-->

সংবাদপত্রের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
সংবাদপত্রের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ

ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকে সংবাদপত্রে ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় সব পত্রিকায় এই আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছে। আন্দোলনে যৌক্তিকতা তুলে ধরে সংবাদ পরিবেশ করেছে। আবার কিছু কিছু সরকার সমর্থিত পত্রিকা মিথ্যা ও বিভ্রান্তিক সংবাদ পরিবেশে করে জনমনে প্রভাব ফেলার চেষ্টাও করেছে, কিন্তু তারা সফল হয়নি। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই ঢাকার রাজপথ উত্তাল হয়ে ওঠে। ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বের করা মিছিলে গুলিবর্ষণ করলে সালাম, রফিক, জব্বার বরকতসহ অনেকেই নিহত হন।

গুলিবর্ষণের প্রতিক্রিয়া সংবাদপত্র-সাংবাদিক মহলকেও স্পর্শ করে। কুখ্যাত ইংরেজি দৈনিক (ঢাকাই নবাবদের পত্রিকা) ‘মর্নিং নিউজ’ বাদে তখনকার গুটিকয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক ঘটনার বিবরণ সঠিকভাবেই ছাপে। সরকারপন্থি দৈনিক ‘সংবাদ’ লেখে: ‘পাকিস্তানের অধিকাংশ নাগরিকের রাষ্ট্রভাষা বাঙলা। এই ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা না দিলে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ উন্নতি ব্যাহত হইবে।

মওলানা আকরম খাঁর মালিকানায় মুসলিম লীগের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত দৈনিক ‘আজাদ’ তার রক্ষণশীল পূর্বভ‚মিকা থেকে কিছুটা সরে আসে, সম্পাদকীয় লেখে ‘তদন্ত চাই’। তাতে অবশ্য দুই দিক রক্ষা করে চলার প্রবণতা লক্ষ করার মতো। তবে পত্রিকার সম্পাদকীয়তে দুই কূল রক্ষার প্রবণতা সত্তে¡ও সংবাদ পরিবেশন সঠিকই ছিল। ‘আজাদ’ তখন সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিক। ‘পাকিস্তান অবজারভার’ নিষিদ্ধ। সে অবস্থায় আজাদ পরিবেশিত খবরাদি গোটা দেশের মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে যায়। এর পরই জনপ্রিয়তার দিক থেকে সাপ্তাহিক ‘ইত্তেফাক’ সঠিক সংবাদ ও মতামত পরিবেশনে আন্দোলনের জন্য সহায়ক হয়ে ওঠে।

তাতে করে ‘মর্নিং নিউজ’-এর মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণা জনমনে প্রভাব ফেলতে পারেনি। প্রসঙ্গত, স্মর্তব্য, ‘মর্নিং নিউজ’-এর সাম্প্রদায়িকতা-দুষ্ট প্রচার-‘ঢোটিস রোমিং ঢাকা স্ট্রিটস’ ‘ভাবখানা যে ধুতিপরিহিত জনগোষ্ঠীই এ আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট। এ ধরনের মিথ্যা বিভ্রান্তিকর ও সাম্প্রদায়িক মানসিকতার সংবাদ ও সম্পাদকীয় ‘মর্নিং নিউজ’ আগাগোড়াই পরিবেশন করেছে। ‘ইনসাফ’ তার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আন্দোলনের সঠিক বিবরণ এবং নির্ভীক সম্পাদকীয় লিখতে পেরেছে। সম্পাদকীয় শিরোনাম ‘বিচার চাই’। সাপ্তাহিক ‘ইত্তেফাক’ও ‘বিচার চাই’ শিরোনামের সম্পাদকীয়তে লেখে, ‘দেশের অযুতকণ্ঠের সঙ্গে কণ্ঠ মিলাইয়া আমাদের ঘোষণা শুধু ছাত্রজনতার ঘাতক সরকারি কর্মচারীদের নয়, এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের হোতা সরকারের বিচার চাই প্রকাশ্য গণআদালতে। সাপ্তাহিক ‘নওবেলাল’-এর সম্পাদকীয় আবেগ জড়িত-‘বুলেটের মুখে গেয়ে গেল যারা’।

এতে বলা হয় ‘ঢাকার বুকে যাহারা জালিনওয়ালা বাগের পুনরাভিনয় করিল তাহাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশের ভাষা আমাদের নাই’ ইত্যাদি।

একই রকম আবেগের প্রকাশ সাপ্তাহিক ‘সৈনিক’-এর প্রতিবেদনে শিরোনাম ‘শহীদের তাজা রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত’। মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে ছাত্র সমাবেশে নির্বিচারে পুলিশের গুলিবর্ষণ। ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘চাষী’ পত্রিকাটি একুশের ঘটনাবলি নিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি বিশেষ সংখ্যা বের করেছিল। এই প্রথম পশ্চিম পাকিস্তানি প্রভাবশালী পত্রিকা ‘ডন’ সম্পাদকীয় নিবন্ধে লেখে, ‘বাংলা ভাষাকে উর্দুর সমমর্যাদা দেওয়া হইলেও পশ্চিম পাকিস্তানে জনসাধারণের মোটেই আপত্তি থাকিতে পারে না।’

মন্তব্য

Beta version