-->
শিরোনাম
গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্য

রূপপুরসহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্তের আশঙ্কা

* অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে দেশ * ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন গার্মেন্টস শিল্প * বিশেষ গোষ্ঠী গুজব ছড়াতে তৎপর

এমদাদুল হক খান
রূপপুরসহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্তের আশঙ্কা
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ফাইল ছবি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশের সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। প্রকল্পগুলোর কাজ ব্যাহত হলে দেশ বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে গার্মেন্টস শিল্পে। আরো ঊর্ধ্বগতি হবে দ্রব্যমূল্যে। চলমান যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তায় পড়েছে। তাই বিশ্ব পূঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। এর প্রভাব বাংলাদেশের পূঁজিবাজারেও পড়তে শুরু করেছে।

সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আমাদের দেশে একাধিক বিশেষ গোষ্ঠী অপপ্রচার বা গুজব ছড়াতে তৎপর। গুজব ছড়িয়ে যেন কেউ দেশের আর্থ-সামজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে না পারে সেই বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো, বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম ব্যবহার করে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বাজার ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব প্রড়তে পারে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে এই দুই দেশে তৈরি পোশাক, পাট, হিমায়িত খাদ্য, চা, চামড়াজাত পণ্য, সিরামিক পণ্য, তামাক, মাছ, ওষুধ এবং শাক-সবজি রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়।

অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে খাদ্য চাহিদা মেটাতে গম, ভুট্টা, সূর্যমুখী তেল, খনিজ সামগ্রী, রায়সানিক পদার্থ, যন্ত্রাংশ ও প্লাস্টিকসহ নানা পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করা হয়ে থাকে। কয়েকদিন ধরে ইউরোশিয়ার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক রুট কৃষ্ণসাগরে কোনো জাহাজ যাচ্ছে না। তাই গম ও ভুট্টা আমদানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ আছে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হতেই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা আছে।

গোয়েন্দা পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সরা বিশ্বের মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ জ্বালানি তেল সরবরাহ করে রাশিয়া। যুদ্ধের কারণে এই দেশটি জ্বালানি তেলের রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এর প্রভাবে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে জ্বালানি তেরের দাম ব্যারেলপ্রতি আট শতাংশ বেড়েছে। যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে দাম আরো বাড়বে। তাই এ খাতে সরকারকে অতিরিক্ত ভর্তুতি দিতে হবে।

পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনে সরাসরি গার্মেণ্টস পণ্য রপ্তানি করা হয়। যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করছে। যুদ্ধ পরিস্থিতে এই দুই দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করা যাচ্ছে না। তাই এই শিল্প ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ যত গম আমদানি করে তার ৩০ শতাংশই আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। ভুট্টা আমদানির ২০ ভাগ আসে এই দুই দেশ থেকে। এই দেশ দুইটি সারা দেশে সূর্যমুখী তেলের ৮০ শতাংশ রপ্তানি করে। বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেনে আমদানি রপ্তানি ব্যাহত হওয়ায় অন্যান্য রপ্তানিকারক দেশ রপ্তানিতে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছে। তাই দেশের বাজারে আমদানিনির্ভর পণ্যের পাশাপাশি দেশীয় পণ্যের মূল্য আরো উর্ধ্বমুখী হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, চলমান যুদ্ধের কারণে, আন্তর্জাতিক মুদ্রার লেন-দেন মার্জিনে সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিনান্সিয়াল টেলিকমিউনিকশন্স) থেকে রাশিয়ার কিছু ব্যাংককে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে, রাশিয়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রার লেন-দেন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই বাংলাদশে চলমান মেগাপ্রকল্পগুলোর কার্যক্রম বাধার মুখে পড়তে যাচ্ছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, যুদ্ধের কারণে ইতোমধ্যে ৩৬টি দেশের সঙ্গে রাশিয়ার বিমান যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পণ্য পরিবহণও বাদাগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষ্ণসাগর ব্যবহার করতে না পারায় অনেক জাহাজকে বহুদেশ ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খাতে আকাশ ও নৌপথে ব্যয় বেড়েছে অনেক গুণ।

তাই গোয়েন্দাদের সুপারিশ, যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আগেই বিভিন্ন দেশ থেকে অধিক পরিমাণে গম ও ভুট্টা এনে মজুদ করা যেতে পারে। রাশিয়া ও ইউক্রেন ছাড়া অন্যান্য দেশে পোশাক শিল্পের বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে। দেশে চলামান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম যেন স্থবির হয়ে না পড়ে সে বিষয়ে যথায়থ ব্যবস্থা নিতে হবে। গম ও ভুট্টার স্থায়ী সমাধানের জন্য উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রান্তিক কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে। খাদ্য শস্য ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য

Beta version