-->
করোনা

সপ্তাহের ব্যবধানে হাসপাতালে দ্বিগুণ রোগী

নিখিল মানখিন
সপ্তাহের ব্যবধানে হাসপাতালে দ্বিগুণ রোগী

দৈনিক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনা রোগীর হার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ হার বেড়ে ৮ থেকে ১৬ শতাংশ হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শারীরিক জটিলতা না বাড়লে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না করোনা রোগীরা। শারীরিক জটিলতায় ভোগা করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে বলে মনে করছেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. মো. জাকির হোসেন খান বলেন, দৈনিক শনাক্তকৃত মোট করোনা রোগী ও হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা ২৮ জানুয়ারি যথাক্রমে ১৫ হাজার ৪৪০ ও ২ হাজার ৬২৪; যা দৈনিক মোট আক্রান্তের বিপরীতে দৈনিক ভর্তি হওয়া করোনা রোগীর হার ১৬.৯৯ শতাংশ। এভাবে দৈনিক মোট আক্রান্তের বিপরীতে দৈনিক ভর্তি হওয়া করোনা রোগীর হার যথাক্রমে ২৭ জানুয়ারি ১৬.২৯ এবং ২৬ জানুয়ারি ১৬.২৮ শতাংশ। গত ১০ থেকে ১৭ জানুয়ারির মধ্যে এ হার ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছিল বলে জানান ডা. জাকির হোসেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশের করোনা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু করোনার রোগীদের মধ্যে হাসপাতালে না যাওয়ার প্রবণতা তেমন বাড়েনি। নিজেদের সুস্থ ভেবে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে উপসর্গহীন করোনা রোগীরা। স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। সাধারণ মানুষের আচরণে মনে হবে দেশ থেকে যেন করোনা বিলীন হয়ে গেছে। সর্বত্র বিরাজ করছে স্বাভাবিক অবস্থা। এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে দেশের করোনা পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাই দৈনিক মোট আক্রান্তের তুলনায় হাসপাতালে যাওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা এখনো খুবই কম। জটিল অবস্থায়ও অনেক করোনা রোগী হাসপাতালে যেতে চায় না বলে জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দৈনিক শনাক্তকৃত করোনা রোগী সংখ্যার বিপরীতে সুস্থ হওয়া করোনা রোগীর হার মাত্র ৬ থেকে ৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিদিন দেশে রয়ে যাচ্ছে দৈনিক শনাক্তকৃত রোগীর প্রায় ৯৬ শতাংশ। এতে রোগীর চাপ তীব্র হওয়ার কথা থাকলেও সারা দেশের মোট কোভিড সাধারণ শয্যার প্রায় ৮৪ শতাংশই খালি থাকছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ ভোরের আকাশকে বলেন, প্রতিদিন দৈনিক শনাক্তকৃত করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা খুবই কম। প্রায় ৮০ শতাংশ কোভিড সাধারণ শয্যা খালি পড়ে আছে। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালমুখী করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শারীরিক জটিলতা না বাড়লে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না করোনা রোগীরা। শারীরিক জটিলতায় পড়া করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ার কারণেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিষয়টির মনিটরিং জোরালো করার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, গত ডিসেম্বরে হাসপাতালগুলোয় তেমন করোনা রোগী ছিল না। বেডগুলো ছিল রোগী শূন্য। জানুয়ারির শুরুতেই বাড়তে থাকে দৈনিক শনাক্তের হার। শনাক্তের হার বেড়ে ৩০ শতাংশ অতিক্রম করলেও হাসপাতালে যাওয়া রোগীর সংখ্যা উল্লেখ করার মতো ছিল না। গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা বেশ বেড়েছে। তবে এটা ভালো চোখে দেখা যাবে না। শারীরিক জটিলতায় পড়ছে বলেই রোগীরা হাসপাতালে যাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, সব করোনা রোগীকে হাসপাতালে যেতে হয় না। আবার জটিল অবস্থা নিয়ে বাসায় বসে থাকাও ঠিক হবে না। যারা বাসায় থাকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তারা বাসায় থাকলেও একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। না হলে তারা বুঝতে পারবেন নাÑ অবস্থার অবনতি হচ্ছে কিনা। উপসর্গ ও শরীরের অবস্থা বুঝে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মুস্তাক হোসেন।

দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজস্টি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়ে একাধিক উপসর্গ নিয়ে বাসায় বসে থাকা যাবে না। বাসায় চিকিৎসাধীন রোগীদের মনিটরিং করতে হবে। করোনা পরীক্ষার পর যদি পজিটিভ রেজাল্ট আসে, তবে সঙ্গে সঙ্গে তাকে আইসোলেশনে নিয়ে যেতে হবে। যার পজিটিভ তার সংস্পর্শে যারা আসবে, তাদের কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে যেতে হবে। যাদের শরীরে শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য লক্ষণ থাকবে, তাদের অবশ্যই হাসপাতালে পাঠাতে হবে। প্রয়োজনে অবশ্যই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে বলে জানান ডা. নজরুল ইসলাম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বুঝতে হবে, করোনা রোগীরা অনেক আগেই হাসপাতালবিমুখ হয়ে পড়েছে। শারীরিক অবস্থার অবনতি না ঘটলে তারা হাসপাতালে যেতে চায় না। কেউ কেউ বিছানা থেকে উঠতে না পারলেও হাসপাতালের কথা মুখে আনে না। তাই বর্তমানে হাসপাতালমুখী করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির অর্থ হলোÑ করোনা রোগীদের অনেকের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

মন্তব্য

Beta version