সারা দেশে শুরু হচ্ছে ‘ফ্যামিলি কার্ডে’ সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) পণ্য বিক্রি। এই কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী ১ কোটি পরিবারের কাছে পণ্য বিক্রি করা হবে। ইতোমধ্যে এ তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রমজানকে সামনে রেখে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ রোববার থেকে রাজধানী ঢাকা ও বরিশাল সিটি ছাড়া দেশের সব জায়গায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা টিসিবি। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নিজের নির্বাচনী এলাকা রংপুরের কাউনিয়ায় এ কর্মসূচি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
জানা যায়, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি জানিয়েছে, ইতোমধ্যে তারা প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে। সব ধরনের পণ্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। রাজধানী ঢাকার ১২ লাখ ও বরিশাল সিটির ৯০ হাজার বাদ দিয়ে চূড়ান্ত করা হয়েছে ৮৭ লাখ ১০ হাজার পরিবারকে, যারা এই সহায়তা পাচ্ছে। তবে ঢাকা ও বরিশাল সিটিতে বসবাসকারী নিম্ন আয়ের নাগরিকরাও টিসিবির ট্রাক সেলের মাধ্যমে সয়াবিন তেল, চিনি, ডাল ও পেঁয়াজ পাচ্ছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী এক কোটি পরিবারের তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। করোনাকালে প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ সহায়তা বাবদ আড়াই হাজার টাকা করে পেয়েছেন দেশের মোট ৩৮ লাখ ৫০ হাজার সুবিধাভোগী পরিবার। এই সাড়ে ৩৮ লাখ পরিবারের সবাই পাচ্ছেন টিসিবির ‘ফ্যামিলি কার্ড’। এর সঙ্গে নতুন যুক্ত করা হয়েছে আরো ৬১ লাখ ৫০ হাজার পরিবার। এ কাজে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন যৌথভাবে কাজ করছে। সুবিধাভোগী পরিবার নির্বাচিত করতে সরকারের সামাজিক বলয়ের আওতায় থাকা নিম্ন আয়ের মানুষের তালিকার বাইরেও নানা বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারি এই উদ্যোগের ফলে দেশের ৫ কোটি স্বল্প আয়ের মানুষ সরাসরি উপকৃত হবেন বলে সরকার মনে করে।
জানা যায়, প্রতিটি ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে একসঙ্গে পাঁচ পণ্যের প্যাকেট পাবেন কার্ডধারীরা। প্রতি প্যাকেটে থাকবে দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা, দুই কেজি মসুর ডাল ও পাঁচ কেজি পেঁয়াজ। সেখানে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১১০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৫৫, মসুর ডাল ৬৫, পেঁয়াজ ৩০ টাকা এবং ছোলা ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
একজন কার্ডধারী রোজার আগে এবং রোজার মধ্যে দুই দফায় এসব পণ্য পাবেন। প্রথম কিস্তির পণ্য পাবেন ২০ মার্চ থেকে। দ্বিতীয় কিস্তির পণ্য দেওয়া হবে রোজার মাঝামাঝি সময়ে। এই কর্মসূচির জন্য দুই কোটি লিটার সয়াবিন তেল, ৪০ হাজার টন চিনি, ৪০ হাজার টন মসুর ডাল ও ৪০ হাজার টন ছোলা এবং ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ প্রয়োজন হবে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘এটি সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এই কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রবিবার থেকে এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।’গত বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি টিসিবির জন্য তেল, চিনি, ডাল ও ছোলা কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়। এর আওতায় এক কোটি ৭১ লাখ ১৫ হাজার ৬৫২ লিটার সয়াবিন তেল, ১৪ হাজার টন চিনি, ১০ হাজার টন ছোলা ও ১৯ হাজার ৫০০ টন মশুর ডাল সংগ্রহ করছে টিসিবি।
এর আগে শুক্রকার রাজধানীর কারওয়ান বাজার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা প্রাথমিকভাবে এক কোটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে পণ্য দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শেষ। আগামী রবিবার ঢাকা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন বাদে প্রায় ৮৭ লাখ নিম্নআয়ের পরিবারকে এ পণ্য দেব। রংপুর থেকে শুরু হবে এ কার্যক্রম, সারা দেশে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ঢাকা ও বরিশালে টিসিবির পণ্য বিক্রি চলমান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
টিসিবির এ বিক্রয় কার্যক্রম ১ হাজার ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে করা হবে। প্রতিটি ট্রাক থেকে ২৫০ ফ্যামিলির পণ্য বিক্রি করা হবে। একজন ব্যক্তি যেন একাধিকবার পণ্য নিতে না পারে এজন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, এজন্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। টোকেন অথবা আঙুলে কালি লাগিয়ে নির্ধারণ করা যায় কিনা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
মন্তব্য