-->
শিরোনাম

মুক্তমঞ্চে প্রাণের উৎসব

যোবায়ের আহমদ, ঢাবি
মুক্তমঞ্চে প্রাণের উৎসব

`বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা, কারা যে ডাকিল পিছে, বসন্ত এসে গেছে। মধুর অমৃতবাণী, বেলা গেল সহজেই, মরমে উঠিল বাজি, বসন্ত এসে গেছে’—এমন সুরের অনুরণনে ফাগুনের প্রথম দিনে সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে বসন্ত উদযাপনে শুরু হয়েছে নানা আয়োজন।

ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে পলাশ, শিমুলসহ বর্ণিল ফুলে সেজে উঠেছে প্রকৃতি। সেই রঙের ছোঁয়া যেন লেগেছে সবার মনে। হলুদ, বাসন্তী রঙের শাড়ি, পাঞ্জাবি এবং রঙিন ফুলে নিজেকে সাজিয়ে নানা বয়সের মানুষ হাজির হয়েছেন উদ্যানের মুক্তমঞ্চে। গানের তালে তালে চলছে নৃত্য পরিবেশনা। সেইসঙ্গে আবৃত্তি, লোকগান মাতিয়ে রেখেছে সবাইকে। এ যেন এক প্রাণের উৎসব।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং পহেলা ফাল্গুন মিলিয়ে উদ্যানে বাংলা একাডেমির মুক্তমঞ্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসহ পুরো ক্যাম্পাস বর্ণিল রঙে সেজেছে আজ। বসন্তকে বরণ করতে শাহবাগের ফুলের দোকান, বিপণিবিতানে লাল-হলুদের আভা। চারিদিকে হলুদের মেলা, তরুণ-তরুণীদের দেখা যাচ্ছে হলুদ, কমলা ও বাসন্তী রঙের পোশাকে। টিএসসি, হাকিম চত্বর, লাইব্রেরি, অপরাজেয় বাংলা, বিজনেস ফ্যাকাল্টি, শ্যাডো, কার্জন হল, অ্যানেক্স ভবন, শহীদ মিনারসহ পুরো এলাকায় বাসন্তী সাজ।

নারীরা নিজেদের বসন্তের সাজে সাজাতে খোপায়-গলায়-মাথায় পরেছে গাঁদা ফুলের মালা। হাতে রেশমি চুড়ি আর পরনে বাসন্তী রঙ্গের শাড়ি। পুরুষদের পরনেও শোভা পাচ্ছে রঙিন পাঞ্জাবি, ফতুয়া। সব মিলিয়ে প্রকৃতি আর মানুষ বসন্তের আমেজে মিলেমিশে একাকার। এমন সাজে রাঙা মন গেয়ে উঠে, ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে বসন্ত বরণ উৎসব
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে বসন্ত বরণ উৎসবে শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনা

 

মহামারি করোনার বিধিনিষেধের কারণে প্রতিবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় বসন্ত বরণ না হলেও দীর্ঘ দুই বছর পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন্দ্রীয়ভাবে এই উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ।

আবৃত্তি শিল্পী রনি ও শিরীনের সঞ্চালনায় বেঙ্গল পরম্পরা এসরাজ বিভাগের শিক্ষার্থী শুক্লা হালদার, ইসমত আরা রুচি, নিলয় হালদার, সৈনিক দেবনাথ ঋক রাগ বসন্ত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উৎসবের শুরু হয়। উৎসবে সংগীত পরিচালনায় রয়েছেন দেবাশীষ হালদার, সঙ্গে রয়েছেন প্রশান্ত ভৌমিক।

‘এসো মিলি প্রাণের উৎসব’ স্লোগানে সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো উদ্যানে। সকাল ১০টা পর্যন্ত সেখানে চলে বসন্তের আবাহন।

অনুষ্ঠানে একক আবৃত্তি পাঠ করেন ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়, আহকাম উল্লাহ ও নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি।

একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শামা রহমান, মহাদেব ঘোষ, অনিমা মুক্তি গমেজ, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, বিজন চন্দ্ৰ মিস্ত্রি, মাহমুদুল হাসান, ফেরদৌসি কাকলি, নুসরাত বিনতে নূর, নবনীতা জাইদ চৌধুরী, সঞ্জয় কবিরাজ, এস.এম মেজবা।

দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুরসপ্তক, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, সুরবিহার (শিশু-কিশোর)।

দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন স্বপ্ন বিকাশ কলা কেন্দ্র, সাধনা সংস্কৃতি মন্ডল, নৃত্যম, ধ্রুপদ কলা কেন্দ্র, ভাবনা, বৃতি নর্তনালয়, স্পন্দন, নৃত্যাক্ষ, কথক, ঢাক নৃত্য, নূরুন পারফরমিং আর্ট, নবচেতনা, মুদ্রা ক্ল্যাসিক্যাল ডাল, পুষ্পাগুলি কলা কেন্দ্র ও ২টি দ্বৈত নৃত্য।

মুঘল সম্রাট আকবর কর্তৃক ১৫৮৫ সনে ১৪টি উৎসব প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে বসন্ত বরণ উৎসবের জন্ম। ষাটের দশকে ফাল্গুনের প্রথম ছুটির দিনে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছিল ছায়ানট।

স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বসন্ত উৎসব উদযাপন হয় ১৯৯৪ সালে। জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের হাত ধরে ১৪০১ বঙ্গাব্দের পহেলা ফাগুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারকলার বকুলতলায় উদযাপন শুরু হয় এই উৎসবের। এরপর থেকে প্রতিবছর উৎযাপিত হয়ে আসছে এই উৎসব।

অতীতের মতো উত্তরা, ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবর ও পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক এর অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। এমনকি বিকেলের যে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় সেটিও বাতিল করা হয়েছে।

মন্তব্য

Beta version