-->
শিরোনাম
অগ্নিঝরা মার্চ

ভুট্টোর ক্ষমতা লিপ্সায় সংকট গভীর হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
ভুট্টোর ক্ষমতা লিপ্সায় সংকট গভীর হয়
প্রতীকী ছবি

১৯৭১ সালের ১১ মার্চ। অঞ্চলজুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের চরম অবস্থা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের কারণে সরকারি, আধাসরকারি কর্মচারীদের কর্মস্থল বর্জন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা, সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাসা ও যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ানো চলছে অব্যাহতভাবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলন নতুন মাত্রা পায় এ দিন।

প্রশাসনের উচ্চপদের বাঙালি কর্মকর্তারাও সামরিক রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জন-আকাক্সক্ষার পাশে দাঁড়ালেন। সিএসপি ও ইপিসিএস সমিতির পদস্থ কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান। তারা আওয়ামী লীগের তহবিলে দেন এক দিনের বেতন।

চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে অনির্দিষ্টকাল প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

বাঙালিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করতে গিয়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামো যে ভেঙে পড়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া গেল এক সরকারি সিদ্ধান্তে। রাওয়ালপিন্ডিতে এক সরকারি ঘোষণায় ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।

মওলানা ভাসানী বিভিন্ন এলাকায় জনসভার আয়োজন করে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি সমর্থন প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। এ দিন তিনি ময়মনসিংহে এক জনসভায় বলেন, ‘আমি জানি শেখ মুজিবুর রহমান কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না। আপনারা শেখ মুজিবের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখুন।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, গণ-অসহযোগ আন্দোলন এক নজিরবিহীন অবস্থায় তুঙ্গে পৌঁছেছে। জনগণের সংগ্রাম সফল করার উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক কাজে নিয়োজিত সবাইকে কঠোর নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। অসহযোগ আন্দোলন পূর্ণ সহযোগিতায় সাফল্যজনকভাবে অব্যাহত রাখার জন্য তাজউদ্দীন আহমদ জনতাকে অভিনন্দন জানান।

প্রাদেশিক পরিষদের আওয়ামী লীগ দলের নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য পাঠানো খাদ্যবোঝাই মার্কিন জাহাজের গতি বদলে করাচি পাঠানোর ঘটনায় উৎকণ্ঠা ও নিন্দা প্রকাশ করেন।

পাকিস্তান সরকারের খেতাব বর্জনের ঘোষণা অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত খেতাব বর্জন করেন। পশ্চিম পাকিস্তানের ন্যাপের সভাপতি খান মোহাম্মদ ওয়ালী খান বিকেলে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাড়িতে এসে দেখা করেন।

কারাগার থেকে কয়েদিদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। বরিশাল জেল থেকে ৪০ জন কয়েদি পালিয়ে যান। সংঘর্ষে দুজন কয়েদি নিহত ও ১০ জন আহত হন। কুমিল্লা কারাগার থেকেও কয়েদি পালানো এবং গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। বগুড়া জেলখানা ভেঙে ২৭ জন কয়েদি পালিয়ে যান। কারারক্ষীদের গুলিতে একজন কয়েদি নিহত এবং ১৫ জন আহত হন।

লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে গণঐক্য আন্দোলনের প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান বলেন, ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, দোষ করা হলো লাহোরে, কিন্তু বুলেট বর্ষিত হলো ঢাকায়। তিনি বলেন, পূর্বাঞ্চলের জনসাধারণ সমান অধিকার নিয়ে থাকতে চায়, পশ্চিমাঞ্চলের দাস হিসেবে নয়। পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য এখন একটিমাত্র পথ খোলা রয়েছে, আর তা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর।

লাহোরে ন্যাপের মহাসচিব সি আর আসলাম বলেন, দেশের বর্তমান সংকটের জন্য একচেটিয়া পুঁজিপতি ও আমলারাই দায়ী। ভুট্টোও এ ব্যাপারে নিজের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। ভুট্টোর হুমকিপূর্ণ মনোভাব ও ক্ষমতার লিপ্সাই রাজনৈতিক সংকটকে আরো মারাত্মক করে তুলেছে।

মন্তব্য

Beta version