-->
শিরোনাম

টিকার জন্য লাইনে দীর্ঘ অপেক্ষা

নারীদের উপস্থিতি কম, বাড়ছে ভিড়

আরিফ সাওন
টিকার জন্য লাইনে দীর্ঘ অপেক্ষা
উত্তর মুগ্দা ঝিলপাড় নগর মাতৃসদনের সামনে দীর্ঘ লাইনে টিকা গ্রহণের জন্য সাধারণের অপেক্ষা

টিকা নেওয়ার জন্য সকাল সাড়ে সাতটায় এসে মুগদা মেডিকলে লাইনে দাড়ান ২২ বছর বসয়ী সাজ্জাদ। বেলা ১০টাও তিনি টিকা নিতে পারেন নি। সামনে যে সংখ্যক লোক আসে তাতে ১১টায়ও পারবেন কিনা সন্দেহ তার।

সকাল সাড়ে ১০ টায় জরুরি বিভাগের সামনে গেটে বাইরে এক শিশুকে নিয়ে বসে আছেন তিনজন। একজন নারী, দুইজন পুরুষ। তাদের মধ্যে একজন জানান, তিনি ২৪ জানুয়ারি রেজিস্ট্রেশন করেছেন, কিন্তু আজো এসএমএস

পাননি। ২৬ তারিখ গণটিকার কথা শুনে স্ত্রী ও ভাইকে নিয়ে এসেছেন টিকা দিতে। তিনি বলেন, ‘সকাল ৯টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। সেখান থেকে ৪ তলায় পাঠালো। সেখান থেকে নিচে এসে ফটোকপি জমা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত

ম্যাসেজ আসেনি। বলেছে ম্যাসেজ আসবে। কখন আসবে জানি না। বাসাও দূরে, নন্দীপাড়ায়। তাই বাসায়ও যাচ্ছি না। এখানে বসে আছি।’

কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে জানেন না এই টিকা প্রত্যাশী।

টিকা নিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থেকে ঢাকায় এসেছেন নিত্যানন্দ। তিনি জানান, ৯ ফেব্রুয়ারি টিকার রেজিস্ট্রিশন করে। পরে জানতে পারেন তার টিকা কেন্দ্র দেওয়া হয়েছে মুগদা মেডিকেল। দুই দিন আগে তিনি টিকা

নেওয়ার জন্য ঢাকায় এসেছেন। গত বৃহস্পতিবার দেড়টায় আসেন তিনি। তখন দেরি হয়ে গেছে বলে পরে আসতে বলে। তিনি শনিবারও এসেছেন। নিত্যানন্দ বলেন, সকাল ৮টায় এসেছি। ১০টাও টিকা পাইনি।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সকাল নয়টা গিয়ে দেখা যায়, এন্টি লাইন এন্টি কাউন্টার থেকে নদীর মত একেবেঁকে লাইনটি হাসপাতাল ভবনের প্রবেশমুখ পর্যন্ত। শত শত লোক দাড়িয়ে লাইনে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই

লাইন আরো দীর্ঘ হতে থাকে। সাড়ে ১০টায় এই লাইন হাসপাতাল ভবনের বাইরের সড়কে ঠেকেছে।

মুগদা মেডিকেলে ১১ টা বুথে টিকা দেওয়া হচ্ছে। আগে যারা এসএমএস পেয়েছেন শুধু তাদেরই এখানে টিকা দেওয়া হচ্ছে। ফলে অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে র্দীঘ সময় অপেক্ষার পর ছুটছেন উত্তর মুগদা ঝিলপাড় নগর মাতৃসদনে।

সেখানেও দীর্ঘ লাইন। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মুগদা আইডিয়ালের গেট পর্যন্ত টিকা প্রত্যাশীদের লাইন দেখা গেছে।

লাইনে দাড়িয়ে থাকাদের মধ্যে বনশ্রী থেকে আসা বেল্লাল হোসেন জানান, তিনি সকাল ৭টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছে। বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত টিকা নিতে পারেন নি। সামনে আরো একশর বেশি মানুষ আছে। আর কত সময়

লাগবে তাও নিশ্চিত নয়। এই লাইনের একেবারে শেষের দিকে দাঁড়িয়ে থাকা আব্দুর রহিম এসেছেন ডেমরা স্টাফ কোয়াটার থেকে। বয়স তার ষাটের ওপর। তিনি জানান, সকাল আটটায় এসে লাইনে দাড়িয়েছি। রেজিস্ট্রেশনে

একটু সমস্যার জন্য ঘন্টা খানেক পরে মুগদা মেডিকেলে গিয়ে লাইনে দাড়াই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি ম্যাসেজ না গেলে ওখানে টিকা নেওয়া যাবে না। আব্দুল রহিম বলেন, পরে ১০টার দিকে আবার এখানে এসে দাঁড়াই। এই

তো প্রায় ৪৫/৫০ মিনিট হয়ে গেলো। স্কুলের গেটের সামনে ছিলাম। এতো সময়ে মাত্র ১৫/২০ হাত সামনে এসেছি।

আব্দর রহিম যেখানে দাঁড়ানো ছিলেন সেখান থেকে কেন্দ্র দেখা যাচ্ছিলো না। সামনে এতো লোক লাইনে দাড়ানো আছেন, শেষ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবেন কি না সেই অনিশ্চিয়তায় তিনি। তবু হতাশ নয়, আশাবাদী টিকা পাবেন। না

পান অন্তত শেষ পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবেন বলে জানান তিনি।

এই দুই সেন্টারে নারীদের উপস্থিতি একেবারেই কম দেখা গেছে। সকাল ১০টা পর্যন্ত নারীদের উপস্থিতি তেমন দেখা যায়নি। ১০টার পরে নারীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। লাইনে শিশুদের নিয়ে বেশ ভোগান্তিতে ছিলেন অনেক নারী।

মাঝে মাঝে সন্তান কোলে থাকা দুই একজন মাকে আগে সুযোগ দেওয়া হলেও বেশিরভাগই পাননি এই সুযোগ। তাদের লাইনে দাঁড়িয়েই নিতে হয়েছে টিকা।

মুগদা মেডিকেলে সেচ্ছাসেবক ও আনসাররা শৃঙ্খলার চেষ্টায় নিয়োজিত থাকলেও নগর মাতৃসদনে টিকা নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানোদের শৃঙ্খলায় এই বিষয়টি তেমন চোখে পড়েনি। যে কারণে সড়কে একসঙ্গে গাদাগাদি করে

দুই তিন লাইনের মতো করে লোকজন দাঁড়িয়ে ছিলেন। অল্প একটু জায়গা বাঁশ দিয়ে ঘেরা ছিলো। সেচ্ছাসেবক ছিলেন কেন্দ্রের ভিতরে। এই সেন্টারের বাইরে লাইনে ছিলো এক প্রকার হ-য-ব-র-ল অবস্থা। গরমে প্রণ্ড রোদে

হাফিয়ে উঠছিলেন নারী পুরুষ শিশু সকলেই।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে ১৬টি বুথের মধ্যে ১২ টি বুথে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হচ্ছে। সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে প্রায় ৪ হাজার জনকে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যসেবা সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, প্রথম ডোজের জন্য যে টার্গেট করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হবে আজ, কার্যক্রম সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে,

পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

 

মন্তব্য

Beta version