করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে, দেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের রূপকল্প বাস্তবায়নে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড আরো জোরদার করতে প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল করতে যাচ্ছে সরকার।
এজন্য মাঠ প্রশাসনসহ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এ লক্ষ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরই সারাদেশে ৩০ জন নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের উপস্থাপন ক্ষমতা, বাচনভঙ্গি, আইসিটি জ্ঞান, কর্মসম্পাদনে দক্ষতা, মাঠ পর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতাসহ বিভিন্ন বিষয় যাচাইয়ের কাজও চলছে। এছাড়া প্রশাসনের সচিব পদে নতুন মুখ দেখা যাবে একই সময়ের মধ্যে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, করোনা পরবর্তী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জোরদার করা এবং উন্নত দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মাঠ প্রশাসনসহ প্রশাসনের সর্বস্তরে মেধাবী, সৎ, দক্ষ সঠিক ও সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম এমন কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও প্রশাসনের সর্বস্তরে দক্ষ, মেধাবী ও সৎ কর্মকর্তাদের নিয়োগের ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ ছাড়া সচিব পদ ছাড়াও অতিরিক্ত সচিব এবং যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা পদে বড় আকারের রদবদল আনা হবে। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এবং কর্পোরেশনের প্রশাসনিক শীর্ষ পর্যায়েও রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন জেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদেও বড় আকারের রদবদল করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার পদেও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র মতে, ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ অথবা আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বা সমর্থক ছিলেন এমন কর্মকর্তাদের ডিসিসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় আনা হতে পারে।
পাশাপাশি পারিবারিকভাবে কর্মকর্তাদের কারও পিতা-মা, ভাইবোন এবং ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনরা কেউ আওয়ামী বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা এ বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, প্রশাসনিক রদবদলের ক্ষেত্রে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বিষয়টিও সরকারের চিন্তা-ভাবনার মধ্যে রয়েছে। আর এজন্য এক্ষেত্রে সরকারের ‘আস্থাভাজন’দের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হতে পারে।
এ ছাড়া প্রশাসনিক রদবদলের ক্ষেত্রে মাঠ প্রশাসনে ইতোপূর্বে যেসব কর্মকর্তা ‘সাহসিকতা’র সঙ্গে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তাদেরও প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে।
প্রশাসনিক রদবদল প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী ‘ভোরের আকাশ’কে জানান, করোনা পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তরান্বিত করা এবং প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড আরো জোরদার করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
সরকারের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে এবং দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী করার প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রূপকল্প বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধপরিকর। এজন্য চলমান রুটিন পরিবর্তন ও রদবদলের পাশাপাশি প্রয়োজনে প্রশাসনে বড় ধরনের রদবল ও পরিবর্তন আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তা নিয়োগ ও বদলির বিষয়টি দেখার জন্য সরকারের সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যোগ্যতা, মেধা ও সততাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনে রদবদল ও পরিবর্তন আনার জন্য ইতোমধ্যে উপসচিব পর্র্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে জেলা প্রশাসক পদের জন্য দক্ষ, যোগ্য, সৎ এবং অধিকতর মেধাবীদের যাচাই-বাছাই এর কাজ চলছে।
বিভিন্ন ধাপে এ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিসি হিসেবে নিয়োগের জন্য কয়েক ধাপে মৌখিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর কর্মকর্তাদের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।
মাঠ পর্যায়সহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে আগামী ঈদের পর বড় ধরনের রদবদল আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য