-->
শিরোনাম

বেড়েছে প্রেমে বাল্যবিবাহ

ইফ্ফাত শরীফ
বেড়েছে প্রেমে বাল্যবিবাহ
প্রতীকী ছবি

অল্প বয়সেই প্রেমে জড়িয়ে যাচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা। প্রেমে জড়িয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ের ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে। মূলত এ কারণেই দেশে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বাড়ছে। জাতীয় মহিলা সংস্থা বলছে, করোনা মহামারিতে অবাধ ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কম বয়সি ছেলেমেয়েদের প্রেমের সম্পর্ক বেড়েছে। তবে পারিবারিকভাবে বাল্যবিবাহের প্রবণতা কমেছে এমন তথ্য দিয়েছে সংস্থাটি।

জাতীয় মহিলা সংস্থার একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক নানা বাস্তবতার কারণে অল্প বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে দ্রুত সম্পর্ক হচ্ছে। একপর্যায়ে তারা পালিয়ে বিয়ে করছে। কাজীদের কাছে কাগজপত্র যাচাইয়ের যথেষ্ট ব্যবস্থা না থাকায় পাত্র-পাত্রীর বয়স যাচাই না করে বিয়ে বেশি। আবার অনেক বিয়ে ঘরোয়া পরিবেশের হচ্ছে। আদালতেও অপাপ্তবয়স্কদের বিয়ের ঘটনাও একেবারেই কম। বিজয়নগর কাজী অফিসের কাজী মো. তাজুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, অল্প বয়সি ছেলেমেয়েরা বয়স গোপন করে আমাদের এখানে বিয়ে করতে আসে। সেক্ষেত্রে আমরা যদি বুঝতে পারি সে তথ্য গোপন করছে, তখন বিয়ে পড়াই না। আর অনেক সময় এসব আমরা ধরতে পারি না। কারণ বয়স যাচাই করার মতো আমাদের সেরকম সক্ষমতা নেই। সেক্ষেত্রে কেউ যদি তথ্য গোপন করে আমাদের কিছু করার থাকে না।

যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা মুন্না (ছদ্ম নাম) ও হাসি (ছদ্ম নাম) গত বছর জুনের দিকে তাদের বিবাহ হয়। তবে দুজনই অপ্রাপ্তবয়স্ক। কনের বয়স ১৬ বছর। বরের বয়স ১৭। প্রেমের কারণেই বাসা থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছেন তারা। অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়ে কীভাবে বিয়ে করলেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে মুন্না ভোরের আকাশকে জানান, কম্পিউটার দোকান থেকে বয়স বাড়িয়ে বর এবং কনে দুজনেরই জন্মসনদ এবং এসএসসির রেজিস্ট্রেশনের ভুয়া সনদ বানিয়ে তারা এলাকার কাজীর মাধ্যমে বিয়ে করেন। এভাবে বিয়ে করারা ফলে তাকে পরিবার থেকে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। যার ফলে এত অল্প বয়সে সংসার চালাতে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এসব বিয়ে আইনি দৃষ্টিতে যেমন অবৈধ। তেমনি অল্প বয়সের বিয়েতে নানা সমস্যা হয়ে থাকে। বিশেষ করে মেয়েদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরি হয়। আর সংসার চালাতে গিয়ে ছেলেদের নানারকম অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে হয়। এদিকে জাতীয় মহিলা সংস্থা এসব বাল্যবিবাহ থেকে মানুষকে সচেতন করতে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নারীদের ডিজিটাল প্রযুক্তিতে স্বনির্ভর করতে তথ্য আপা নামের প্রকল্প চালু করা হয়েছে। সরকারের বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) আওতায় বাল্যবিবাহ রোধে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচির পদক্ষেপ নিয়েছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এর অধিনে জাতীয় মহিলা সংস্থার প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে বাল্যবিবাহ থেকে নারীদের রক্ষা করার মাধ্যমে তাদের শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া। শিক্ষার মাধ্যমে যাতে করে তারা পরবর্তীতে উন্নতর কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সুযোগ পায় এটাই মূলত তথ্য আপা প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।

প্রকল্পের উপপরিচালক (ট্রেনিং ও মনিটরিং) কর্মকর্তা উপসচিব মো লোকমান হোসেন বলেন, শিক্ষা ছাড়া নারীদের স্বাবলম্বীতা অর্জন করা আসলে অনেক কঠিন। তাই শিক্ষাসহ অন্যসব কার্যক্রম কে এগিয়ে নিতে বাল্যবিবাহ রোধ করা জরুরি। আর এসব কিছুই আমরা ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের মাধ্যমে করে থাকি। ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের নারীদের ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এবং তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন করা মূল লক্ষ্য। এ প্রকল্পের সঙ্গে বাল্যবিবাহের বিষয়টি জরিত রয়েছে। আমরা মূলত বাল্যবিবাহের বিষয়ে অভিবাবক এবং সেসব নারী অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের সচেতন করা হচ্ছে। আমাদের এ প্রকল্পের একটি সেবা প্রদান পদ্ধতি হচ্ছে উঠান বৈঠক। এটি আসলে মূলত সচেতনতামূলক কার্যক্রম। এ উঠান বৈঠকে আমরা মূলত অভিভাবকদের বাল্যবিবাহের কুফলের বিষয়ে সচেতন করে থাকিÑ যাতে করে তারা তাদের সন্তানদের বাল্যবিবাহ থেকে দূরে রাখেন।

শিক্ষার্থী বা অল্প বয়সিদের কীভাবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে সচেতন করা হয়- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, এ উঠান বৈঠকে আমরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উঠান বৈঠকে সম্পৃক্ত করছি। সেখানেও তাদের এ বিষয়ে সচেতন করছি। এসব উঠান বৈঠকে উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তাও অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গ্রামের পরিবারগুলোকে বাল্যবিবাহের সম্পর্কে নিরুৎসাহিত করে থাকেন। সারা দেশে ৪৯০টি উপজেলায় প্রতি মাসে চারটি করে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া প্রতিটি উঠান বৈঠকে বাল্যবিবাহের পাশাপাশি নারীদের প্রতি নির্যাতন এবং সহিংসতার বেপারে সচেতন করা হচ্ছে।

মন্তব্য

Beta version