্রেডিট কার্ডের গোপন নাম্বারও প্রকাশ পেয়ে যাবে এবং তার একাউন্ট খালি হয়ে যাবে মুহুর্তেই । এমন কি ব্যক্তির বিভিন্ন একাউন্টের আইডিও পাসওয়ার্ড হ্যাক করে তাকে ব্ল্যাকমেইলের শিকার করে হাতিয়ে নিতে পারেন মোটা অংকের অর্থ।

 

এই ডিপফেক প্রযুক্তির অপব্যবহারের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না মৃত ব্যক্তিরাও । তাদের নিয়ে ছবি ও ভিডিও তৈরি হয়েছে । যেমন বেশ কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের জনপ্রিয় প্রয়াত তারকা সালমান শাহ্ এর কিছু ছবি ভাইরাল হয়েছিলো, যা দেখে তার ভক্তরা খুশি হলেও আপত্তি ছিলো তার পরিবারের ।

 

এআই এর প্রযুক্তি ভালো অর্থে তৈরী হলেও সমাজের গুটি কয়েক অসাধু লোক নিয়ে গেছে চরম নেতিবাচক পর্যায়ে। যা পুরো বিশ্বের জন্য নিঃসন্দেহে হুমকিস্বরুপ। এখনই সময় ভিডিওর অন্তরালে লুকিয়ে থাকা অসাধু ব্যক্তিদের পাকড়াও করে আইনের আওতায় নেওয়া এবং সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা।

 

ভোরের আকাশ/অ

মন্তব্য

Beta version