-->
শিরোনাম

কমলাপুর স্টেশনে উপচেপড়া ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক
কমলাপুর স্টেশনে উপচেপড়া ভিড়
কমলাপুর স্টেশনে টিকিট প্রত্যাশিদের উপচেপড়া ভিড়

ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে আজ শনিবার থেকে। তবে ঈদ সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতোই।

আনুষ্ঠানিক টিকিট বিক্রি শুরুর আগের দিনই কাউন্টারের সামনে টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড়ে যেন তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে সারি এঁকে-বেঁকে চলে গেছে স্টেশনের বাইরে পর্যন্ত।স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, ছুটির দিনে ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিটের জন্য বাড়তি চাপ থাকাটা স্বাভাবিক।

এ বছর ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম দিনে দেওয়া হবে ২৭ এপ্রিলের টিকিট। এবারে অনলাইনে টিকিট ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে এসেছে নতুন প্রতিষ্ঠান সহজ। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটির সেবা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অনলাইনে টিকিট কাটতে না পেরে যাত্রীরা কাউন্টারে ভিড় করছেন।

ঈদে অগ্রিম টিকিট বিক্রির শুরু থেকে যদি এ সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে টিকিট প্রত্যাশীদের দুর্ভোগের অন্ত থাকবে না। তবে শুক্রবার যাত্রীরা অনলাইনে টিকিট কাটতে গিয়ে নানা ভোগান্তির কথা জানান। তারা বলেন, একদিকে অনলাইনে গতি খুবই দুর্বল।

অন্যদিকে বিভিন্ন গন্তব্যের স্টেশন সিলেক্ট করা যায় না। কারো কারো অভিযোগ অনলাইনে প্রবেশ করতে না পারার। অনেকেই জানান, যারা প্রবেশ করেছেন, তারা টিকিট সিলেক্টে করার পর টাকা পরিশোধে সব ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারছেন না।

সার্ভারে তা যুক্ত করা হয়নি। সহজ আর ব্রাক ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট ছাড়া কেউ টিকিটের টাকা পরিশোধ করতে না পারার কথা জানান। তাই যাত্রীরা সহজ ছাড়াও বিকাশসহ অন্যান্য অ্যাপ ও সব ব্যাংক থেকে টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা রাখার দাবি জানান।

গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, কমলাপুর রেলস্টেশনের কাউন্টার থেকে বিক্রি ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ট্রেনের টিকিট বিক্রি হতে দেখা গেছে। এজন্য ভিড় ছিল সকাল থেকে, যা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড আকার ধারণ করে। রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ‘২ মে’ ধরে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে।

২৭ এপ্রিলের টিকিট দেওয়া হবে ২৩ এপ্রিল। এভাবে ২৮ এপ্রিলের টিকিট ২৪ এপ্রিল, ২৯ এপ্রিলের টিকিট ২৫ এপ্রিল, ৩০ এপ্রিলের টিকিট ২৬ এপ্রিল এবং ১ মে’র টিকিট ২৭ এপ্রিল বিক্রি করা হবে। গত দুই বছর করোনার কারণে ঈদুল ফিতরের সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।

এবার ঈদযাত্রা ফিরছে ট্রেনে। তবে এবার আগের মতো ১০ দিন আগে নয়, স্বাভাবিক সময়ের মতোই পাঁচ দিন আগে আগাম টিকিট বিক্রি হবে। ঈদযাত্রার বিক্রিত টিকিট ফিরত নেবে না রেল।নিয়মিত ১০২টি আন্তঃনগর ট্রেনের সঙ্গে স্পেশাল ছয় জোড়া ট্রেন চলবে।

ঈদের আগে ঢাকা-কলকতা রুটের মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু না হলে, তার ইঞ্জিন বগি দিয়ে ‘খুলনা স্পেশাল’ নামে ঢাকা-খুলনা রুটে একটি বাড়তি ট্রেন চালানো হবে। ঈদের দিন শোলাকিয়া স্পেশাল নামে এক জোড়া ট্রেন চলবে।

ঈদের সময় যাত্রী পরিবহণ সক্ষমতা বাড়াতে ৯৩টি অতিরিক্ত বগি যুক্ত হবে রেলের বহরে। সকাল ৮টা থেকে কাউন্টারে টিকিট বিক্রি হবে। অনলাইনে টিকিট দেওয়া হবে ভোর ৬টা থেকে। কমলাপুর স্টেশনে ২৩টি কাউন্টারে টিকিট বিক্রি হবে।

একটি কাউন্টার থাকবে নারীদের জন্য সংরক্ষিত। ২৫ এপ্রিল থেকে সব ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটি বন্ধ থাকবে। ঈদযাত্রায় টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে স্টেশনে টহল ও নজরদাবি থাকবে।কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘আমরা অগ্রিম টিকিট বিক্রির সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছি।

তবে কাউন্টারগুলোয় টিকিট প্রত্যাশীর সংখ্যা খুবই বেশি। বেশিরভাগ লোকই ঈদের ভোগান্তি এড়াতে ট্রেনে অগ্রিম টিকিট নিতে এসে ভিড় করছেন। আশা করছি সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশে ও সুশৃঙ্খলভাবে টিকিট বিক্রি শুরু করতে পারব। অনলাইনের পাশাপাশি কাউন্টারে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হবে।’

উল্লেখ্য, অনলাইনে ই-টিকিটিংয়ের মাধ্যমে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি সকাল ৮টায় শুরু হবে। এছাড়া কাউন্টারে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলবে। প্রতিটি টিকিট বিক্রয় কেন্দ্রে একটি করে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কাউন্টার থাকবে।

একজন যাত্রী একসঙ্গে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কিনতে পারবেন। বিক্রি করা ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট ফেরত নেওয়া হবে না। স্পেশাল ট্রেনের কোনো টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাবে না। শুধু স্টেশন কাউন্টারে বিক্রি করা হবে।এজন্য ২৫ এপ্রিল থেকে সব ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটি বন্ধ থাকবে।

তবে ঈদে কতগুলো নতুন বগি যোগ হবে, কত বেশি যাত্রী পরিবহণ করতে পারবে, বিশেষ কোনো ট্রেন চালু হবে কিনা, এসব বিষয়ে আরো কাজ চলছে। এ সময়ে অনলাইনে ভোর ৬টা থেকে ও কাউন্টারে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টিকিট ক্রয় করা যাবে।

এছাড়া ঈদের পর ফিরতি যাত্রা শুরু হবে ৫ মে। সেই টিকিট বিক্রি হবে ১ মে। তবে চাঁদ দেখাসাপেক্ষে ২ মে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হবে ধরে নিয়ে টিকিট বিক্রির এ সময়সূচি নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে। রোজা ৩০টি হলে অর্থাৎ ৩ মে ঈদ হলে ২৮ এপ্রিল বিক্রি করা হবে ২ মে’র ট্রেনের টিকিট। ২ মে বিক্রি হবে ৬ মের টিকিট। ৩ মে বিক্রি হবে ৭ মের টিকিট। ৪ মে বিক্রি হবে ৮ মে’র টিকিট।

৫ স্টেশনে ঈদযাত্রার ট্রেনের টিকিট শনিবার থেকে :যে ৫ কেন্দ্রে ট্রেনের টিকিট হবে। দেশের পশ্চিমাঞ্চল ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের টিকিট যারা নিতে চান, তাদের যেতে হবে কমলাপুর রেলস্টেশনে। ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে গেলে পাওয়া যাবে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট।

ময়মনসিংহ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট যারা নিতে চান তাদের যেতে হবে তেজগাঁও স্টেশন। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে মিলবে মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট। সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায়।

এ পাঁচটি স্টেশনে টিকিট বিক্রি শুরু সকাল ৮টা থেকে, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তবে অগ্রিম টিকিট একবার কেনার পর আর ফেরত দেয়া যাবে না। রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঈদে রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে।

স্পেশাল ট্রেনের কোনো টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাবে না। সেগুলো শুধু স্টেশন কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হবে। ২৭ এপ্রিলের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে ২৩ এপ্রিল। ২৮ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ২৪ এপ্রিল। ২৯ এপ্রিলের টিকিট কেনা যাবে ২৫ এপ্রিল। ৩০ এপ্রিলের টিকিটের জন্য যেতে হবে ২৬ এপ্রিল। আর ১ মে যারা ভ্রমণ করতে চান তাদের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে ২৭ এপ্রিল।

 

মন্তব্য

Beta version