# ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে প্রথম ডোজের আওতায় আনতেই এই কার্যক্রম # মৃত্যুঝুঁকি কমায়, সে কারণে টিকায় গুরুত্ব
একদিনে সারা দেশে ১ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার টার্গেট সরকারের। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চলবে এ টিকা কার্যক্রম। বিকেল ৩টার মধ্যে কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়ানো ব্যক্তিরা সবাই টিকা দেওয়ার
সুযোগ পাবেন। কেন্দ্রে গেলেই নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত সবাই নিতে পারবেন প্রথম ডোজ টিকা। নির্ধারিত সময়ের পরও যদি লাইনে টিকা প্রত্যাশীরা থাকেন, তাদেরও টিকা দেওয়া হবে। তবে বিশেষ কোনো কারণে যদি কেউ টিকা নিতে
না পারেন, তাকে বিশেষ ব্যবস্থায় পরবর্তী সময়ে টিকা দেওয়া হবে।
গণটিকা কার্যক্রম সফল করার জন্য ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালিয়েছে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। টিকা নিতে উৎসাহিত করে মোবাইল ফোনে এমএমএস দেওয়া হয়েছে। করা হয়েছে শোভাযাত্রা।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিংও করা হয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে একদিনে সাড়ে ৬৭ লাখ লোককে টিকা দেওয়া হয়। এর পরই এই সর্বোচ্চ টার্গেট- ‘একদিনে ১ কোটি কোভিড-১৯ টিকাদান
কার্যক্রম’। চলমান মহামারি নিয়ন্ত্রণে মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে প্রথম ডোজের আওতায় আনতে এই কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এই বিশেষ কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে সরকার
দেশের সবাইকে প্রথম ডোজ টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। পরে দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ প্রদান কার্যক্রমও জোরদার করা হবে। সরকার সারা দেশে অতিরিক্ত অস্থায়ী কেন্দ্র স্থাপনের
মাধ্যমে টিকা প্রয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, গ্রামাঞ্চলে ন্যূনতম ১৬ হাজার ও শহরাঞ্চলে (পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন) ৮ হাজার ৫০০টি অস্থায়ী টিকা কেন্দ্রের মাধ্যমে টিকা প্রদান করা
হবে। কর্মসূচি সফল করতে প্রায় ৭০ হাজারের মতো ভ্যাক্সিনেটর ও স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে প্রয়োজন অনুযায়ী সব ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা,
বিভাগে চাহিদা মোতাবেক বুথ, ভ্যাক্সিনেটরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
টিকা নেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও জনগণের মধ্যে তেমন কোনো সাড়া ছিল না। এ অবস্থায় সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম ডোজ নেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করে বার্তা দেওয়ার পর টিকা কেন্দ্রে
হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মানুষ। গত কয়েকদিনে টিকা কেন্দ্রে ভিড় খুব বেড়েছে। শুক্রবারও টিকা কার্যক্রম চালু রাখা হয়। উপচেপড়া ভিড়ের কারণে কোনো কোনো এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ভিড় সামলাতে পুলিশের
লাঠিচার্জের ঘটনাও ঘটেছে। টিকা না পেয়েও ফিরে গেছেন কেউ কেউ।
এর আগে গণটিকা কার্যক্রমে দেখা গেছে, কেন্দ্রে গিয়ে টিকা না পেয়ে অনেকে ফিরে গেছেন। কারণ সেই সব কেন্দ্রে দিনে ৩৫০ জনকে টিকা দেওয়ার কথা ছিল। দুই ঘণ্টার মধ্যেই ৩৫০ জনকে দেওয়া হয়ে যায়। ফলে বাকিদের
ফিরে যেতে হয়েছে। এবারো যাতে সেরকম কিছু না হয় সেজন্য জেলায় জেলায় পর্যাপ্ত টিকা সরবরাহ করা হয়েছে বলে ভোরের আকাশকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ
খুরশীদ আলম । তিনি বলেন, ‘এমন যদি হয় যে কেন্দ্রে যে পরিমাণ টিকা আছে তার চেয়ে বেশি লোক লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। এটা সকালেই বোঝা যাবে। তখন সেই কেন্দ্র থেকে তাদের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।
তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সেই কেন্দ্রে টিকা সরবরাহ করবেন।’
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শ্যামলী টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন ২ হাজার মানুষকে টিকা দিয়ে আসছি। কিন্তু গত সাত দিনে ৪ হাজার করে দেওয়া হয়েছে। ২৬
তারিখে যদি আরো বেশি মানুষ টিকা নিতে আসেন, আমরা দেব। আমাদের সেইভাবে প্রস্তুতি আছে। সাধারণত সকাল ৯টা থেকে টিকা প্রয়োগ শুরু করা হয়। বেলা ৩টা পর্যন্ত দেওয়ার কথা; কিন্তু আমাদের বিকাল ৫টা পর্যন্ত
দেওয়া লাগে। ২৬ তারিখে আরো যদি বেশি সময়ও লাগে দেওয়া হবে। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা না পেয়ে কাউকে যাতে ফিরে যেতে না হয়।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তথ্য কর্মকর্তা পিয়াল হাসান জানান, গণটিকা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে উত্তরে ৫৪টি ওয়ার্ডে ৫৪টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এতে বুথ রয়েছে ৪৮৬টি। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে
কেন্দ্র রয়েছে ৬৭৫টি। প্রতি কেন্দ্রে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়ার কথা রয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন একটি কার্যকর সমাধান। ভ্যাকসিন কোভিড-১৯ জনিত মৃত্যুঝুঁকি কমায়। গবেষণা হতে প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যারা অন্তত ২ ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন তাদের
অধিকাংশেরই আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয়নি। সে কারণে টিকা প্রয়োগে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
২৬ ফেব্রুয়ারির পর প্রথম ডোজের টিকা আর দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর (এমএনসি অ্যান্ড এএইচ) এবং কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব
ডা. মো. শামসুল হক বলেন, ‘প্রয়োজনের নিরীক্ষে। খুবই যদি প্রয়োজন থাকে তাহলে আমরা ক্যাম্পেইন করে দেব। আমাদের রুটিন যেভাবে চলে সেভাবে।
তিনি বলেন, যারা বাকি আছেন তাদের বেশির ভাগ লোককে আমরা প্রথম ডোজের আওতায় ২৬ তারিখ আনতে চাই। ২৬ তারিখের পর আর কোনো এই গণটিকার ক্যাম্পেইন করা হবে না। তবে কোথাও যদি ৫০০ লোক বাদ থাকে তাহলে সেখানে দেব।
ইতোমধ্যে দেশের ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬১ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে প্রথম ডোজ ও ৪৬ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে ২ ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে। ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি
জনগোষ্ঠীকেও টিকা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রায় ৩২ লক্ষাধিক মানুষকে তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ছয় ধরনের (অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মডার্না, সিনোফার্ম, সিনোভ্যাক এবং জনসন ও জনসন) মোট প্রায় ১০ কোটি ডোজ কোভিড-১৯ টিকা মজুদ রয়েছে।
সরকার দেশের দুর্গম অব্জলগুলোয় বসবাসরত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, ভাসমান জনগোষ্ঠী, নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠী, পরিবহণ ও কল-কারখানাসহ সব স্তরের শ্রমিক, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী, স্কুল-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষার্থীসহ বিশেষ জনগোষ্ঠীকে কোভিড-১৯ টিকার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে বলা হয়েছে- ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের টিকা নিশ্চিত করে সার্বিক সংক্রমণ হার হ্রাস করার মাধ্যমে জনজীবন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে স্থিতিশীল করতে আমরা সফল হয়েছি। এরই
ফলশ্রুতিতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও অচিরেই খুলে দেওয়া হবে। চলমান মহামারি নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের প্রয়াস বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে।’
বাংলাদেশে প্রথম গণটিকাদান কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয় গত বছর ৭ আগস্ট। যদিও দেশে প্রথম টিকা প্রয়োগ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয় ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি।
মন্তব্য