-->
শিরোনাম
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার এক যুগ

অভিযুক্তদের বিচার শেষ হওয়াতেই সাফল্য

এম বদি-উজ-জামান
অভিযুক্তদের বিচার শেষ হওয়াতেই সাফল্য
১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতি মেলেনি আজও। (ফাইল ছবি)

৫০ বছর আগে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার এক যুগে ৪৫ মামলায় ১০৮ জনের বিচার সম্পন্ন করা গেছে। বিচারের ক্ষেত্রে মামলার পরিসংখ্যানে কম সংখ্যক হলেও এ সময়ের মধ্যে প্রধান প্রধান অভিযুক্তদের বিচার সম্পন্ন হওয়াতেই সাফল্য দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে প্রধান ছয় আসামির ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় বেজায় খুশি সংশ্লিষ্টরা।

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ ৪৫টি মামলায় ১০৮ জনের বিচার শেষ হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল থেকে এক রায়ে সাবেক সংসদ সদস্য সাতক্ষীরার জামায়াত নেতা খালেক মণ্ডলসহ দুজনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে বিচার শেষে নিজামী, মুজাহিদ, সাকা চৌধুরী, মীর কাশেম আলী, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। আর গোলাম আযম, সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীম, সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারসহ কয়েকজন আসামি কারাবন্দি অবস্থায় মারা গেছেন।

প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী ভোরের আকাশকে বলেন, ১৯৭১ সালের ঘটনা। দেশ স্বাধীনের পর ৫০ বছর চলে গেছে। অনেক দেরিতে বিচার শুরু হয়েছে। এখন আবার মাত্র একটি ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। আর করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত দুই বছর বিচার কাজ প্রায় বন্ধই ছিল। ফলে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বাড়ছে। তবে আশার কথা হলো, প্রধান প্রধান আসামি যারা, তাদের বিচার প্রায় শেষ করা গেছে।

তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক এম সানাউল হক ভোরের আকাশকে বলেন, এ পর্যন্ত যে বিচার সম্পন্ন হয়েছে তা আশানুরূপই বলা যায়। কারণ ৫০ বছর আগের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে ৪০ বছর পর। ২০১০ সালে তদন্ত শুরু হয়েছে। আমাদের কাছে যে পরিমাণ অভিযোগ জমা হয়েছে তার সব তদন্ত সম্পন্ন করতে পারিনি ঠিক, তবে এ পর্যায়ে এসে যে মানের তদন্ত হয়েছে তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অভ্যন্তরীণভাবে তদন্ত করে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা গেছে। এটাই আমাদের সন্তুষ্টির জায়গা। তিনি বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর ঠিকমতো তদন্ত ও বিচার কাজ করা যায়নি। এটা হলে বিচার হওয়া মামলার সংখ্যা বাড়ত।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। ২০১২ সালে সরকার ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে দুটি করে। কিন্তু ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে একটি ট্রাইব্যুনাল অকার্যকর হয়ে পড়ে। সেই থেকে একটি ট্রাইব্যুনালেই বিচার হচ্ছে। এ অবস্থায় গতকাল ২৪ মার্চ পর্যন্ত এই এক যুগে মাত্র ৪৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এখন এ ট্রাইব্যুনালে ৩৩টি মামলা বিচারাধীন। তবে ২০১৭ সালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১৮টি। ফলে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই।

জানা যায়, ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ১৮৯ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থার কাছে ৭৮১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৮১টি অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন করতে পেরেছে তদন্ত সংস্থা। এর মধ্যে ৭৮টি অভিযোগের সত্যতা মেলায় তা বিচারের জন্য মামলা আকারে ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। আর ছয়টি অভিযোগের সত্যতা পায়নি তদন্ত সংস্থা।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ ট্রাইব্যুনালে সর্বপ্রথম জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার শুরু হলেও প্রথম রায় হয়েছে ফরিদপুরের মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে। ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। সবমিলে এ পর্যন্ত ১১৯ জনের বিরুদ্ধে ৪৫টি মামলার বিচার শেষ হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ট্রাইব্যুনাল থেকে যে ১০৮ জনের সাজা হয়েছে তার মধ্যে ৭৪ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ২২ জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছে। বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।

মন্তব্য

Beta version