গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা ও ন্যায্যতা শুনানির মাধ্যমে নিশ্চিত হবে। ন্যায্যতা ও যৌক্তিকতা প্রমাণের দায়িত্ব গ্যাস কোম্পানির। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল এ কথা বলেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন অডিটরিয়ামে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং কর্নফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের শুনানিতে এসব কথা বলেন তিনি।
শুনানির চতুর্থ দিনে সকাল থেকে প্রস্তাবনার ওপর শুনানি করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশন (বিইআরসি)।
শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন-বিইআরসির সদস্য মকবুল ই ইলাহি চৌধুরী, মোহাম্মদ আবু ফারুক, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, মো. কামরুজ্জামান।
বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনা নিয়ে যেটা নির্ধারণ হবে তা প্রস্তাব করব। এক্ষেত্রে মূল্য কমানোর যদি কোনো বিকল্প ব্যবস্থা থাকে তাহলে তা-ও আমরা বিবেচনা করে দেখব।
আব্দুল জলিল বলেন, বিশ্ব কোভিড পরবর্তী জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কোভিড থেকে যখন মাত্র ধীরে ধীরে বের হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় তখনই ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলেছে।
তিনি বলেন, কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে গ্রাহক পর্যায়ে দাম ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর আবেদন করেছে। ফৌজদারি আইনে বলা হয়েছে, আসামিকে নির্দোষ ধরে বিচার শুরু করবে বিচারক, দোষ প্রমাণিত করার দায়িত্ব বাদীপক্ষের। এখানেও ন্যায্যতা ও যৌক্তিকতা প্রমাণের দায়িত্ব লাইসেন্সির (গ্যাস কোম্পানি)। এখানে আলোচনার ভিত্তিতে বিচার-বিশ্লেষণ শেষে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। বিইআরসি আইনি দায়িত্ব পালন করছে। যৌক্তিকতা বিচার করেই সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, কেউ যদি একাই সব কৃতিত্ব নিতে চায় তা মাতমের মতো মনে হয়। সব কৃতিত্ব যখন একটি গোষ্ঠী নিতে চায় অন্যরাও স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। এখন ঠিক তাই চলছে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন অনেক প্রভাবশালী নেতার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নজির রয়েছে। কিন্তু এখন চুনোপুঁটিদের ধরা হয়, বড়দের হাত দেওয়া হয় না।
এদিকে,জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানি গ্রাহক পর্যায়ে ১১৭ শতাংশ দাম বৃদ্ধি এবং প্রতি ঘনমিটারে বিতরণ চার্জ ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৫৫ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে।
কারিগরি মূল্যায়ন গ্রাহক পর্যায়ে ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি এবং প্রতি ঘনমিটারে বিদ্যমান বিতরণ চার্জ ২৫ পয়সা বাতিলের সুপারিশ করেছে বিইআরসি।
শুনানিতে জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির পক্ষ থেকে গ্রাহক পর্যায়ে মিটারভিত্তিক চুলার জন্য প্রতি ঘনমিটার ২৭ টাকা ৩৭ পয়সা প্রস্তাব করা হয়। যার বর্তমান মূল্য ১২ টাকা ৬০ পয়সা। এ প্রস্তাবের বিপরীতে ভোক্তা পর্যায়ে মিটারভিত্তিক চুলার জন্য প্রতি ঘনমিটার ১৮ টাকা করার সুপারিশ করেছে কারিগরি কমিটি।
অন্যদিকে, জালালাবাদের গ্রাহক পর্যায়ে মিটারবিহীন ১ চুলা এবং ২ চুলার ক্ষেত্রে আলাদা করে কোনো মূল্য প্রস্তাব করেনি। তবে মিটারবিহীন ১ চুলার জন্য ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা ও দুই চুলার জন্য ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৮০ টাকা করার সুপারিশ করেছে কারিগরি মূল্যায়ন টিম।
শুধুমাত্র ক্ষুদ্র, কুটির ও অন্যান্য ক্ষেত্রে গ্যাসের মূল্য কমেছে। যেখানে প্রতি ঘনমিটার ১৭ দশমিক ৪ পয়সা থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ৪৯ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ঘনমিটারে বিতরণ চার্জ ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১.১৫ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে। তবে বিইআরসি কারিগরি মূল্যায়ন গ্রাহক পর্যায়ে ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি এবং প্রতি ঘনমিটারে বিদ্যমান বিতরণ চার্জ ২৫ পয়সা বাতিলের সুপারিশ করেছে।
শুনানিতে কর্ণফুলী গ্যাসের পক্ষ থেকে গ্রাহক পর্যায়ে মিটারভিত্তিক চুলার জন্য প্রতি ঘনমিটার ২৭ টাকা ৩৭ পয়সা প্রস্তাব করা হয়। যার বর্তমান মূল্য ১২ টাকা ৬০ পয়সা। এ প্রস্তাবের বিপরীতে ভোক্তা পর্যায়ে মিটারভিত্তিক চুলার জন্য প্রতি ঘনমিটার ১৮ টাকা করার সুপারিশ করেছে কারিগরি কমিটি।
অন্যদিকে, মিটারবিহীন ২ চুলার জন্য ১১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে মাসিক বিল ২ হাজার ১০০ টাকা ও ১ চুলার জন্য ১১৬ শতাংশ বৃদ্ধি করে ২ হাজার টাকা প্রস্তাব করে কর্ণফুলী। এ প্রস্তাবের বিপরীতে মিটারবিহীন ১ চুলার জন্য ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা ও দুই চুলার জন্য ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৮০ টাকা সুপারিশ করেছে কারিগরি মূল্যায়ন টিম।
শুনানি পরবর্তী লিখিত মতামত দেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর প্রস্তাব ও মতামত যাচাই করে আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত রায় দেওয়ার বিধান রয়েছে।
মন্তব্য