আসন্ন ঈদ উপলক্ষে বিশেষ লঞ্চসহ প্রায় দুই শতাধিক লঞ্চ নিয়ে ঈদ সেবায় প্রস্তুত সদরঘাট টার্মিনাল। লঞ্চের কেবিন বা আসনের টিকিটের জন্য আগামী ২০ রমজান থেকে উন্মুক্ত করা হবে কাউন্টার। শেষ মুহূর্তের বাড়তি ভোগান্তি এড়াতে অতিরিক্ত লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে সদরঘাটে।
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছাড়বে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলমুখী যাত্রী কমপক্ষে ৪০ লাখ। যারা নিয়মিত নৌপথে যাতায়াত করে থাকেন।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ আরামে যাত্রার জন্য লঞ্চযোগে রাজধানী ত্যাগ করে। বাস, ট্রেনের মতোই নদীপথের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বরাবরের মতো এবারো বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
রোটেশন পদ্ধতিতে ঢাকার সদরঘাট থেকে উপকূল বেষ্টিত বরিশাল বিভাগের ৭ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন প্রায় শতাধিক লঞ্চ ছেড়ে যায়। কিন্তু ঈদের সময় এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় কয়েক গুণ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী ২২ এপ্রিল থেকে অতিরিক্ত লঞ্চ ঘাটে নামানো হবে যা বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে সদরঘাট ছেড়ে যাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত যাত্রীদের কোনো ভিড় নেই। যাত্রী ছাউনিগুলো মেরামত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের মতো এ বছরও আমরা বাড়তি যাত্রী বহনের জন্য চক্রাকার পদ্ধতিতে লঞ্চ চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে। তবে বাড়তি লঞ্চ নামানোর ব্যাপারে আমরা চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি এখনো। কেননা করোনাকালীন মানুষ যে পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তাই বেশি পরিমাণ মানুষ ঈদে বাড়িতে না যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তারপরও লঞ্চ আমাদের প্রস্তুত করা আছে, মানুষের চাপ অনুযায়ী লঞ্চ নামানো যাবে। ২০ রমজানের পর অগ্রিম টিকিট পাওয়া যাবে। যাতায়াতের সময় প্রতিটি যাত্রীর সঙ্গে ভোটার আইডি কার্ড রাখার ব্যাপারে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি আর এটা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে তখনই যদি বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে যাত্রীদের প্রবেশের সময় চেক করার বিষয় নিশ্চিত করা হয়।
বিআইডব্লিউটিএর ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা) শেখ মোহাম্মদ সেলিম রেজা বলেন, মতিঝিল বিআইডব্লিউটিএ ভবনে ঈদযাত্রা নিয়ে মিটিং হয়েছে। এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে অন্যান্য বছর থেকে এ বছর বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লঞ্চে চলাচলের ক্ষেত্রে যাত্রীদের এনআইডি (ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড) বা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ এনআইডি সংরক্ষণ করবে। রাতের বেলায় স্পিডবোট এবং বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ থাকবে।
সম্প্রতি নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌপথে স্টিমার, লঞ্চসহ জলযান সুষ্ঠুভাবে চলাচল ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে যথাযথ কর্মপন্থা গ্রহণের লক্ষ্যে ঈদ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক এসব সিদ্ধান্ত হয়।
নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নিরাপদ ঈদযাত্রা ও যাত্রী সেবা শতভাগ নিশ্চিত করতে চায় নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে এখন থেকে লঞ্চের টিকিট কাটার সময় ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্মনিন্ধন প্রদর্শন করতে হবে। ভবিষ্যতেও এ নিয়ম কার্যকর থাকবে বলে উল্লেখ করেন নৌ প্রতিমন্ত্রী।
যাত্রীসেবার প্রসঙ্গে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঈদের আগে পাঁচ দিন এবং ঈদের পরের পাঁচ দিন দিনের বেলাও সব বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ থাকবে। ঈদের আগে তিন দিন ও ঈদের পরে তিন দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় ও দ্রুত পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ব্যতীত সাধারণ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ফেরিতে পারাপার বন্ধ থাকবে। স্পিডবোট চলবে না। ঢাকা নদীবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এলাকায় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট থাকবে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো যাত্রীদের মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কম ভাড়ার পেছনে যাতে যাত্রীরা না ছোটেন ও লঞ্চ মালিকরা যেন কম ভাড়ায় অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ না করেনÑ সেজন্য নির্ধারিত ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবহণ পারাপারের জন্য ৫১টি ফেরি প্রস্তুত রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ফেরিগুলোবন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কোনোক্রমেই লঞ্চের যাত্রী ও মালামাল ওভারলোড করা যাবে না। লঞ্চের অনুমোদিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা যাবে না। অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রী সাধারণের সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্নে যাতায়াতের লক্ষ্যে ঢাকা ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকায় গার্মেন্টস ও নিটওয়ার সেক্টরে নিয়োজিত কর্মীদের এলাকা-ভিত্তিক বা পর্যায়ক্রমে ছুটি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
নৌপথে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণ যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে ও সেবাসংক্রান্ত বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর হটলাইন নম্বর : ১৬১১৩-তে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়।
মন্তব্য