-->

বঙ্গবন্ধু ও আজকের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ

ড. আতিউর রহমান
বঙ্গবন্ধু ও আজকের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু অভিন্ন। সব অর্থেই তিনিই বাংলাদেশ। হাত বাড়ালেই তিনি ধরে ফেলতেন বাঙালির আশা, বাঙালির ভাষা আর বাঙালির কষ্ট। সারাটা জীবন তন্ন তন্ন করে খুঁজেছেন বাঙালির অহঙ্কার। বাঙালির দুঃখ, বেদনা, আনন্দ, স্বপ্ন, সাহস নিজের মধ্যে ধারণ করেছেন। আর তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন এক বিরাট স্বপ্নÑ কী করে বাঙালির ভাষা ও স্বপ্নকে এক সুতোয় গাঁথা যায়।

৭ মার্চ ১৯৭২। মাথা উঁচু করে তিনি বাঙালির অন্তরের গহীনে থাকা দুঃখ, বঞ্চনা, অপমান, স্বপ্ন, সাধ, সংগ্রাম এবং আগামী দিনের গেরিলা যুদ্ধের কৌশলের কথা এক নিশ্বাসেবলে ফেললেন। সেই অমর কবিতাই আমাদের জাতীয়তার উন্মেষের সুসংহত উচ্চারণ। সেই উচ্চারণেই নিহিত রয়েছে বাঙালির মুক্তির বার্তা। যিনি এই মুক্তির বার্তা দিয়েছিলেন, তার জন্ম হয়েছিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। তখনকার দিনে টুঙ্গিপাড়া ছিল এক অজ’পাড়া গাঁ। শহরাঞ্চলের সাথে সংযোগের জন্য কোনো সড়ক পথ ছিল না। নদী পথই ভরসা।

কলকাতা থেকে এ গাঁয়ে পৌঁছাতে কয়েকদিন লেগে যেত। তবুও বঙ্গবন্ধুর পড়ালেখায় প্রগতিশীল পিতার যথাযথ সমর্থন ছিল। অল্প বয়সেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ততারও তিনি বিরোধী ছিলেন না। তাই, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করা সম্ভব হয়েছিল। এ সময়েই তিনি সোহরাওয়ার্দির নেতৃত্বে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবিরোধী তৎপরতায় ছাত্রদের সংগঠিত করেছিলেন।

গণমানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে এ সময়েই তার হাতেখড়ি। দেশ ভাগের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন। ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে আইন বিভাগে ভর্তি হন। তিনি এবং তার আশপাশের রাজনৈতিক কর্মীরা সে সময় পূর্ব পাকিস্তানে খাদ্য সংকট, দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব এবং কেন্দ্রের সাথে রাজনৈতিক দূরত্বের কারণে ভীষণ হতাশ হয়ে পড়েন। তারা দ্রুতই বুঝতে পারেন, ধর্মের নামে পাকিস্তান গঠনের মাধ্যমে পূর্ব বাংলার মানুষকে রাজনৈতিকভাবে ধোঁকা দেয়া হয়েছে। তাই সময় নষ্ট না করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগের ব্যানারে ছাত্রদের সংগঠিত করেন। এছাড়াও সে সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিদের আন্দোলনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪৯ সালে তাকে বিশ^বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হতে হয়। এ জন্য তার কোনো খেদ ছিল না। কখনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুকম্পা প্রার্থনা করেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই তিনি ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে যুক্ত হয়েছিলেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সংগ্রামে ছাত্র-জনতাকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তখন থেকেই তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৪৮-এর ১১ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার স্বীকৃতি না দেওয়ার পাকিস্তানি চক্রান্তের বিরোধিতা করার কারণে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এরপর থেকেই তিনি আরো গভীরভাবে রাজনৈতিক সংগ্রামের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং বারবার পাকিস্তান সরকারের গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হন।

সম্প্রতি প্রকাশিত সে সময়কার পাকিস্তানি গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে পাকিস্তানের পূর্ব অংশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য তার প্রবল আকাক্সক্ষা সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলনে অধিকাংশ সময় কারাগারে থাকা অবস্থাতেও এমন ধারাবাহিক এবং আপসহীন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যে, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এদেশের তরুণ সমাজ ও বৃহত্তর জনগণের সামনে গ্রহণযোগ্য নেতা হিসেবে তিনি আবির্ভূত হন। এরই ধারাবাহিকতায় সদ্যগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের (যা পরবর্তীতে অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগে রূপান্তরিত হয়েছিল) সামনের সারির নেতা হিসেবে তিনি বিবেচিত হতে লাগলেন। প্রথমে একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করলেও তারুণ্যদীপ্ত ও পরিশ্রমী শেখ মুজিব তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে অল্প সময়ের মধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক হতে পেরেছিলেন। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্রমেই তিনি এদেশের নিপীড়ত মানুষের মুখপাত্র হিসেবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলেন।

১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ভূমিধস বিজয় অর্জনেও তিনি অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর গভীর চক্রান্তের ফলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত যুক্তফ্র্রন্ট সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ওই সরকারের তিনিই একমাত্র মন্ত্রী ছিলেন যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কারণ বাঙালির প্রতি যে অবিচার করা হচ্ছিল সেটা তিনিই সবার সামনে তুলে ধরেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তার বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা তথা বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার গল্পটি আমাদের সবারই জানা। তার রাজনৈতিক জীবনের শ্রেষ্ঠতম মুহূর্ত অবশ্যই ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে দেওয়া তার কাব্যিক ভাষণের ক্ষণটি। ওই ভাষণেই তিনি কার্যত স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, আর বলেছিলেন মুক্তির কথা। ওই ভাষণেই তিনি আসন্ন মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা কৌশলের পথনকশাও তুলে ধরেছিলেন। আসন্ন যুদ্ধের কথা তিনি আঁচ করতে পেরেছিলেন তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কারণে। আর তাই দেশের মানুষকেও এই বীরোচিত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অনুপ্রাণিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জন্ম হয় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে, যখন তিনি স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। তাকে তৎক্ষণাত পাক বাহিনী গ্রেপ্তার করলেও একাত্তরজুড়ে তার দেখানো পথেই মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন তার সুযোগ্য সহনেতারা। তাকে সামনে রেখেই তারা অগুণতি সাধারণ মানুষ বিশেষ করে তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে শামিল করতে পেরেছিলেন।

ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত সরকারের সর্বাত্মক সহায়তা এবং সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ ও সরকারগুলোর অবদানের কথাও এক্ষেত্রে স্মরণ করতে হয়। বাংলাদেশের মুক্তিকামি মানুষের ওপর চালানো পাক বাহিনীর নৃশংসতার কারণে সারা বিশ্ব থেকেই চাপের মুখে পড়ে হানাদার পাকিস্তান সরকার এবং শেষ পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে আবির্ভাব ঘটে বাংলাদেশের।

পরবর্তীতে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হন বঙ্গবন্ধু এবং লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পা রাখেন তার স্বপ্নের ভূমি বাংলাদেশে। সে সময় তিনি সত্যিই সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া নিজের দেশে ফিরে আসার জন্য উন্মুখ হয়ে ছিলেন। দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তা লুকাতেও চেষ্টা করেননি। সেদিন তিনি সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশকে একটি শান্তি, প্রগতি ও সমৃদ্ধির দেশে রূপান্তরিত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। দিনের শেষ ভাগে তিনি দেশে পৌঁছে বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাতে আসা লাখো মানুষকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সেখান থেকে দ্রুত চলে যান রেসকোর্স ময়দানে, যেখানে ১৯৭১-এর ৭ই মার্চ রাজনীতির এই অমর কবি দিয়েছিলেন সেই ঐতিহাসিক ভাষণ। সেখানে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন কান্নাভেজা চোখে। এর দু’দিন পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। সেদিন থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে গেছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে পুনর্গঠনের। বারবার তিনি জনগণকে এবং প্রশাসনকে বাংলাদেশ পুনর্গঠন করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানিয়ে গেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের পরপর দেশ যে একটা বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে রয়েছে তা বঙ্গবন্ধু নিশ্চিতভাবেই অনুধাবন করেছিলেন। কিন্তু পাশাপাশি অসংখ্য বাধা মোকাবিলা করে সাফল্য পাওয়ার যে সক্ষমতা এ দেশের জনগণের রয়েছে, সে সত্যটিও তিনি জানতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কাক্সিক্ষত পথে তাদেরকে নিয়ে এগুনো খুবই সম্ভব। ১৯৭২ সালে প্রজাতন্ত্রের যে সংবিধান প্রস্তুত করা হয় সেখানেও তার অন্তর্ভুক্তিমূলক সমৃদ্ধির দর্শন প্রতিফলিত হয়। এ পথে দেশকে এগিয়ে নিতে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর। নিঃসন্দেহে তিনি সঠিক পথেই এগুচ্ছিলেন।

স্বাধীনতার অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার অনেকটাই বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছিলেন। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, ১৯৭২ সালে আমাদের অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর আমাদের রিজার্ভে তখন কোনো বৈদেশিক মুদ্রাও ছিল না। শতকরা আশি ভাগের মতো মানুষ দরিদ্র ও ক্ষুধার্ত ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বৈপ্লবিক নেতৃত্বের কল্যাণে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামো এবং সত্যিকার অর্থে কোনো নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান না থাকা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। দেশের ভেতরে ও বাইরে বেশকিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে তখন খাদ্যশস্যের ভয়াবহ সংকট চলছিল। ওই সময়টায় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যের সংকটের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জও বঙ্গবন্ধুর সরকারকে মোকাবিলা করতে হয়েছিল। আর এগুলো মোকাবিলার জন্য তার হাতে সম্পদও ছিল খুব সীমিত। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশ আমাদের বিরুদ্ধে বৈরী অবস্থানে। তা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু এই অল্প দেশজ সম্পদ এবং কিছু আন্তর্জাতিক সহায়তা নিয়েই ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশের অর্থনীতিকে তুলে আনতে পেরেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর শক্তিশালী এবং অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্বের গুণে এদেশের মানুষ নিজেদের লড়াই করার শক্তির ওপর আস্থাশীল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু নিয়তির লিখন ছিল অন্যরকম। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে বঙ্গবন্ধুকে পরিবারের বহুসংখ্যক সদস্যসহ হত্যা করা হয়। থেমে যায় বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের সম্ভাবনাময় অভিযাত্রা। পুরো জাতি যে সমতাভিত্তিক সমাজের আকাক্সক্ষা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তার অবর্তমানে দেশ চলতে শুরু করে ঠিক তার বিপরীত দিকে। অবশ্য, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আবার সঠিক পথে ফিরেছে। বহু কষ্টে তিনি সারা পৃথিবীর সামনে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে হাজির করতে সক্ষম হয়েছেন। তবু আজও ভাবিÑ যদি সমগ্র জাতির আকাক্সক্ষার বাতিঘর বঙ্গবন্ধুকে অকালে না হারাতাম, তাহলে আজ আমরা আরো কতটা পথই না এগিয়ে যেতে পারতাম।

বঙ্গবন্ধুকে হারাবার পর কয়েক যুগ পেরিয়ে গেছে। তবু আজও তিনি তার কন্যাদের এবং আমাদেরকে চেতনার জায়গা থেকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছেন। নিরন্তর সাহস ও অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন আমাদের বিস্ময়কর উন্নয়ন অভিযাত্রায়। অস্বীকার করার উপায় নেই, আমাদের সমাজে অনেক ক্ষেত্রেই আয় বৈষম্য এখনো প্রকটভাবে উপস্থিত। এ কথাটি মেনে নিয়েও বলা যায়, অন্তত ভোগ বৈষম্য আর না বাড়ার ক্ষেত্রে আমরা সফল হয়েছি। সমাজের পাটাতনের নিচের দিকের মানুষও এখন খেয়ে পরে ভালোভাবেই বেঁচে আছেন। দারিদ্র্য বিমোচনে আমাদের অনুসরণীয় সাফল্যের কল্যাণে সারা দেশের মানুষ তিন বেলা পেট ভরে খাচ্ছেন, ন্যূনতম প্রয়োজনীয় ক্যালরিটুকু পাচ্ছেন।

কৃষির উন্নয়ন ছিল বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনের অন্যতম প্রধান মনোযোগের জায়গা। তার কন্যার শাসনামলেও দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে কৃষি খাতকে। এ কথা তো জানা যে, কৃষির উন্নতি হলে দারিদ্র্য বেশি হারে কমে। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারা প্রতিবেশী দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর তুলনায় বেগবান থেকেছে। এটা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবেই একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছি। টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস পণ্যের পাশাপাশি সিরামিক ও ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো পণ্য রপ্তানিতে ধারাবাহিক সফলতা বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রাকে সত্যিই বেগবান করেছে এবং আমরা আশাবাদী যে, ‘ডেমোগ্রাফিক’ ও ‘ডেনসিটি ডিভিডেন্টে’র কল্যাণে বাংলাদেশের এই সাফল্যের ধারা আরো কয়েক দশক ধরে অব্যাহত থাকবে। আর এসব কারণেই বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্পটি এতটা চমকপ্রদ। আর এর ভিত্তি গড়ে দিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু।

লেখক: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ

মন্তব্য

Beta version