-->
শিরোনাম

প্রশাসনিক সংস্কার ও দারিদ্র্য দূর করতে উদ্যোগ

রেজাউর রহিম
প্রশাসনিক সংস্কার ও দারিদ্র্য দূর করতে উদ্যোগ

স্বাধীনতার সুফল দেশের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে পৌঁছাতে এবং উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ বিনির্মাণে বিদ্যমান দারিদ্র্য ও আর্থসামাজিক বৈষম্য দূর করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সংস্কারের পাশাপাশি বিদ্যমান আর্থিক ব্যবস্থাপনার পরিবর্তনের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।

আগামী দেড় দশকের মধ্যে দেশ থেকে দারিদ্র্য সম্পূর্ণরূপে দূর করতে প্রশাসনিক কার্যক্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ধনীদের করের পরিমাণ ও আওতা বৃদ্ধি এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণরূপে করের আওতামুক্ত রাখার লক্ষ্য হাতে নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া চলমান মেগা প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্নের ওপর বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের তালিকায় উন্নীত করতে দেশের মানুষের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়ন, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারে এবং দেশে বিদ্যমান আর্থসামাজিক বৈষম্য নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে।

বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরে উন্নত প্রশাসনিক ব্যবস্থাও জরুরি বলে মনে করে সরকার। এ জন্য প্রশাসনিক সংস্কার ও গণমুখী প্রশাসন গড়ে তোলারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রশাসনকে জনগণের দোরগোড়ায় নিতে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ওপরও বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। উন্নত দেশে রূপান্তরে ঔপনিবেশিক ধারার প্রশাসনিক ব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণরূপে বেরিয়ে যুগোপযোগী ও গণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা জরুরি বলেও সরকারের নীতিনির্ধারক মহল মনে করছেন।

এ জন্য প্রশাসনিক সংস্কার ও বিকেন্দ্রীকরণে শিগগির উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবকে এ কমিটির প্রধান করা হতে পারে বলে জানা গেছে।মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী ‘ভোরের আকাশ’কে জানান, করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে সফল।

তিনি বলেন, বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকতে এবং উন্নত দেশ গড়ার রূপকল্প বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। এ জন্য প্রশাসনিক সংস্কার ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণে সরকারের উদ্যোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, সমৃদ্ধ দেশ বিনির্মাণে আর্থিক ব্যবস্থাপনাতেও প্রয়োজনে পরিবর্তন করা হতে পারে। এ ছাড়া উন্নত দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি শতভাগ বাস্তবায়নেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে মাঠপর্যায় বিশেষ করে জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রয়োজনীয় রদবদল করা হবে।

যুগোপযোগী ও দক্ষ প্রশাসন ছাড়া উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন নীতিনির্ধারকরা। এ জন্য শিগগির প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সংস্কারের কাজ হাতে নেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতি অনেকটা কমে আসায় রপ্তানি ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি অনেকাংশে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং অধিকাংশ খাতে উৎপাদন স্বাভাবিক হতে থাকায় এ কাজ অনেকটা সহজ হবে বলেও মনে করছেন নীতিনির্র্ধারকরা।

আর করোনা পরিস্থিতিতেও তুলনামূলকভাবে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে উন্নয়ন কার্যক্রম আরো জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ি প্রকল্পসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প দ্রুত সম্পন্নের ওপরও বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, সাম্প্রতিককালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের একশ্রেণির আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী ‘সিন্ডিকেট’ করে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে বাড়তি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।

সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। অসাধু চক্রের অপচেষ্টা নস্যাৎ করতেও সরকার সজাগ রয়েছে বলে জানা গেছে।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে করমুক্ত রেখে রাজম্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। দেশের বিত্তশালীদের আরো বেশি করের আওতায় কিভাবে আনা যায়- সে ব্যাপারে কাজ করা হচ্ছে।

উন্নত বাংলাদেশ গড়তে এবং উন্নয়নের সুফল মানুষের কাছে পৌঁছাতে বৈষম্য দূর করার জন্য বিদ্যমান প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যবস্থার সংস্কার ও পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে সরকার। জানা গেছে, বিদ্যমান কর-ব্যবস্থায় ধনী-দরিদ্র্য উভয় শ্রেণির মানুষকে সমপরিমাণ কর দিতে হয়।

এ জন্য বিদ্যমান কর কাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং দেশের বিত্তশালী শ্রেণির মানুষকে আরো বেশি করের আওতায় আনা সম্ভব হলে দেশে আর্থসামাজিক বৈষম্য অনেকাংশে দূর করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ছাড়া আর্থিক খাত ও ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনাার ক্ষেত্রেও কিছু সংস্কার আনার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। বিশেষ করে বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধে আরো কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারেও কাজ করছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। বিশ্লেষকদের মতে, আমদানি পর্যায়ের পণ্য ও কাঁচামাল বন্দরে খালাসের সময় আরোপিত শুল্ক আমদানিকারকরা পরিশোধ করলেও সংশ্লিষ্ট পণ্যের মূল্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে পরে তা পুষিয়ে নিচ্ছে।

একইভাবে উৎপাদন, বাজারজাত ও বিক্রয় পর্যায়ে ধার্যকৃত ভ্যাট উৎপাদক বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তার দায়ভার এসে পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। ফলে বিভিন্ন পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ধনীদের সমান করই দিতে হচ্ছে।

বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে এ অবস্থার আবসান হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, দ্রব্য কর, বিক্রয় কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক), আমদানি শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক নামে আমদানি, উৎপাদন ও বাজারজাত, ভোগ ও ব্যবহার পর্যায়ে পরোক্ষ করারোপের মাধ্যমে ধনীদের কাছ থেকে কর আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।

এ ব্যাপারে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ খলীকুজ্জমান আহমদ ‘ভোরের আকাশ’কে বলেন, স্বাধীনতার সুফল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে এবং উন্নত দেশ বিনির্মাণে প্রশাসনিক সংস্কার ও আর্থিক ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন।

বিদ্যমান আর্থসামাজিক বৈষম্য দূর করতে সরকারের নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

উন্নয়নের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছাতে এবং বৈষম্য দূর করতে প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি আর্থিক ব্যবস্থাপনাও সংস্কার আনতে হবে।

বৈষম্য সমাজ ও রাষ্ট্রের সংহতির জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ বিনির্মাণে দারিদ্র্য দূরীকরণের ওপর বাড়তি জোর দিতে হবে এবং দুর্নীত-অনিয়ম বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিদ্যমান সব ধরনের বৈষম্য দূর করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ জন্য সরকারকে জোরালো ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

মন্তব্য

Beta version