-->
শিরোনাম
ইসির সংলাপে বিশিষ্টজনদের অভিমত

'নির্বাচন কেমন হবে তা নির্ভর করবে সরকারের আচরণের ওপর'

নিজস্ব প্রতিবেদক
'নির্বাচন কেমন হবে তা নির্ভর করবে সরকারের আচরণের ওপর'

দলীয় সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করাই নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন কেমন হবে তা নির্ভর করবে সেই সরকারের আচরণের ওপর। সরকার না চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করা ইসির জন্য কঠিন হবে বলে মত দিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

মঙ্গলবার (২২ মার্চ) ইসি সংলাপে অংশ নিয়ে বিশিষ্টজনরা এসব মতামত ব্যক্ত করেন।

তাদের অভিমত, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন। তবে অসম্ভব নয়। নির্বাচনে মাঠ প্রশাসন ইসির নিয়ন্ত্রণে থাকবে কিনা সেটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসির পক্ষে যদি আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব না হয়, তাহলে ইসির পক্ষে উত্তম হলো পদত্যাগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।

সংলাপের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র সুসংহত করতে হলে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অপরিহার্য।

সংলাপ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নির্বাচনে শতভাগ সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। এটা নিয়ে বিশিষ্টজনরা তাদের মতো করে মতামত দিয়েছেন। কেউ বলেছেন ৬০ ভাগ হলেই সফল, কেউ ৭০ ভাগ হলে সফল বলেছেন। তবে ইসির পক্ষে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করার। যদি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু করা, সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়, তাহলে সফল হতে পারব। সবার পরামর্শ নিয়ে এবং সেগুলো কাজে লাগাতে কমিশন এখন থেকেই কাজ করবে।

আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা একই সঙ্গে উল্লেখ করেন, আইন ও সংবিধানে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসিকে যথেষ্ট ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে এটি প্রয়োগ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়া। আগের দুটি ইসির কর্মকাণ্ডে মানুষের মধ্যে অনাকাঙ্খিত অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গা নষ্ট হয়েছে। মানুষ এখন বিশ্বাস করে না নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব। নবনিযুক্ত ইসির উচিত হবে আগে মানুষের এবং রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন করা।

দ্বিতীয় দফায় এই সংলাপে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা ৫০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। এর আগে গত ১৩ মার্চ প্রথম দফায় অনুষ্ঠিত সংলাপে ৩০ জন শিক্ষাবিদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেই সংলাপেও মাত্র ১৩ জন অংশ নেন।

সংলাপে অংশ নিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের টাস্ট্রি ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা বেশ কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। সবাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন শক্ত হয়ে গেছে। কমপক্ষে ২০টি জেলাতে না করে ১০টি জেলায় কমিটি থাকার বিধান করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবতে হবে ইসিকে।

সিপিডির ফেলো ড. দেবিপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগের দুটি নির্বাচনে মানুষের মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত অভিজ্ঞতা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে আগামী নির্বাচন ভিন্নতর হবে, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে অতীত অভিজ্ঞতার কারণে।

তিনি বলেন, সংবিধান ও আইন কার্যকরভাবে প্রয়োগ করলে ইসির পক্ষে গ্রহণযোগ্য ও অংশীদারত্বমূলক নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব। কিন্তু সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন কিনা সেটা বড় বিষয়। নির্বাচনকালীন মাঠ প্রশাসনের ওপরে ইসির নিয়ন্ত্রণ থাকবে কিনা, নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, যদি কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয় তাহলে এই ইসির পক্ষে উত্তম হবে পদত্যাগ করা।

সিপিডির ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, নির্বাচন ও কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা অর্জন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তারা ইচ্ছা করলেই একটি ভালো নির্বাচন করতে পারবে না। এক্ষেত্রে তাদের সততা এবকং সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সিইসিকে আগে দেশবাসীর আস্থা ও প্রত্যাশা পূরণে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠান। ফলে সরকারের প্রতি অনুগত হয়ে কাজ করার সুযোগ নেই। নির্বাচন পরিচালনায় যতটুকু আইনি কাঠামো রয়েছে এর মধ্যেই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব।

তিনি বলেন, আগে দুটি কমিশনের অনেক বিধি সংযোজন করা হয়েছে যা সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে বাধা। সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। আর যদি তাদের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব না হয়, তাহলে পদত্যাগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি, লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড ছিল না। তার পরেই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলা প্রকৃত সত্যকে অস্বীকার করা। অস্বীকৃতির এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সামগ্রিকভাবে নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ। ২০১৪ সালে ১৫৩ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছেন। আইনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের উল্লেখ থাকলেও সেই নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ না থাকলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। অতীতের নির্বাচন পরিচালনায় কমিশনের অনেক ভুলভ্রান্তি রয়েছে। সেই ভুল স্বীকার না করলে শোধরানোর সুযোগ থাকে না। কমিশন কেন জনগণের আস্থা হারিয়েছে তাও দেখতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেন, ইভিএম একটি বিতর্কিত বিষয়। এটা ব্যবহারের ইসিকে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে ইসির করার কিছুই নেই। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মাঠ প্রশাসনের ওপর কমিশনের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে।

মন্তব্য

Beta version