-->
শিরোনাম

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরাতে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই

তরিকুল ইসলাম
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরাতে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণের।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে কানাডায় অবস্থানরত নূর চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফেরাতে এরই মধ্যে আইনি পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে সরকার।

ধারণা করা হচ্ছে, মোসলেম উদ্দিন জার্মানিতে অবস্থান করছেন। শরিফুল হক ডালিমের অবস্থান সর্বশেষ স্পেনে নির্ণয় করা গেলেও এ নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াসা। তিনি কখনো লিবিয়া অথবা জিম্বাবুয়েতেও অবস্থান পাল্টাচ্ছেন। আরেক খুনি খন্দকার আবদুর রশিদ পাকিস্তান নাকি আফ্রিকার কোনো দেশে অবস্থান করছেন সেটিও পরিষ্কার নয়। তার বিষয়েও নেই কোনো অগ্রগতি।

স্বাধীনতার পরাজিত শত্রু ও তাদের দেশি-বিদেশি দোসরদের ষড়যন্ত্রে ঘাতকের বুলেটে নির্মমভাবে নিহত হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এ ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ সময়। খুনিদের ফেরাতে কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি চলছে আইনি প্রক্রিয়া। তবু দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না থাকায় খোদ সরকারের মধ্যেই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। তাকে ফেরত আনার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

দৈনিক ভোরের আকাশকে তিনি বলেন, ‘রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানোর আইনি প্রক্রিয়া চলমান আছে। তাকে ফেরাতে পারব বলে আমাদের বিশ্বাস। যুক্তরাষ্ট্রে তার নাগরিকত্বের বিষয়ে আদালতে একটি শুনানি চলমান রয়েছে। আশা করি, তার নাগরিকত্ব বাতিলের রায় আসবে। তখনই আমরা আরো একধাপ এগিয়ে যাব।

তিনি বলেন, ‘রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দেওয়ার জন্য ২০১৮ সালে দুইবার এবং ২০২০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে একবার চিঠি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া আমি নিজেও যখন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার কারোর সঙ্গে কথা বলি, তাদের কাছেও রাশেদ চৌধুরীকে ফেরাতে সহযোগিতা চেয়েছি। তারা শুধু আইনের কথা বলেন।’

এদিকে গত বুধবার ঢাকায় নবনিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলসের সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে আমরা ফেরত চেয়ে বলেছি- তোমরা তাকে আশ্রয় দিয়েছো। পৃথিবীর সব খুনিকে আশ্রয় দেওয়ার স্থান কানাডা হওয়া উচিত নয়। এই লোকটাকে ফেরত দিয়ে বদনাম থেকে তোমরা মুক্ত হও।’

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরানোর অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, একজন কানাডায় এবং আরেকজন যুক্তরাষ্ট্রে আছে। তাদের আনার জন্য যা যা প্রচেষ্টা, আমরা সেটি চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা যখনই তাদের (রাষ্ট্রদূত) সঙ্গে আলাপ করি, এ বিষয়টি উত্থাপন করি।’

কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস বলেন, ‘নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা বুঝতে পারি, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে আমার সরকারকে বিষয়টি জানাব।’

বিদেশে অবস্থানরত খুনিদের ফেরাতে কোন পথে বাংলাদেশ। এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে কাজ তার মধ্যে টপ ইস্যু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দণ্ড পাওয়া খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করা। কিন্তু আনফরচুনেটলি ফিরিয়ে আনার বিষয়টা এতটাই জটিল যে গত কয়েক বছরে কাউকেই বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে পারিনি। এই বিষয়টা আমাদেরকে পীড়া দেয়।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে এবং কানাডায় দুইজনের অবস্থান অনেক আগেই শনাক্ত করা হয়েছে। আমরা জেনেছিলাম খন্দকার আবদুর রশিদ পাকিস্তানে একজন ছিলেন। রিপিটেডলি পাকিস্তান সরকারকে বলা হলেও তারা ডিনাই করেছে। অন্য আরেকজন ইউরোপের একটি দেশে আছেন বলে জেনেছি।

‘সেদিকে আমরা জোরালো দৃষ্টি রাখছি কিন্তু এখনো উল্লেখযোগ্য কিছু পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া শরিফুল হক ডালিমের ক্ষেত্রে আফ্রিকার একটি দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের কথা শুনতে পাচ্ছি। আসলে তাদের ক্ষেত্রেও এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই।’

রাশেদ চৌধুরী এবং নূর চৌধুরীর ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা এগিয়েছি উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘অন্যদের বিষয়েও আমাদের আরো কাজ করতে হবে। আশা করি- খুব দ্রুতই আমরা তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারব।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় কানাডার সরকারকে বাংলাদেশ বারবার অনুরোধ করলেও নূর চৌধুরীকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কোনো সাড়া দেয়নি দেশটি। এজন্য গত বছরে কানাডার ফেডারেল আদালতের মাধ্যমে এর মীমাংসা করতে সেখানে আইনি পরামর্শক নিয়োগ করেছে সরকার।

অন্যদের বিষয়েও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। কিন্তু দেশগুলোর আইনি জটিলতা থাকায় এবং তাদের আন্তরিকতার অভাবে খুব একটা গতি আসছে না।

বিদেশে পলাতক সব খুনির অবস্থান এখনো চিহ্নিত করতে না পারায় এ নিয়েও একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের অবস্থান নিশ্চিত ও তাদের ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করার সুপারিশ করা হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়।

এ ছাড়া বিদেশে অবস্থানরত খুনিদের ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত তারা যেন স্বাভাবিকভাবে বসবাসের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট দেশে কারান্তরীণ রাখা হয়, সে বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারকে অনুরোধ জানানোর সুপারিশ করা হয়।

মন্তব্য

Beta version