# দাপ্তরিক ভাষার ক্ষেত্রে আপত্তি নেই জাতিসংঘের # শর্ত অনুযায়ী প্রতি বছর দিতে হবে ৫ হাজার কোটি টাকা # অর্থের জন্য এগুতে পারেনি জাপান, জার্মান ও ভারত
বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল বাংলাদেশ। বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘেরও ছিল না কোনো আপত্তি। কিন্তু এটি কার্যকর করতে হলে বাংলাদেশকে প্রতি বছর ৫ হাজার কোটি টাকা দিতে হবে জাতিসংঘকে। জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার প্রক্রিয়া ‘নিজস্ব অর্থায়নের’ শর্তের কারণেই মূলত থমকে গেছে প্রক্রিয়াটি।
জাতিসংঘ গঠনের শুরুতে পাঁচটি ভাষা ছিল। পরে জাতিসংঘের দাপ্তরিক কাজে যুক্ত হয় আরবি। এরপর প্রায় ১৯ বছর আরবি ভাষাভাষী দেশগুলো মিলে এর খরচ বহন করছে। এ ছাড়া জাপান, জার্মান ও হিন্দি ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল। আর্থিক কারণে ওই তিন ভাষাও জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক ভাষা হতে পারেনি।
বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ভোরের আকাশকে বলেন, ‘একজন বাঙালি হিসেবে আমিও চাই বাংলা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হোক, এটা আমারও প্রত্যাশা।’ বাস্তবতা হলো- বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করতে হলে প্রতি বছর ৬০০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। জাতিসংঘে এর যাবতীয় খরচ সংশ্লিষ্ট দেশকে বহন করতে হয়। একদিন হয়তো আমরাও সেই সক্ষমতা দেখাতে পারব।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইতোমধ্যে আমাদের যে অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে, হয়তো আমরা এই খরচ বহনও করতে পারব। কিন্তু এই খরচটা যুক্তিকে ক্ষুণ্ন করবে কিনা সেটাও একটি বিষয়। বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে, ২১ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর সমস্ত দেশ ও হাজার-হাজার জায়গায় পালন হয়। বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে নিয়ে যেতে পেরেছি এটাও আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তির।’
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, প্রাথমিক আলোচনায় প্রতি বছর ৬০০ মিলিয়ন ডলার (৫ হাজার কোটি টাকা) দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আমরা টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করতে পারিনি। টাকার জন্যই মূলত এই প্রক্রিয়া আটকে আছে। এটা অনেক টাকা!
ভাষাভাষীর দিক থেকে বাংলা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা। প্রায় ২৭ কোটি লোক এই ভাষায় কথা বলে জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, জাতিসংঘ আমাদের বলেছে, তোমাদের বাংলা চালু করলে তো খরচ হবে, খরচটা কে দেবে? তোমরা যদি দাও, তাহলে তোমরা সদস্যরাষ্ট্রকে বলো, তাহলে অসুবিধা নেই।
জাতিসংঘে আমাদের এসব বিষয় বলার পরে কিছুটা সুবিধা হয়েছে। আমরা এখন একটা বাংলা রেডিও পেয়েছি, প্রত্যেক সপ্তাহে অনুষ্ঠান করে। এশিয়ার ওপর ইউএনডিপির যে রিপোর্টটা হয়, সেটা তারা ইংরেজির সঙ্গে বাংলাও করে, তাদের পয়সায়। এ জন্য আমরা তাদের কোনো পয়সা দিই না।
জাতিসংঘ সবসময় খরচ নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন থাকে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যখন অনেক টাকা-পয়সা হবে তখন আমরা এই প্রক্রিয়াতে যেতে পারব। কিন্তু এখন আমাদের জন্য এই কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ-সুবিধা নেই।’
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোতে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।
২০১০ সালের ২১ অক্টোবর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে পাস হওয়া সর্বসম্মত এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এখন থেকে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ।
মন্তব্য