-->
অগ্নিঝরা মার্চ

মুক্তির জন্য কী করতে হবে জাতি তা জেনে যায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
মুক্তির জন্য কী করতে হবে জাতি তা জেনে যায়
প্রতীকী ছবি

একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চের প্রতিটি দিনই ছিল ঘটনাবহুল। প্রতিটি দিনই ঘটছিল নানা ঘটনা। স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর মানুষ প্রতিদিনই দেখছিল নতুন স্বপ্ন। এর মধ্যে ৮ মার্চ ছিল আগের সাতটি দিনের চেয়ে আলাদা। মুক্তির বন্দরে পৌঁছাতে তাদের কী করতে হবে, ততদিনে জেনে গিয়েছিল বাঙালি জাতি। কীভাবে তা করতে হবে, সেই নির্দেশনা তারা পেয়ে যায় ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জ্বালাময়ী ভাষণ থেকে।

আগের দিনের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ৮ মার্চ সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা বেতার থেকে সম্প্রচার করা হয়। প্রদেশের অন্যান্য বেতার কেন্দ্র থেকেও তা রিলে করা হয়। ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর সহ-সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন সেদিন একটি যৌথ বিবৃতি দেন।

সেখানে বলা হয়, ‘বাংলার বর্তমান মুক্তি আন্দোলনকে ‘স্বাধীনতার আন্দোলন’ ঘোষণা করে স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক জনসভায় যে প্রত্যক্ষ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন, আমরা তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য বাংলার সংগ্রামী জনতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

সেই সময়ের রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চের সেই জনসভায় বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট ঘোষণা দেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীকে দিয়েছিলেন চার শর্ত, আর বাংলার মুক্তিকামী মানুষকে দিয়েছিলেন ১০ নির্দেশনা। তার ভিত্তিতেই ৮ মার্চ থেকে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়। হাইকোর্টের বিচারক থেকে সাধারণ নাগরিক সবাই তাতে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দেন। পূর্ব পাকিস্তান কার্যত চলতে থাকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ও নির্দেশে।

এই দিন রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষিত নির্দেশের ব্যাখ্যা দেন। বলা হয়, ব্যাংকগুলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ব্যাংকগুলো বাংলাদেশের ভেতরে নগদ জমা, বেতন ও মজুরি প্রদান, ১ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রদান এবং আন্তঃব্যাংক ক্লিয়ারেন্স ও নগদ লেনদেন করতে পারবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় বিভাগগুলো খোলা থাকবে। সার সরবরাহ ও পাওয়ার পাম্পের ডিজেল সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।

একইভাবে পোস্ট অফিস সেভিংস ব্যাংক খোলা থাকবে। পানি ও গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। সরকারি এক প্রেসনোটে সেদিন দাবি করা হয়, আন্দোলনে ১৭২ জন নিহত হয়েছেন; আহত ৩৫৮ জন।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ আরেকটি বিবৃতিতে সামরিক কর্তৃপক্ষের ওই প্রেসনোটের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সেখানে হতাহতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে বলা হয়েছে।

‘অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ক্ষেত্রেই গুলিবর্ষণ করা হয়েছে’ বলে কথিত বক্তব্য সত্যের অপলাপ। নিজেদের অধিকারের স্বপক্ষে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভরত নিরস্ত্র বেসামরিক অধিবাসীদের ওপরই নিশ্চিতভাবে গুলি চালানো হয়েছে। পুলিশ ও ইপিআর গুলিবর্ষণ করেছে বলে যে প্রচারণা করা হয়েছে তা বাঙালিদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।’ ব্রিটেন প্রবাসী প্রায় ১০ হাজার বাঙালি এ দিন লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশনের সামনে স্বাধীন বাংলার দাবিতে বিক্ষোভ করেন।

মন্তব্য

Beta version