-->
শিরোনাম
বিশ্ব পানি দিবস আজ

আশঙ্কাজনক হারে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

* অকেজো হয়ে পড়ছে অগভীর নলকূপ ও সেচ পাম্প * ছড়িয়ে পড়ছে লবণাক্ততা * রাজধানীতে প্রতি বছর পানি স্তর নামছে ১০ ফুট

শাহীন রহমান
আশঙ্কাজনক হারে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর
প্রতীকী ছবি

বিশ্ব পানি দিবস আজ। ১৯৯৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ দিবসের মূল লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী পানি সংকট সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ২০৩০ সাল নাগাদ সবার জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ কার্যক্রমকে বেগবান করা। এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ভূগর্ভস্থ জল : অদৃশ্যকে দৃশ্যমান করা।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন অস্বাভাবিক মাত্রায় ব্যবহার হচ্ছে ভূগর্ভস্থ স্তরের পানি। বিভিন্ন হিসেবে উঠে এসেছে বর্তমানে সেচকাজে প্রায় ৮০ শতাংশই ভূগর্ভস্থ স্তরের পানির উপর নির্ভরশীল। এছাড়া খাবার পানির ক্ষেত্রে শতভাগ ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। মাত্রারিক্ত ব্যবহারের ফলে দেশের ভূগর্ভের পানির স্তর ক্রমেই নেমে যাচ্ছে। ফলে ঝুঁকি বাড়ছে। ভূগর্ভস্থ পানি অস্বাভাবিক মাত্রায় উত্তোলনের কারণে শুষ্ক মৌসুমে স্বাভাবিক গভীরতার অধিকাংশ নলকূপের পানি উঠছে না। সমুদ্রের লবণাক্ত পানি দ্রুত প্রবেশ করছে। সমুদ্রের লবণ পানি ঠেলে নামানোর জন্য প্রয়োজন ১ হাজার ৩৪৬ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি। কিন্তু নদীতে এই পর্যাপ্ত পানির প্রবাহ না থাকায় প্রতিনিয়ত সমুদ্রের লোনা পানি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়মিত জরিপে দেখা গেছে, বিগত বছরগুলোতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আর স্বাভাবিক উচ্চতায় উঠে আসছে না। অস্বাভাবিকভাবে ভূগর্ভের পানির ওপর চাপ পড়ায় দিন দিন এ সমস্যা আরো প্রকট হয়ে উঠছে। বিশেষ করে দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের পানির স্তর প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় নেমে যাচ্ছে। কিন্তু যে পরিমাণ নিচে নেমে যাচ্ছে সে পরিমাণ রিচার্জ হচ্ছে না।

এছাড়া সেচ কাজে ব্যবহৃত শ্যালো পাম্পগুলো ৭ থেকে ১৫ ফুট গভীর খাদ তৈরি করে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে সেচ কাজ ও কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। সম্প্রতি সময়ে সেচ কাজে নদ-নদীর পানির ওপর নির্ভরতা একেবারেই কমে এসেছে। নব্বইয়ের দশকে যেখানে ৮০ শতাংশ সেচের উৎস ছিল নদ-নদী, বর্তমান কমে গিয়ে ২০ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে ভূগর্ভস্থ স্তরের পানির অপর অধিক চাপ বাড়ছে।

দেশের অন্যান্য এলাকার মতো ঢাকাতেও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভীতিকর গতিতে নিচে নেমে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর পানি চাহিদা পূরণে ৮৬ ভাগ নির্ভরশীল ভূগর্ভের পানি ওপর।

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এই চাহিদা মেটাতে বসানো হয়েছে ৯০০টি গভীর পাম্প। অথচ ১৯৭০ সালে ঢাকা শহরের পানির চাহিদা মেটাতে পাম্প ছিল মোট ৪৯টি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানি অধিক উত্তোলনের ফলে ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ১০ ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে পানির অভাবে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূগর্ভস্থ অঞ্চলের পানির স্তর দ্রুত নেমে যাওয়ার সঙ্গে ভারতের পানি প্রত্যাহারের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) পক্ষ থেকে যে গ্রাউন্ড ওয়াটার মডেলিং করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে উত্তর-পশ্চিমের যৌথ নদী অববাহিকাজুড়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দ্রুতগতিতে নেমে আসছে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন পক্ষ থেকেও প্রস্তুত করা গ্রাউন্ড ওয়াটার জোনিং ম্যাপে দেখানো হয়েছে দেশের মধ্যভাগ ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে বিস্তৃত ৩১টি জেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছরই একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় নেমে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকেও ১৯৮৬ সাল থেকে সারা দেশে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের হ্রাস-বৃদ্ধির জরিপ চালানো হচ্ছে। তার ভিত্তিতে দেখা যায় বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে অধিকাংশ জায়গায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিক স্তর থেকে নিচে নেমে গেছে।

জাতিসংঘের সাবেক পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. এসআই খান তার গবেষণায় উল্লেখ করেন প্রতি বছর বিভিন্ন কারণে পাতাল পানির ব্যবহারের কারণে পানির স্তর পাঁচ মিটার নিচে নেমে যায়। বৃষ্টিপাতের কারণে পাতাল পানি ১ মিটার এবং বর্ষাকালে বন্যার কারণে নিচুজমি ও জলাভূমি প্লাবিত হওয়ায় চার মিটার রিচার্জ হয়। তার মতে পাতাল পানির স্তর ৮ মিটারের বেশি নিচে নেমে গেলে নলকূপে কোনো পানি উঠবে না। প্রতি বছর বর্ষাকালে দেশের মোট আয়তনের ২২ এলাকা প্লাবিত হলেই কেবল পাতাল পানির পর্যাপ্ত রিচার্জ হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক পরিবেশ, পানি ও নদী বিশেষজ্ঞরা প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বলেন, বর্ষা মৌসুমে পানিতে তলিয়ে যাওয়া এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি ঘাটতির অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। শুষ্ক মৌসুমে কৃষি কাজে ভূউপরিস্থ পানি মাধ্যমে পরিচালিত সেচ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদাপূরণে সেচ কাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে।

মন্তব্য

Beta version