-->

বছরে ৩৫ হাজার শিশুর জন্ম হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
বছরে ৩৫ হাজার শিশুর জন্ম হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার থেকে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকের সংখ্যা প্রতি বছর ৩৫ হাজার করে বাড়ছে। অর্থাৎ প্রতি বছর ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করছে।

রোববার (১০ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে রোহিঙ্গা নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির চতুর্থ বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।

সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেনসহ কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় জন্মহার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই জায়গায় আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগকে বলব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে বলব-তারা যাতে সবাইকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে। সেজন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখানে যেসব রোহিঙ্গা এসেছে, প্রতি বছর তাদের সংখ্যা ৩৫ হাজার করে বেড়ে যাচ্ছে, অর্থাৎ ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে। পাঁচ বছর হয়েছে, এতে দেড় লাখ কিন্তু অটোমেটিক বেড়ে গেছে। সেখানেও আমাদের একটি আশঙ্কার জায়গা। সেটা যাতে আমরা ট্যাকেল দিতে পারি, সেজন্য এসব ব্যবস্থার কথা আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও অভিযানে অংশ নেবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে না পারে সেজন্য ইউএনএইচসিআরের (জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার) ডাটাবেইজ ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ক্যাম্পের ভেতরে পুলিশ, এপিবিএন, র‌্যাব ও আনসার যৌথভাবে সার্বক্ষণিক যে টহল দিচ্ছে, সেটা আরো জোরদার করা হবে। আর ক্যাম্পের বাইরে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাবের টহল চলবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে। যদি কোনো অভিযান প্রয়োজন হয় সেনাবাহিনীও তাতে অংশ নেবে।

তিনি বলেন, উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হচ্ছে এবং তা চলমান থাকবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে কাটাতারের বেষ্টনী তৈরি করার জন্য আমরা সেনাবাহিনীকে কাজ দিয়েছিলাম, প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এখানে তৈরি হয়েছে, এখানে রাস্তা তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। সেখানে টাওয়ারগুলোতে এপিবিএন থাকবে আর রাস্তায় টহল দেবে, কোনো রোহিঙ্গা যাতে ক্যাম্পের বাইরে প্রয়োজন ও অনুমতি ছাড়া যেতে না পারে। এটা আমরা জোরদার করছি।

মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখছি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বয়সভিত্তিক রেশন না দিয়ে ব্যক্তি হিসেবে দেওয়া হয়। এক দিনের শিশুকে যে রেশন দেওয়া হয়, একজন প্রাপ্ত বয়স্ককেও সেই রেশন দেওয়া হচ্ছে। আমরা বলেছি, এটা বয়সভিত্তিক যেন দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং আশপাশে যাতে মাদক ব্যবসা করতে না পারে এ জন্য আমরা জোরদার ব্যবস্থা করছি। নাফ নদীতে মাদক চোরাচালান বন্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এ বিষয়ে কঠোর হতে যাচ্ছি। কোনোক্রমেই আমাদের সীমানা পেরিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে যাতে মাদক ব্যবসা না করতে পারে, সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমাদের অনুমান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক স্টোর করা আছে। এর মধ্যে আমরা কিছু ধরেও ফেলেছি। এর সঙ্গে যারা জড়িত তারা ধরা পড়বে।

রোহিঙ্গারা আসার পর হাতের ছাপ নেওয়া হয়েছে, তারপরও তারা কীভাবে পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছে-এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যাদের চোখের ছাপ ও আঙুলের ছাপ আমরা নিয়েছি তারা কোনোক্রমেই পাসপোর্ট পাচ্ছে না। আগেও কিছু রোহিঙ্গা এখানে অবস্থান করত। কিছু পালিয়েও এসেছে। ইউএনএইচএসসিআরের কাছে ডাটা আছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আমরা এটা বন্ধ করব।

মন্তব্য

Beta version