-->
আকস্মিক বন্যার সতর্কতা

বিপৎসীমার ওপরে ৪ নদীর পানি

হাওরের ফসল দ্রুত ঘরে তোলার পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিপৎসীমার ওপরে ৪ নদীর পানি
ফসলডুবির আশঙ্কায় এলাকায় মাইকিং, দ্রুত ধান কাটছে কিশোরগঞ্জের কৃষকরা। ছবি- এসকে রাসেল

দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সংস্থাটি জানিয়েছে, উজানে এবং দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়ছে।

আগামী ৭২ ঘণ্টায় পানি বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়ে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বিশেষ সতর্ককতা জারির পর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে হাওর অঞ্চলে ঝুঁকিপুর্ণ এলাকা থেকে কাঁচা ধান দ্রুত কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড আরো জানিয়েছে, দেশের আবহাওয়া অফিস এবং ভারতের আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের মেঘালয়, আসাম ও অরুনাচল প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।

এই বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেট সুনামগঞ্জ জেলার প্রধান নদীগুলোর পানি সমতলে দ্রুত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে সুরমা নদী সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার কিছু পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে।

এছাড়া ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদীগুলোর পানি দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। এই তিন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

দেশে ঋতু বৈচিত্রের ধরন অনুযায়ী মূলত বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পানি নদী তীর উপচে বন্যা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যখন নদী, খাল, বিল, হাওর ও নিচু এলাকা ছাড়িয়ে সমস্ত জনপদ পানিতে ভেসে যায় এবং ফসল, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, সহায়-সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করে, তখন তাকে বন্যা বলা হয়।

দেশে বন্যার সঙ্গে ফসলের সাংঘর্ষিক সম্পর্ক বহু পুরোনো। মৌসুমী বন্যা মূলত ঋতুগত। নদ-নদীর পানি ধীরে ধীরে ওঠানামা করে এবং বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়ে তাকে এসময়ে।

আকস্মিক পাহাড়ি ঢল অথবা স্বল্প সময়ে সংঘটিত প্রবল বৃষ্টিপাত থেকে কিংবা প্রাকৃতিক অথবা মানবসৃষ্ট বাঁধ ভেঙে সংঘটিত হয়। এবার মৌসুমে আগেই উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।

প্রথম দফায় নেমে আসা পানির কারণে হাওরের অনেক ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এর রেশ কাটতে না কাটতে আরো একদফা আকস্মিক বন্যার সতর্কতা জারি করলো পানি উন্নয়ন রোর্ড।

প্রতিষ্ঠানটির বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ইতোমধ্যে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে উত্তর পূর্বাঞ্চলের চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর মধ্যে সুরমা নদী কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ ও ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও সারিগোয়াইন নদীর পানি সারিঘাট ও গোয়াইনঘাট এলাকায় বিপৎসীমার ৮০ ও ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আগামী চারদিন এসব নদীর পানি আরো দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। তিনি জানান সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদীর পানি সমতলে বাড়ছে। এছাড়া উজানে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এসব পানি নেমে এলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে ভারি বৃষ্টিপাতে উত্তর পূর্বাঞ্চলের জেলার নদ-নদীর পানি কিছু স্থানে দ্রুত বাড়তে পারে। এতে সুরমা নদী সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় এবং ধনু বাউলাই নদী নেত্রকোনা জেলায় কিছু পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বন্যার ঝুঁকির মধ্যে থাকা বোরো ধান ৮০ শতাংশ পাকলে দ্রুত সংগ্রহের পরামর্শ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মো. শাহ কামাল।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দিনাজপুর, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর অঞ্চলসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, চলমান এ তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। রোববার থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা রয়েছে।

ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে গেছে। এদিকে, দেশে চলছে রমজান মাস। ফলে অন্য অঞ্চলগুলোতে শ্রমজীবী মানুসের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। 

মন্তব্য

Beta version