-->
শিরোনাম

প্রাণের বইমেলা শুরু আজ

ইফ্ফাত শরীফ
প্রাণের বইমেলা শুরু আজ

বাঙালির প্রাণের উৎসব ৩৮তম অমর একুশে গ্রন্থমেলার দুয়ার খুলছে আজ । চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেল তিনটায় ভার্চ্যুয়ালি বইমেলার উদ্বোধন করবেন। করোনার সংক্রমণের কারণে ১ ফেব্রুয়ারিতে শুরু করা না গেলেও দুই সপ্তাহ দেরিতে গ্রন্থমেলা বসছে।

বইমেলা–২০২২ উপলক্ষে সোমবার বেলা ১১টায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। এতে সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত মেলা হবে।

দুই সপ্তাহের জন্য হলেও মেলাকে ঘিরে বইপ্রেমীদের উৎসাহের কমতি নেই। তবে উৎসাহের পাশাপাশি রয়েছে নানা শঙ্কাও। এ শঙ্কা যেমন বইমেলার সময়সীমাকে নিয়ে। যদিও আশার বাণী শুনিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি বলেছেন, করোনা সংক্রমণের কমতে থাকলে সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে।

প্রাণঘাতী করোনার ছোবলে গত বছর নির্ধারিত ফেব্রুয়ারিতে মেলা করতে পারেনি বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। তবে মার্চে মেলা বসলেও সেভাবে জমেনি। তবে এবার শেষ পর্যন্ত বাংলা ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতেই বসছে মেলা। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। গ্রন্থমেলা নিয়ে প্রস্তুতি অনেকটাই শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ। সময় কম থাকায় যে যত দ্রুত পারেন কাজ শেষ করতে চাচ্ছেন। মেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে সেজেছে নবরূপে।

কবিতা প্রকাশনা নামের একটি স্টল প্রথমবার অংশ নিচ্ছে গ্রন্থমেলায়। এর স্বত্বাধিকারী নজরুল হায়দার ভোরের আকাশকে জানান, প্রথম হিসেবে এবারের গ্রন্থমেলায় আমি অনেক আশাবাদী। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমাদের স্টলের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ‘শত কবিতা বঙ্গবন্ধু’। বইটি লিখেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

তবে গত বছর সময়মতো মেলা না বসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রকাশকরা। এবারো যদি তেমন হয়, তাহলে প্রকাশকরা আবারো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মেলার অর্ধেক সময় ধরে করার কারণে অনেক প্রকাশ লোকসানের চিন্তা করছে। প্রকাশকেদের দাবি মেলার সময়টা যদি ১৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়, তাহলে প্রকাশকরা উপকৃত হবেন। প্রকাশকরা বলছেন, মেলার যদি সময় বাড়ানো যায়, তাহলে তারা কিছুটা হলেও লোকসান থেকে মুক্তি পাবে।

মেলায় বহুদিন ধরে অংশগ্রহণ করা ‘হাতেখড়ি’ প্রকাশনা এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে তাদের স্টল দিয়েছে। এ প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী মো. আবু তাহের ভোরের আকাশ কে জানান, এবারের গ্রন্থমেলায় একটাই চিন্তা। এ করোনা মহামারির কারণে পাঠাকরা ঠিকমতো আসবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। আমাদের প্রকাশনীতে বেশিরভাগই পুরোনো বই। তবে মুক্তিযুদ্ধের ওপর তিনটি নতুন বই এসেছে। আশা করছি, এটি আমাদের পাঠকদের মুক্তিযুদ্ধের সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য দেবে।

বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে অনেকগুলো স্টলের মধ্যে আমরা ক’জন মুজিব সেনা নামের ৭১৪নং স্টলটিতে এবারের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু’ বইটি। এ বছর বইটির তৃতীয় সংস্করণ বের হয়েছে। আমরা ক'জন মুজিব সেনা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু তোহা জানান, বঙ্গবন্ধু যখন দেশে ফিরেন, তাকে অভর্থনা দিতে সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব কমেটি ছিল এবং সে সময়ের ডাকসুর ভিপিরদের বক্তব্য নিয়ে লেখা হয়েছে এ বইটি। এ বইটিতে বঙ্গবন্ধু কন্যারও সাক্ষাৎকার আছে।

গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য রয়েছে বেশকিছু পুরস্কার। এর মধ্যে ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা’ স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হবে। ‘মুনীর চৌধুরী’ স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হবে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে। ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই’ স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হবে গুণগতমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে। ‘কাইয়ুম চৌধুরী’ স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হবে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে।

মেলা শুরুর আগের দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্রন্থমেলা নিরাপত্তা অবস্থা পর্যবেক্ষণে এসে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম জানান, যারা বিক্রেতা বা স্টলে বসবেন তাদের করোনা টিকা সনদ সঙ্গে রাখতে হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে মাস্ক ছাড়া কেউ মেলায় ঢুকতে পারবে না। মেলায় তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র রাখা হবে। শতভাগ মাস্ক পরিধান নিশ্চিতে মোবাইল টিম থাকবে। কারো মাস্ক না থাকলে তাকে জরিমানার ব্যবস্থা করা হবে।

এবারের গ্রন্থমেলায় মেলায় ৩৫টি প্যাভিলিয়ন থাকবে। মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি ইউনিট এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে গ্রন্থমেলা। তবে দর্শনার্থীরা রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন এবং রাত ৯টায় মেলার আলোকবাতি বন্ধ করে দেওয়া হবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারসহ অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে মেলা বেলা ১১টায় শুরু হবে। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে মেলা। গ্রন্থমেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। মেলার এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে।

মন্তব্য

Beta version